সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান আদালতে বলেছেন, ‘৭ আগস্ট আমাকে তুলে নেওয়া হয়। আমি আট দিন ধরে আয়নাঘরে ছিলাম। আয়নাঘর আমার সৃষ্টি না। আমি নির্দোষ।’
শুক্রবার বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারককে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে।
সচেতন নাগরিক হিসেবে রিমান্ড শুনানিতে এক আইনজীবী বলেন, ‘আজকের আসামি অমানুষ। আয়নাঘরের কারিগর। জনগণের গলাচিপে ধরেছেন। হাজার হাজার গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত।’
এ সময় জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, ‘আয়নাঘর সম্পর্কে সবাই জানেন। আয়নাঘর উনার সৃষ্টি এটা সত্য নয়। আয়নাঘরে তিনি অলরেডি (ইতোমধ্যে) আট দিন থেকে আসছেন। সেনাবাহিনীর কোনো কাজ করতে হলে প্রধানের অনুমতি নিতে হয়। তাই আসামিকে জামিন দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। গত ৬ আগস্ট তিনি অবসর নিয়েছেন। ৭ আগস্ট থেকে তিনি আয়নাঘরে ছিলেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জিয়াউল আহসান ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর আগে তাকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক (ডিজি) থাকাকালে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে বুধবার এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) অজ্ঞাতপরিচয়ে একটি মামলা করেন।
এ মামলার অভিযোগে আয়শা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো ১৬ জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য যায়।
ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় একজন ব্যক্তি ছেলের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে জানায়, শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে যাই এবং জানতে পারি, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি।
১৯৯১ সালে জিয়াউল আহসান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার। পরে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ র্যাব-২’র উপ-অধিনায়ক এবং একই বছর লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান।
পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) পরিচালক হন। পরের বছরের মার্চে তাকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) পরিচালক করে সরকার।