বিয়ে। দুই অক্ষরের একটি শব্দ কিন্তু এর পরিধি বিশাল। দুজন মানুষের সারা জীবন একসঙ্গে থাকার যে আয়োজন, তা কি আর অল্পতেই শেষ হয়! নেই নেই করেও যে কতশত করণীয় জমা হয়, কত দৌড়-ঝাঁপ, নির্বিঘ্নে সবকিছু সামলে নেওয়ার প্রচেষ্টা। বিয়েতে বর-কনের যতটুকু দায়িত্ব থাকে, তার থেকেও সম্ভবত বেশি থাকে দুই পরিবারের সদস্যদের। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টনও হয়ে যায়। বিয়ে মানে তো কেবল কবুল বলা পর্যন্ত নয়, বাকি সব আয়োজনের তালিকা যে আরও অনেক বড়। বিয়ের কাজী থেকে শুরু করে, ঘর সাজানোর ফুল, কোনটি আপনি বাদ দিতে পারবেন? শীতের এ মৌসুমে বিয়ের আয়োজনও বেশি হয়ে থাকে আমাদের দেশে। তাই আগেভাগে সবকিছু খোঁজ-খবর জানা থাকলে সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সহজ হয়ে যায়।
বিয়ের কাজী
বিয়েতে কাজী তো লাগবেই। তাই আগে থেকে কথা বলে রাখা জরুরি। যেন প্রয়োজনের সময় কাজীর শিডিউল পাওয়া যায়। বিয়ে যে এলাকায় হবে সেখানকার অনুমোদিত কাজীর মাধ্যমে বিয়ে পড়াতে হবে। যে স্থানে বিয়ে পড়ানো হবে অর্থাৎ বাসায় বা মসজিদে কাজী আনতে পারেন কিংবা কাজী অফিসে গিয়েও বিয়ে পড়ানো যায়। সেক্ষেত্রে বর-কনে ও দুই পক্ষের সাক্ষীর উপস্থিতি থাকতে হবে। মুসলিম বিবোহ ও তালাক বিধিমালা ২০০৯-এর ২১ বিধি অনুযায়ী নিকাহ ও তালাক নিবন্ধন ফি বাবদ একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার টাকায় ১২ টাকা ৫০ পয়সা হারে নিবন্ধন ফি আদায় করতে পারবেন। দেনমোহরের পরিমাণ ৪ লাখের বেশি হলে পরবর্তী প্রতি ১ লাখ টাকা দেনমোহরের জন্য ১০০ টাকা নিবন্ধন ফি আদায় করতে পারবেন। তবে দেনমোহরের পরিমাণ যাই হোক সর্বনিম্ন ফি ২০০ টাকার কম হবে না।
বাবুর্চি
বিয়েবাড়ির খাবারের প্রতি আকর্ষণ নেই, এমন কেউ কি আছেন! পোলাও, রোস্ট, কাবাব, বিরিয়ানি, কোর্মা, কালিয়া, জর্দা, ফিরনির গন্ধে ম ম করে বিয়েবাড়ি। আর এসবের নেপথ্য কারিগর হলেন বাবুর্চি। তাই বিয়েবাড়ির রান্নায় বাবুর্চি নিতে হবে বুঝেশুনে। দক্ষতাসম্পন্ন বাবুর্চিকে অগ্রাধিকার দেবেন। ঢাকার মধ্যে হলে পুরান ঢাকার বাবুর্চিকে দিয়ে রান্নার আয়োজন করাতে পারেন। কারণ পুরান ঢাকার শাহী খাবারের সুনাম সবখানেই। ঢাকার বাইরের যারা, তারা এলাকার বিখ্যাত কোনো বাবুর্চির শরণাপন্ন হতে পারেন। এছাড়া ছোটখাটো আয়োজনের ক্ষেত্রে অনলাইনের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ পেজ থেকে অর্ডার করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ভালো রিভিউ দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিয়ের ফুল
ফুল ছাড়া কি বিয়ে হয়? হয়তো হয়। তবে সেই বিয়ে কি কিছুটা হলেও মলিন হয়ে যায় না? বিয়ে যদি ঢাকায় হয়, তবে সবার আগেই আসবে শাহবাগের নাম। এমনিতেও শাহবাগের আশপাশে পৌঁছালেই আপনি ফুলের সৌরভ পাবেন। সেখানে সারা দেশ থেকে আসা নানা নামের নানা রঙের ফুল জড়ো হয়। তাই বিয়ের ফুলের জন্য ছুটতে পারেন শাহবাগে। গুলশান, বনানী, রবীন্দ্র সরোবরেও পাবেন ফুলের দোকান। এছাড়া আপনি যে এলাকায় থাকেন, সেখানেও হাত বাড়ালেই ফুলের দোকান পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই।
পোশাক ও অনুষঙ্গ
বিয়ের মূল আকর্ষণ হলো কনের শাড়ি। আর এদেশে কনের শাড়ির কথা উঠলেই সবার আগে মাথায় আসতে পারে মিরপুরের নাম। কারণ সেখানেই আছে বেনারসি পল্লি। সেখান থেকে সুলভমূল্যে মনের মতো শাড়ি খুঁজে পাওয়া খুবই সহজ। বিয়ের পোশাক ছাড়াও অন্য অনুষঙ্গ কেনার জন্য ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা শপিংমল ও যমুনা ফিউচার পার্ক তো রয়েছেই। এ ছাড়াও আরও অনেক প্রসিদ্ধ বাজার ও শপিংমল পাবেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে। অনেক দোকানে পুরো বিয়ের শপিংয়ের লিস্ট তৈরিই থাকে। তাদের থেকে সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই কেনাকাটা সারতে পারবেন।
পার্লার
কনের সাজের জন্য পার্লারের খোঁজ করছেন? আপনার বাজেট অনুযায়ী পার্লার বেছে নিতে পারেন। তবে যেহেতু সারা জীবনের স্মৃতির বিষয়, তাই খরচ একটু বেশি হলেও ভালো মানের পার্লারে যাওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে পারসোনা, ফারজানা শাকিল মেকওভার, রেড বিউটি স্যালুন, অরা বিউটি লাউঞ্জ ইত্যাদি ছাড়াও সাহায্য নিতে পারেন অনলাইন সেবার। অর্থাৎ অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিউটিশিয়ানের কাজ করে থাকেন। অনলাইনে রিভিউ দেখে তাদের কারও কাছ থেকে সাজতে পারেন বিয়ের সাজ।
ডেকোরেশন
বিয়ের ডেকোরেশনের পুরো বিষয়টিই আসলে নির্ভর করছে আপনার সাধ ও সামর্র্থ্যরে ওপর। তাই সে অনুযায়ী আয়োজন করুন। এখন বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন করে এরকম অনেক ইভেন্ট অর্গানাইজার রয়েছে। আপনার আয়োজনের ধরন বুঝে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে বাজেট কম থাকলে নিজেরাও সাজিয়ে নিতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী।
কমিউনিটি সেন্টার
সাধারণত স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারই ভাড়া করেন বেশিরভাগ মানুষ। কারণ এতে যোগাযোগ সহজ হয়। সব কমিউনিটি সেন্টারের নিজস্ব নিয়ম থাকে। সেগুলো আগে থেকে জেনে নিলে পরবর্তীতে অসুবিধা হওয়ার ভয় থাকে না। বেশিরভাগ কমিউনিটি সেন্টারের ক্ষেত্রেই রান্নার বাজার, বাবুর্চি, লাইটিং, পরিবেশন ইত্যাদির জন্য নিজস্ব লোক থাকে। তাদের কিছু দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে আপনাদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তবে নামি-দামি ভেন্যু হলে ভিন্ন কথা। শেরাটন হোটেল, সেনাকুঞ্জ, লেডিস ক্লাবের মতো ভেন্যুতে শুধু হলো ভাড়া ধরা হয় বাকি দায়িত্ব আয়োজকদের।
বিয়ের কার্ড
বিয়ের দাওয়াতের জন্য কার্ড তো লাগবেই। এ কার্ড নিয়ে থাকে অনেকের অনেক ধরনের জল্পনা-কল্পনা। কেউ সাধারণ কার্ড নিয়েই খুশি, কেউ আবার একটু নতুনত্ব খোঁজেন। কার্ডের বড় বাজার বাংলাবাজার ও পল্টন। এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানেও কার্ডের দোকান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কার্ডের দোকানগুলোর কয়েকটি করে শাখা রয়েছে। অনেক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানও কার্ডের অর্ডার নিয়ে থাকে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে কার্ডের দাম। সেখান থেকে আপনার সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার করতে পারবেন।