শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম
ফাইল ছবি
১১ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার আবেদনকারীর জবানবন্দি শুনে মতিঝিল থানার ওসিকে এই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম জাকী-আল ফারাবী।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী মামলাটির আবেদন করেন।
মামলার আবেদনে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আসামি করার আর্জি জানানো হয়েছে।
তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, তৎকালীন র্যাবের প্রধান একেএম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ বিপ্লব কুমার সরকার, মতিঝিল থানার তৎকালীন ওসি ওমর ফারুক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হক হিরণ।
এছাড়াও আবেদনে আসামির তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান, মোহাম্মদ সাঈদ, সদ্য সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আকরাম হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা আক্তার ডলি, আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ পারভীন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন, মতিঝিল থানার ওসি রমান আলী বিশ্বাস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন সালু, তৎকালীন সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ নাজমুল আলম, মেজর ইকবাল, মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, এনএসআইয়ের সাবেক প্রধান জিয়াউল আহসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রীর এপিএস মোহাম্মদ এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদার।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে হেফাজতে ইসলাম। সেই সমাবেশ ঘিরে পুরো মতিঝিল এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা আর তাণ্ডব চলে। পরে সেই রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরানো হয়।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ‘ওই রাতে শেখ হাসিনার মদদে অন্য আসামিরা রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালায়। তারা সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে লাশগুলো অজ্ঞাত স্থানে গুম করে ফেলে।’
মামলার আবেদনে বাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার কারণে এবং আসামিরা সরকারি ও দলীয় লোকজন হওয়ায় মামলা করতে এত দেরি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সেই রাতের অভিযানে ৬১ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তখন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। তবে পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি। দিনভর সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১১ জন।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। ওই মামলায় গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড হয়। এক মাস কারাভোগের পর তারা জামিনে মুক্তি পান।
আদিলুর রহমান খান বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তাকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।