Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

বাড়িতে অবসর ভালো কাটুক নবীন ও প্রবীণদের

Icon

কেয়া আমান

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২০, ১০:২২ পিএম

বাড়িতে অবসর ভালো কাটুক নবীন ও প্রবীণদের

একটা সময় ছিল যখন দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, বাবা-মা মিলে ছিল পরিবার। অর্থাৎ যৌথ পরিবার। সন্তানকে আদর, ভালোবাসা ও খেলাধুলার জন্য সময় দেয়া ছিল পরিবারের অসংখ্য সদস্য। বাবা-মায়ের ব্যস্ততায় সন্তান একাকিত্বে ভুগত না, মায়ের বকুনি খেয়ে সন্তান তখন দাদির বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে পারত।

আবার দাদা-দাদি, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে অফুরন্ত অবসর সময় কাটাত; কিন্তু সময়ের দাবিতে এখন শুধু বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়েই গড়ে উঠছে সংসার। সেসব সংসারে আবার অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মা দুজনই কর্মজীবী। ফলে কর্মব্যস্ততা কিংবা সাংসারিক নানা জটিলতায় সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে না পারায় ধীরে ধীরে সন্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন থেকে। আর পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন সন্তান বিপদগামী।

প্যারেন্ট চয়েস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ড. লিলিয়ান কারসন বলেন, দাদা-দাদি, নানা-নানিরা জীবনকে পরিবর্তন করার এক মহান ক্ষমতা রাখেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলে আপনার সন্তানের মূল্যবোধ বাড়বে, তারা শিখতে পারবে নৈতিকতা। আপনার সন্তান দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে তাদের বহুদিনের বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনলে যেমন বাড়বে জ্ঞান, তেমনি বাড়বে কাজের দক্ষতা। পরিচিত হতে পারবে তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে। তৈরি হবে এক সমৃদ্ধ পারিবারিক বন্ধন।

অথচ আজকাল একক পরিবারগুলোতে কর্মজীবী বাবা-মায়েদের এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয়, তাদের জন্য সন্তানকে সময় দেয়া বা সঠিকভাবে যতœ নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অপরদিকে দূরে থাকা বাবা-মায়েরও নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া সম্ভব হয় না। তাই এখন একক পরিবারের অনেক স্বামী-স্ত্রীই সন্তানের দাদা-দাদি, নানা-নানিকে নিজের কাছে রাখেন।

এতে দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে বাড়ির ছোট সদস্যরা যেমন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পান, তেমনি বয়স্কদের একাকিত্বও দূর হয়। দাদা-দাদিদের মধ্যে শেখানোর প্রবণতা বেশি থাকে, ফলে ছোটদের গান, ছড়া, সূরা, গল্প বলা বা ছোট ছোট কাজ ইত্যাদি তারা নাতি-নাতনিদের সহজেই শিখিয়ে ফেলেন। এতে বয়স্কদের অবসর সময়ও অনেক ভালো কাটে। তারা খুঁজে পায় বেঁচে থাকার প্রেরণা।

সারা বিশ্ব এখন এক ভয়াবহ সময় পার করছে। কোনো দেশই কোভিড-১৯-এর ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলছে। আমাদের দেশে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খোলা হলেও স্কুল-কলেজ বন্ধ সেই মার্চ থেকেই। তাই ঘরে বসে সময় কাটাতে কাটাতে বাড়ির ছোটরা একঘেয়ে হয়ে গেছে। পড়াশোনায় মনোযোগ রাখতে পারছে না। খিটমিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে। আসক্তি বাড়ছে মোবাইল, ল্যাপটপে।

পাল্টে যাচ্ছে তাদের মনোজগৎ। অপরদিকে বয়স্ক সদস্যদের দিনগুলোও আগের মতো ভালো কাটছে না। বয়স্কদের করোনা ঝুঁকি বেশি থাকায় তারাও আগের মতো মন চাইলে বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করা বা নাতি-নাতির হাত ধরে খোলাপ্রান্তরে হেঁটে বেড়াতে পারছেন না। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরেই থাকতে হচ্ছে। এতে শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনে বিষন্নতা দেখা দিচ্ছে। তাই এ সংকটকালীন বাড়ির ছোট-বড় সদস্যদের ভালো থাকতে একে অন্যকে আরও বেশি সময় দিতে হবে। সংকটের এ সময়ে বাড়ির বয়স্ক এবং ছোট সদস্যরা বাড়ির ছোট গণ্ডিতে থেকেও নানা উপায়ে আনন্দে সময় কাটাতে পারেন।

যেমন-করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ হল- স্বাস্থ্যকর খাবার, ঠিক সময়ে ওষুধ খাওয়া আর নিয়মিত ফোনে ডাক্তারের উপদেশ নেয়া। করোনার খবরাখবর থেকে মাঝেমাঝে চোখ সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিদরা। তার বদলে বরং গান শুনলে, বই পড়লে, শখের কিছু করলে মন ভালো থাকবে। আÍীয়স্বজনদের নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর নিলে তারা ভরসা পাবেন।

ব্যস্ততার কারণে আমরা যারা বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই না, করোনাকালীন অবসরে সেটি সুদে-আসলে পুষিয়ে নিতে পারেন। বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে টিভি দেখা, তাদের প্রিয় কোনো রান্না নিজ হাতে করে একসঙ্গে খাওয়া, শৈশব-কৈশোরের মতো একসঙ্গে লুডু-দাবা নিয়ে বসে যাওয়া, নিয়ম করে তাদের ওষুধ খাইয়ে দেয়া ইত্যাদি কাজগুলোর মাধ্যমে এখন আমরা তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো রাখতে পারি। এতে পারিবারিক সম্পর্কের মিষ্টতাও ছড়াবে।

বাড়ির ছোট সদস্যরা দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে লুডু-দাবা খেলা, গল্প করা, টিভিতে গঠনমূলক অনুষ্ঠান দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সময় কাটাতে পারে। এ দুইয়ের সঙ্গ দু’জনেরই মনের চাপ কমাবে। হুহু করে সময়ও কাটবে।

বাড়িতে কোনো পোষ্য থাকলে তার সঙ্গেও সময় কাটাতে পারেন বয়স্ক মানুষটি। অবসর ভালো কাটবে।

বাড়ির ছোট সদস্যরা বিকালে দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে ছাদে যেতে পারেন। ছাদের খোলা হাওয়ায় কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ালে, খেলাধুলা বা দুষ্টমিতে সময় কাটালে উভয়ের মনই ফুরফুরে হয়ে উঠবে। শরীরও ভালো থাকবে। একইভাবে বাসার নিচে খোলা জায়গা থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানেও সকাল-বিকাল হাঁটতে পারেন।

ভালো বই পড়া, গান শোনা, প্রার্থনা করা ইত্যাদির মাধ্যমে অবসরে মন ভালো রাখতে পারেন।

শরীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বাগান পরিচর্যা করতেও বয়স্করা বেশ আনন্দ পান। এ কাজে সঙ্গে রাখতে পারেন বাড়ির ছোট সদস্যদের। ছোটরা কাজও শিখবে, তাদের বিনোদনও হবে।

বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের খাবার খাওয়া, ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি কাজগুলো সময়মতো যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাড়ির ছোট সদস্যদের টুকিটাকি ঘরের কাজ, দাদা-দাদিকে সেবাযত্ন, ওষুধ খাওয়ানো বা মনে করিয়ে দেয়ার দায়িত্বটি বুঝিয়ে দিতে পারেন। সময় কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছোটরা শিখবে দায়িত্ববোধ।

নিজেরাও অনেক সময় কাটান বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে। এতে মানসিকভাবে তারা প্রফুল্ল থাকবে। তৈরি হবে অটুট পারিবারিক বন্ধন।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম