
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১১ পিএম

আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের ছয় দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। মামলাগুলোর তদন্ত শেষে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। মামলাগুলো বিচারের জন্য আদালতও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দের মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করে দুদক ১০ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। এর মধ্যে ১০ এপ্রিল একটি, ১৩ এপ্রিল দুটি এবং ১৫ এপ্রিল তিনটি মামলার চার্জশিট আদালতে তোলা হবে। আদালত চার্জশিট আমলে নিলেই মামলাগুলোয় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিচার শুরু হবে।
দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম যুগান্তরকে বলেন, তদন্তে যেসব মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সেসব মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এরপর আদালত তা গ্রহণ করলে আসামি পলাতক থাকলেও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। আসামিকে গ্রেফতার করা গেল কি না, পরবর্তী সময়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে পুলিশ। এরপর আদালত চার্জশিট গ্রহণ করবেন। আর চার্জশিট গ্রহণের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ছয়টি প্লট পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ দেন। চার্জশিটে এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়াও নতুন করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন-শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক। অন্য আসামিরা হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
গত বছর অক্টোবরে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে) রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়। এরপর ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশে শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। জয় (০১৫) ও পুতুল (০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পান। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানা ১০ কাঠার প্লট (০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। মুজিব সিদ্দিকের (০১১) এবং আজমিনা সিদ্দিক (নম্বর ০১৯) একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ পান। এ বছরের ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা, তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গণহত্যার কয়েক শ মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় করা মামলায় জয়, পুতুল, রেহানা ও ববিকেও আসামি করা হয়েছে।