Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

বরফের রাজ্য সিকিমের সাঙ্গুলেক ভ্রমণ

Icon

মোহাম্মাদ সুলায়মান

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৩:১২ এএম

বরফের রাজ্য সিকিমের সাঙ্গুলেক ভ্রমণ

বরফের রাজ্য সিকিম। ছবি: লেখক

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। হয়তো ব্যস্ত জীবনের অজুহাতে তা হয়ে উঠে না। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবন নিয়ে স্টিফেন কভিয়ের একটি সুন্দর কথা আছে– “আপনার জীবন চলে একটি কম্পাস দিয়ে, ঘড়ি দিয়ে নয়”। তাই বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়ে পড়ুন এবং প্রথমে ভারতবর্ষ দেখে ফেলুন। 

বিজ্ঞজনেরা বলে ভারতবর্ষ দেখলে নাকি পৃথিবী অর্ধেক দেখা হয়ে যায়। ভারতে, হিমবাহ থেকে শুরু করে মরুভূমি। পর্বতশৃঙ্গ থেকে অধিক বৃষ্টিপাতের অঞ্চল, সবই আছে। ভারত ভ্রমণে জন্মু অ্যান্ড কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখান্ড, কেরালা ও সিকিমকে প্রথম সারিতে রাখতে পারেন। 

কয়েকটি প্রদেশ ভ্রমণ করা হলেও ভূ-রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় বাড়ির পাশের সিকিম যাওয়া হয়ে উঠেনি। যেখানে ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন অপরূপ। আবার সঙ্গে ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান এই চারটি দেশের মানুষ ও সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার।

হিন্দি ছবিতে অপরূপ গ্যাংটক দেখে শুধু অতৃপ্তির ঢেকুর তুলেছি। আর আঁকাবাঁকা রেশম পথের ছবি দেখে হয়েছি রোমাঞ্চিত। অবশেষে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশিদের জন্য সিকিমের দ্বার উন্মোচিত হলো। 

এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ। নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকি থাকলেও বাচ্চাদের স্কুল, অফিসের ছুটি মঞ্জুর হওয়ায় ভ্রমণে পিছু হটার সুযোগ ছিল না। আমাদের আটজনের দলটি বুড়িমারী হয়ে চললাম পবন কুমার চামলিং ও বাইচুং ভুটিয়ার দেশ সিকিম। 

সিকিম অভিবাসন কেন্দ্র রংপোতে, সময় বেশি লেগে যাওয়ায়। গ্যাংটক পৌঁছে দেখি ঘড়ির কাটায় রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। আগামীকাল সাঙ্গু লেকের অনুমতির জন্য হোটেল ম্যানেজারকে কাগজপত্র দিয়ে যখন রুমে ফিরেছি, তখন দেখি আমি সিকিম রাজ্যে আর আমার সতীর্থরা ঘুমের রাজ্যে।

সকাল নটায় গাড়িতে চড়ে বসলাম পূর্ব সিকিম জিপ স্ট্যান্ড থেকে। আমাদের আজকের গন্তব্য পূর্ব সিকিমের পর্যটন কেন্দ্র সাঙ্গুলেক। দূরত্ব গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিলোমিটার। সময়ের হিসেবে আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথে প্রায় দুই ঘণ্টা। সিকিম হাউস (মুখ্য মন্ত্রীর বাসভবন), তাশিভিউ পয়েন্টসহ গ্যাংটক শহরের চড়াই উৎরাই পার করে এগিয়ে চললাম। 

ছোট ছোট ঘর বাড়ি ও গ্রামকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলার সময়। কোথাও দেখা মিলছে ঝলমলে রোদ। আবার একটু পরেই ঘনকুয়াশার চাদরে ঢাকা। প্রথম দিকে সবুজের দেখা মিললেও কিছু দূরে গিয়ে প্রকৃতির রূপে বিবর্ণতার ছোঁয়া। রেশম পথের অনেকগুলো শাখার একটি হল সাঙ্গু-নাথুলা পাস। চীন-ভারত সীমান্ত হওয়ায় কিছু দূর পরপর সেনা ছাউনি। 

এই পথটি প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। এ পথের নামকরণ করা হয়েছিল তখনকার দিনের চীনের রেশম ব্যবসার নামে। রেশম পথ উপমহাদেশীয় দেশগুলোর মধ্যে দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপকে সংযুক্ত করা একটা প্রাচীন বাণিজ্যিক পথ। 

যাত্রা পথের বিরতিতে। বিশাল আকাশকে মনে হচ্ছে। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো। এখানে সুউচ্চ পাহাড়ের সঙ্গে হয়েছে আকাশের মিতালী। রোমাঞ্চকর এ পথ ভ্রমণ বাস্তবে যে কত সুন্দর তা না আসলে হয়তো বোঝাই যেত না। আঁকা বাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে নেপালি ড্রাইভার উপরে উঠতে থাকল।

রাস্তার দুইপাশের বরফের স্তূপ বলে দিচ্ছে আমাদের গন্তব্য নিকটে। সাঙ্গুর কাছাকাছি পসরা সাজানো এক দোকানে দাঁড়ালো গাড়ি। জুতা ও জ্যাকেট ভাড়া করে উষ্ণ কফিতে চুমুক দিতে দিতেই চলে এলাম সাঙ্গুলেক। পর্যটন মৌসুম হওয়ায় লোকে লোকারণ্য। 

সিকিমে লেখক সুলায়মান


দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি ইয়র্ক থেকে উঠে পড়লাম একটায়। ছবি তুলে ভিড় ঠেলে এবার ক্যাবল কারে চড়ার পালা। ১৪,৫০০ ফিট উপরে ওঠা ক্যাবল কার থেকে আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ ও সাঙ্গুর দৃশ্য ছিল অসাধারণ। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে এই লেক অতি পবিত্র। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লেকের পানির রঙ্গেও আসে পরিবর্তন। আর শীতে তো লেকের পানি জমে বরফ হয়ে যায়।

বরফের রাজ্যে ঘড়ির কাটার ব্যস্ততাকে ছুটি দিলেও রেহাই পেলাম না গাইডের ব্যস্ততায়। এখানের আবহাওয়া দুপুর গড়িয়ে খারাপ হতে থাকে। কফি, নুডুলস মোমো ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায় না। আমরাও কিছু একটা উদরে দিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে।

বলে রাখা দরকার- সিকিম একটি উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত ভারতীয় রাজ্য। রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি ছাড়াও আরও কিছু অঞ্চলে প্রবেশের জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হয়। আরও কিছু অঞ্চল আছে যেগুলোর অনুমতি পাওয়া যায় না। এম.জি মার্গের সিকিম ট্যুরিজম অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশন অথবা সিকিম সরকার নিবন্ধিত ভ্রমণ এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। 

সর্তকতা

সিকিম ভারতের প্রথম রাসায়নিক মুক্ত বা অর্গানিক রাজ্য। পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে সিকিম সরকার উত্তর সিকিমের লাচুং ও লাচেন গ্রামে নিষিদ্ধ করেছে প্লাস্টিকের জলের বোতল। নির্দেশ অমান্যকারীকে গুনতে হয় মোটা অংকের জরিমানা।

লেখক: মোহাম্মাদ সুলায়মান, ব্যাংকার

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম