দাঁতে পোকা রোধে চিকিৎসকের পরামর্শ
অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৫:৩৩ এএম
ছবি সংগৃহীত
বেশিরভাগ মানুষের দাঁতের প্রধান সমস্যা ডেন্টাল ক্যারিজ। পল্লী এলাকা ও মফস্বলের মানুষের কাছে যা দাঁতের পোকা নামে পরিচিত। আসলে পোকা বলে কিছুই নেই। ডেন্টাল ক্যারিজ হলো দাঁতের এক ধরনের ক্ষয়।
দাঁতের পোকা
দাঁতে দৃশ্যমান কোনো পোকা থাকে না। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয় রোগের জন্য দায়ী।
সাধারণত যে কোনো ধরনের মিষ্টি খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, চকলেট, চুইংগাম, ক্যান্ডি ইত্যাদি খাওয়ার পর মুখে এক ধরনের অ্যাসিড তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে দাঁতের ওপরের শক্ত আবরণ ‘অ্যানামেল’ ক্ষয় করে থাকে।
যারা এসব খাবার বেশি খায়, তাদের ক্ষেত্রে অ্যানামেল ক্ষয় হয়ে দাঁতে ছিদ্র বা গর্ত তৈরি হয়। দাঁতের মধ্যে গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তাতে ময়লা ও খাদ্য কণা জমে, ফলে সংক্রমণ হয়।
শিশুদের এ গর্ত বা ক্যাভিটি হলে তারা ব্যথায় কষ্ট পায় ও কিছু খেতে গেলেই দাঁত শিরশির করে ওঠে। ডেন্টাল ক্যারিজ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই ছোট কালো গর্তের মতো দেখায়। এ অবস্থায় কোনো ব্যথা বা অসুবিধা না থাকায় রোগীরা, বিশেষ করে শিশুরা বুঝে উঠতে পারে না যে গর্ত তৈরি হচ্ছে। জটিলতা হওয়ার পরই কেবল ধরা পড়ে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
দাঁতে গর্ত দেখা দেয়া মাত্র দেরি না করে শূন্য জায়গাটা ভর্তি বা ফিলিং করে নেয়া উচিত। ডেন্টাল ক্যারিজ যদি ধীরে ধীরে ডেন্টিন থেকে আরও গভীরে অর্থাৎ পাল্প চেম্বার পর্যন্ত চলে যায়, তবে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। চিকিৎসাব্যবস্থাও জটিল হয়ে পড়ে।
ভাঙা দাঁতকে আজকাল ফিলিং ম্যাটেরিয়াল বা লাইটকিউর দিয়ে সুন্দরভাবে পূরণ করা যায়, যা দেখতে অবিকল স্বাভাবিক রঙের হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসা করা দাঁতে ক্রাউন বা মুকুট বসাতে দেরি করা উচিত নয়।
ডেন্টাল ক্যারিজ প্রতিরোধে ব্যালেন্সড ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করতে হবে। তা ছাড়া এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে যা অ্যানামেল রিপেয়ার করে।
চিনিযুক্ত পানীয় বা আঠালো খাবার, অযুক্ত খাবার, কফি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে বা খাওয়ার পর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
শুধু ব্রাশ করলেই হবে না, সুতা বা ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত (বছরে অন্তত দুবার) নিবন্ধিত ডেন্টাল সার্জন দ্বারা দাঁত পরীক্ষা করাতে হবে।
লেখক:
অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী
দন্ত বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অনারারি)
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।