অবন্তিকার আত্মহত্যা: শিক্ষক ও সহপাঠীর খণ্ডিত সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৭ এএম
সহপাঠী রায়হান ছিদ্দিকী আম্মান (বামে), ফাইরুজ অবন্তিকা (মাঝে) ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও সহপাঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে নানা তথ্য উঠে এলেও সব তথ্য মিলছে, তাও নয়। এগুলোর খণ্ডিত অংশের সত্যতা হয়তো পাওয়া গেছে।
রোববার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা নজরদারিতে ছিলেন। কুমিল্লায় মামলা হওয়ার পর তাদের গ্রেফতার করে সেখানে হস্তান্তর করা হয়েছে। কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকায় অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার অভিযোগের এলাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এটি পুলিশের ঢাকার লালবাগ বিভাগে পড়েছে। ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সংবেদনশীলতা শুরু থেকেই ছিল। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। এ ঘটনায় ডিএমপির পক্ষ থেকে আমাদের যতটুকু করার তা করেছি। আশা করছি, বাকি কাজ কুমিল্লা জেলা পুলিশ করবে।
ড. মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, এ ধরনের আত্মহনন অনাকাঙ্ক্ষিত। যে কোনো ধরনের আত্মহনন পাপ। আমরা মনে করি, প্ররোচনাকারী ব্যক্তিও সমান অপরাধী। জিডির তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট অবন্তিকার নামে জিডিটা হয়েছিল। অবন্তিকার ফেসবুক আইডি থেকে আপত্তিকর পোস্ট করা হয়েছিল। বিষয়টি তখন নিষ্পত্তি করা হলেও হয়তো অবন্তিকা ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না অবন্তিকার : অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় ঢাকায় গ্রেফতার জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম এবং শিক্ষার্থী রায়হান ছিদ্দিকী আম্মানকে কুমিল্লা জেলা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তার সহপাঠীরাও বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এবং পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা শবনমের মেয়ে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার (২৪) বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল। নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা অবন্তিকা নবাব ফয়জুন্নেসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসিতে মেধা তালিকায় নাম লেখান। রংতুলি নামের একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭-১৮ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে বিচারপতি বানাব। এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সে অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বখাটে সহপাঠী আম্মান এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আমার মেয়েকে বাঁচতে দেয়নি। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল আমার মেয়ে। কতটা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলে স্বপ্নবাজ একজন মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে? আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করব।
বরিশালে বিক্ষোভ : অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে রোববার গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় শুভর সভাপতিত্বে ও জেলা শাখার সংগঠক হুজাইফা রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ববি শাখার সদস্য অনিকা সিথি ও ভূমিকা।