ব্যারিস্টার সুমন প্রতারণা করে এমপি হয়েছে: পিপি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকায় হোটেল কর্মচারী ও যুবদল নেতা হৃদয় হত্যাচেষ্টা মামলায় হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির সোসাইন এ আদেশ দেন।
এদিন মিরপুর মডেল থানার এসআই আব্দুল হামিদ তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
এদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাকে কান্না করতে দেখা যায়। তখন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকলে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাদের শান্ত করেন।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করেন।
এরপর শুনানিতে পিপি ওমর ফারুক বলেন, সে (সুমন) একজন ব্যারিস্টার। ৫ আগস্টের পর দেখলাম সে লন্ডন থেকে কথা বলেছে। জনগণকে বুঝিয়েছে সে দেশে নাই, সে লন্ডন আছে। শুরু থেকেই সে চতুরতা করে আসছে। চতুরতাই তার কাজ। পরে দেখা গেল তার বোনের বাসা থেকে তাকে আটক করেছে।
ফারুকী বলেন, সে নিজেকে দাবি করে সে সেলফি এমপি। সংসদে দাড়িয়েও সে বলেছে সে সেলফি এমপি।বিদেশ থেকে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা এনে এলাকায় কয়েকটা ব্রিজ বানিয়ে সে এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাছাড়া নতুন এমপি হলেই দেখি এমপিরা গাড়ি কিনে। সেও সবচেয়ে দামি গাড়ি কিনে এনেছে, কিন্তু সে গাড়িটা চালাতে পারে নাই।
শুনানিতে তিনি বলেন, সে (সুমন) এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এমপি হয়েছে। কোটা আন্দোলনের সময় হাইকোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে সে হাসিনার পক্ষ নিয়েছে। তখন সে বলেছে, পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে হাসিনাকে সরাতে পারে।
পিপি আরও বলেন, সে এখন আদালতে কেন? সে তো ব্যারিস্টার। সে এমন কাজই করেছে যে স্বৈরাচারের পতনের পর সে বোনের বাসায় আত্মগোপন করেছে। আর মিরপুরে হামলার কারিগর সে এবং তার পালিয়ে থাকারও ঠিকানা মিরপুর। এতেই বুঝা যায় সে যে এখানে জড়িত। এই যুবক বয়সে তার উচিত ছিল ছাত্রদের সঙ্গে থাকা। আন্দোলনের সঙ্গে থাকা। অনেক ব্যারিস্টারই ছাত্রদের সঙ্গে ছিল, কিন্তু সে আরেকটি মেয়ে নিয়ে কোটাবিরোধী বক্তব্য দেয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, যে মামলায় তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে সে মামলায় তার নাম ছাড়া আর কিছুই নাই। এজাহারে সুনির্দিষ্ট কিছুই নাই। সেহেতু, তার রিমান্ড বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করছি।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পরে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরপর বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলতে চান। কিন্তু ফারুকী কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় সুমন বলেন, আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলবো না স্যার। আপনার মাধ্যমে সব আইনজীবীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সরি স্যার।
রিমান্ড আবেদন যা বলা হয়েছে
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার ঘটনাটি গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে ওই আসামির মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যারিস্টার সুমন এ মামলার ৩ নম্বর আসামি। আসামি একজন ব্যারিস্টার বিধায় জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে প্রশ্নের উত্তর কলা-কৌশলে এড়িয়ে যায়। তিনি তার সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি আওয়ামী লীগের একজন উদীয়মান নেতা এবং আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ওই আসামির নির্দেশনা অনুসরণ করে থাকে।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিরপুর-৬ নম্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদী হৃদয় মিয়া মিরপুরে বাঙালিয়ানা ভোজ হোটেলে সহকারী বাবুর্চী হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বরে কোটাবিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা লোহার রড, হাসুয়া, পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, ককটেল ও বোমাসহ বেপরোয়াভাবে শাস্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমণ শুরু করে। এ সময় বাদীর ডান পায়ে গুলি লাগে।পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বাদীকে জাতীয় অর্থপেডিক্স হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
সরকার পতনের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর আহত হৃদয় মিয়া বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। বাদী হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০নং হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি।