হ্রদের গভীরে ঘুমিয়ে আছে সুপ্রাচীন নগরী

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৪৩ পিএম

হ্রদের গভীরে ঘুমিয়ে আছে সুপ্রাচীন নগরী। ছবি সংগৃহীত
অনেক ইতিহাস আমাদের অজানা। সে রকম একটি নিদর্শন নাগার্জুনসাগর বাঁধ। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর ও তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার মাঝে এই বাঁধের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ১২ বছর। এর পানির তলায় চাপা পড়ে আছে প্রাচীন ভারতের বিশাল একটি নগরী।
কৃষ্ণা নদীতে এই বাঁধ তৈরির জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৩ সালে। হায়দরাবাদের নিজামের নির্দেশে কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররা।
তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমলে, ১৯৫৫ সালে। শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধের জল ধারণক্ষমতা ১১৪৭ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। সেচ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বহুমুখী দিকে বিস্তৃত এই বাঁধ দেশের সবুজ বিপ্লবের প্রধান কারিগর।
কিন্তু তার বিনিময়ে এই বাঁধ গ্রাস করেছে ইতিহাসের অমূল্য আকর। এর গভীরে ঘুমিয়ে আছে প্রায় ১৭০০ বছরের প্রাচীন নগরী।
দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন বংশ পতনের পর ক্ষমতায় এসেছিল ইক্ষ্বাকু বংশ। এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বশিষ্ঠপুত্র চামতামুলা। রামায়ণের ইক্ষ্বাকু বংশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ঐতিহাসিকদের ধারণা, এই বংশ ইচ্ছা করেই এই উপাধি নিয়েছিল, রামচন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য।
আজকের অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার গুন্টুর, কৃষ্ণা ও নালগোন্ডা অঞ্চলে ২২৫ থেকে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে বিস্তৃত হয়েছিল ইক্ষ্বাকু বংশের শাসন। এখন যেখানে নাগার্জুনসাগর হ্রদ, সেখানেই ছিল তাদের রাজধানী। কৃষ্ণা নদীর ডানতীরে তাদের রাজধানীর প্রাচীন নাম ছিল বিজয়পুরী।
সুপরিকল্পিত এই শহরে ছিল বিশাল রাজপ্রাসাদ, সাধারণ মানুষের বাড়ি, মন্দির, দোকানবাজার, আস্তাবল, স্নানাগারসহ নাগরিক সভ্যতার সব অংশ। রোমান সাম্রাজ্যের মতো অ্যাম্ফিথিয়েটারও ছিল এই নগরীতে।
ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদ নিয়ে কয়েকশ বছর ধরে বিজয়পুরী চলে গিয়েছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ঘনজঙ্গল আর পাহাড়ের আড়ালে কেউ তার খোঁজ রাখত না। পুনরাবিষ্কার হয় ব্রিটিশ শাসনে, ১৯২৬ সালে। ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ অবধি সেখানে অল্পবিস্তর খননকাজও হয়।
ইতিহাসের সামান্য কিছু নিদর্শন এএসআই রক্ষা করে রেখেছে নাগার্জুনকোণ্ডায়। নাগার্জুনসাগর হ্রদের ওপর একফালি দ্বীপ হলো নাগার্জুনকোণ্ডা। সেখানেই রাখা আছে ইক্ষ্বাকু বংশের কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন, যা ছিল অতীতে, তার তুলনায় সামান্যমাত্রই রক্ষা করা গেছে।
নাগার্জুনকোণ্ডায় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সেসব নিদর্শন ছাড়াও আছে একটি সংগ্রহশালা। সেখানে যা সংরক্ষিত হয়েছে, সেটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাকি সব গ্রাস করেছে কৃষ্ণা নদীর জলরাশি।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা