সুখী পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর বিচক্ষণতা ও দৈনন্দিন করণীয়
মো. রামিজুর রহমান খান
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:১৯ পিএম
সুখী পরিবার। ছবি: যুগান্তর গ্রাফিক্স টিম
প্রতিদিন অনেক ব্যস্ততার মাঝে কিভাবে সুখী পরিবার গঠনে সচেষ্ট থাকা যায় সেটা নির্ভর করে হাসবেন্ড-ওয়াইফের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার ওপর। দুজনকেই দুজনার আবেগ ও পরিস্থিতি বুঝে কাজ করার বা কথা বলার দিকে খেয়াল রাখলে দৈনন্দিন জীবনে মনোমালিন্য কম হবে, বোঝাপড়া ও ভালোবাসা বাড়বে, সুখী পরিবার গঠনে সহায়ক হবে।
স্ত্রীর করণীয় ও বর্জনীয়
হাসবেন্ড অফিস থেকে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফেরে, তখন সংসারের এটা ওটা নিয়ে নালিশ করতে নেই, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
এমন সময় হাসবেন্ডকে ফ্রেশ হতে দিন, ভালো ভালো কিছু কথা বলুন, মুড বোঝার চেষ্টা করুন, ৪০-৫০ মিনিট পর পরিবেশ উপযোগী হলে আপনার কী কথা, কী দাবী সব বলুন।
সাধারণত স্ত্রী প্রায়ই কোনো কিছু চিন্তা না করেই হাসবেন্ড বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই গড় গড় করে এটা ওটা বলতে শুরু করে দেয়। এটা হল কেন? সেটা হয় নাই কেন? বাচ্চা এই করেছে, সেই করেছে ইত্যাদি।
এমন অবস্থায় হাসবেন্ডের চট করেই মেজাজ খারাপ হতে পারে। সে এমনিতেই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত, সব মিলিয়ে ছোট খাট একটা ঝগড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাচ্চাটাও ভয় পেয়ে গুটি শুটি মেরে যেতে পারে। স্ত্রীর বিচক্ষণতার অভাবে পরিস্থিতি হুট করেই ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। স্ত্রীর চাওয়াটাও পূরণ হয় না, রাতটাও ভালো কাটে না।
পক্ষান্তরে বুদ্ধিমতী স্ত্রী তার সমস্ত কথা বলার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করে। হাসবেন্ডের ভাল মুডের জন্য ওয়েট করে। হাসবেন্ড বাসায় এলে প্রথম এক ঘণ্টা তাকে হেল্প করে থাকে, কুল ডাউন হতে দেয়।
হাসবেন্ড ফুল রিলাক্সড হওয়ার পর সুন্দর করে নিজের কথাগুলো শেয়ার করে। তার চাওয়াটাও পূরণ হয়, সময়টাও ভালো কাটে।
স্বামীর করণীয় ও বর্জনীয়
প্রতিদিন স্ত্রীর জন্য কিছু কোয়ালিটি টাইম রাখুন। তাকে "লেফট ওভার টাইম" বা পরিত্যক্ত সময় দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
লেফট ওভার টাইম বা পরিত্যক্ত সময় কী?
অফিস থেকে ক্লান্ত অবস্থায় বাসায় ফেরা, তারপর বাচ্চার সঙ্গে টাইম পাস করে ডিনার সেরে তারপর ঘুমের চাপ।
এমন সময় কি স্ত্রীর সঙ্গে ভালো করে কথা বলার এনার্জি থাকে? এরকম মানসিক শক্তিহীন সময়কে বলে "লেফট ওভার টাইম" বা পরিত্যক্ত সময়।
কেয়ারলেস হাসবেন্ডরা এগুলো খেয়াল করে না, তারা ভুল করে "পরিত্যক্ত সময়টাই" স্ত্রীর জন্য রাখে। কিন্তু তারা চিন্তাও করে না যে স্ত্রীরা সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে স্বামীর সঙ্গে একটু মন খুলে কথা বলার জন্য।
দিনের পর দিন স্বামীর এরকম উদাসীন আচরণ করে গেলে কখনোই সুখী ফ্যামিলি আশা করা যায় না। বরং মনোমালিন্য হবার সম্ভাবনা থাকে, বোঝাপড়া ও ভালোবাসা কমে যায়।
পক্ষান্তরে বুদ্ধিমান ও কেয়ারফুল হাসবেন্ডরা এই বিষয়টা সবসময় খেয়াল করে। তারা স্ত্রীর জন্য "কোয়ালিটি টাইম" বরাদ্দ রাখে, প্রতিদিন ১০ মিনিট হলেও।
কারণ তারা জানে কিভাবে অসাধারণ সুখী ফ্যামিলি গড়ে তুলতে হয়, তারা বোঝে স্ত্রীর মনের কথাগুলো ভালো করে শুনলেই সে হালকা বোধ করবে, প্রফুল্ল থাকবে, সবাইকে প্রফুল্ল রাখতেও পারবে।
আরও পড়ুন-
প্রিয় মানুষকে খুশি রাখার ১০ উপায়
লেখক: মো. রামিজুর রহমান খান, প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ কনসালটেন্ট, ফ্যামিলি কিংডম কনসাল্টিং