অধিকার’র ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন

এএসএম নাসির উদ্দিন এলান
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: যুগান্তর
স্বৈরশাসক লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশ নেওয়া কয়েকজনের প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের মূল লক্ষ্য নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সারা দেশে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করা মানবাধিকার কর্মীরা এর চালিকাশক্তি। এই মানবাধিকারকর্মীদের বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বাস্তবায়নের সংগ্রামে নিয়োজিত আছে। অধিকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য হিসাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গেও যুক্ত আছে। অধিকার তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কর্মকাণ্ডে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন বন্ধ এবং বাক্ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতা লঙ্ঘন, নারীর প্রতি সহিংসতা; ধর্মীয়, জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্যসংরক্ষণ, তথ্যানুসন্ধান ও প্রতিবেদন তৈরির কাজসহ বিভিন্নভাবে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারে নিয়োজিত আছে।
পাশাপাশি অধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন হিসাবেও কাজ করছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠীর বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসন এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়েও অধিকার সোচ্চার আছে। এছাড়াও মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যানুসন্ধান করা ছাড়াও অধিকার মিয়ানমারের ওপর গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য তথ্য এবং প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অধিকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ছাড়াও এর দীর্ঘ পথচলায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন নীতিগত অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচারাভিযান চালিয়েছে। অধিকার’র আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযানের কারণে বাংলাদেশ ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধিতে অনুস্বাক্ষর করে। অধিকার জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্পেশাল কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস পাওয়া সংগঠন হিসাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ফোরামে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে অধিকার হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের শাসনামলের পুরো সময়ে অধিকার জরুরি অবস্থার মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ জরুরি অবস্থার অধীনে সংঘটিত বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর ব্যাপারে প্রতিবাদ জানায়। একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমাকে (আমি তখন অধিকার’র পরিচালক) নৌ-গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অফিস থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এলে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অস্বচ্ছ, বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক করার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। হাসিনার নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিক আন্দোলন দমন ও ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করে জোর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে দেশে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৭২১ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হন এবং ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৭০৫ জন ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা এবং জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস মেকানিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে অধিকার’র ওপর নিপীড়ন নেমে আসে, যা পরে ২০১৩ সাল থেকে চরম আকার ধারণ করে। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ওপর অধিকার তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট রাতে অধিকার’র সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তার বাসার গেটের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। গুলশান থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা তাকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। সারা রাত গুম করে রেখে পরদিন আদিলুর রহমান খানকে আদালতে হাজির করা হয়। ফৌজদারি ৫৪ ধারায় আদিলুর রহমানকে আটক দেখিয়ে ডিবি তাকে রিমান্ডে নেয়। এরপর ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ এবং এর ভেতরে সংরক্ষিত বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে যায়; যেখানে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভিকটিম ও তাদের পরিবারগুলোর সংবেদনশীল তথ্য ছিল। পরবর্তী সময়ে আদিলুর রহমান খান এবং আমাকে নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০০৯)-এ অভিযুক্ত করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের প্রথম মামলাই ছিল আদিলুর রহমান খান এবং আমার বিরুদ্ধে। এরপরই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০০৯)-এর সংশোধন করে আরও নিবর্তনমূলক করে সাজার মেয়াদ বাড়ানো হয়। আদিলুর রহমান খান এবং আমাকে যথাক্রমে ৬২ ও ২৫ দিন কারাগারে আটক রাখা হয়। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করে। এমনকি বিচার বিভাগেও অযোগ্য এবং দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে দীর্ঘ ১০ বছর বিচারিক হয়রানির পর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল বিচারক জুলফিকার হায়াৎ ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আদিলুর এবং আমাকে অভিযুক্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সরকারের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের দুই জনকে ডিভিশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন প্রকাশ করার দায়ে মানবাধিকারকর্মীদের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনা ছিল এটাই প্রথম। নিপীড়নের অংশ হিসাবে প্রতিনিয়তই অধিকার’র সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় প্রতিবারই বাংলাদেশের বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে হয়রানি করা হয়। এছাড়াও জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তৎকালীন কর্তৃতবাদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরার সময় আদিলুর রহমান খানকে বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত দূতাবাসের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে লাঞ্ছিত করা হয়।
কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকার তার সমর্থিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অধিকার’র বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। সেই সময় সরকার অধিকারকে হয়রানি করা এবং অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য তাদের সমর্থক ব্যক্তিদের পরিচালিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবহার করে। এর মধ্যে দুদক অধিকার’র বিরুদ্ধে তথাকথিত দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে এবং অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হয়রানি করে ও হুমকি দেয়। দীর্ঘসময় ধরে দুদক অধিকার’র বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে না পেয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অধিকার যাতে পর্যবেক্ষণ করতে না পারে, সেজন্য সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধির তোয়াক্কা না করে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসাবে অধিকার’র নিবন্ধন একতরফাভাবে বাতিল করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্ত এনজিওবিষয়ক ব্যুরো অধিকার’র নিবন্ধন নবায়নের আবেদন ৮ বছর ঝুলিয়ে রেখে তা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০১৪ সাল থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে অধিকার’র অ্যাকাউন্টগুলো স্থগিত করে। ফলে অধিকার’র মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকাণ্ডগুলো প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। সরকার অধিকার’র মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকাণ্ডকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী এবং ‘সরকারবিরোধী’ কার্যকলাপ হিসাবে আখ্যা দিয়ে অধিকারকে বন্ধ করে দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার অসংখ্য ভিকটিমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-২০১০ সালে ঢাকায় অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আবদুল্লাহ আল ফারুককে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হত্যা করে। ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোলার মানবাধিকারকর্মী আফজাল হোসেন পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন, পুলিশ তার পায়ে কাছ থেকে গুলি করে এবং ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরাজগঞ্জের মানবাধিকারকর্মী আবদুল হাকিম শিমুল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতার গুলিতে নিহত হন। স্থানীয় পর্যায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করায় ২০১৭ সালে নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে অভিযুক্ত করে অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কুষ্টিয়ার মানবাধিকারকর্মী হাসান আলী ও আসলাম আলীকে এবং মুন্সীগঞ্জের মানবাধিকারকর্মী শেখ মোহাম্মদ রতন এবং ২০১৯ সালে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ময়মনসিংহের মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুমকে গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখা হয়। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। অধিকার’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজশাহীর মানবাধিকারকর্মী মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলামকে আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে। ডিবি পুলিশ রাশেদুলকে মতিহার থানায় হস্তান্তর করে এবং সেই থানা থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। অধিকার’র কর্মীরা প্রতিনিয়ত গোয়েন্দা নজরদারি, হয়রানি এবং হুমকির শিকার হন। ২০১৩ সালে অধিকার’র ওপর চরম নিপীড়ন চলাকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও সরকার সমর্থিত দুর্বৃত্তরা অধিকার’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী মানবাধিকারকর্মীদের ভয়ভীতি দেখায়। ফলে নিরাপত্তার অভাবে তাদের অনেকেই মানবাধিকার কর্মকাণ্ড থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।
চরম নিপীড়নমূলক পরিস্থিতিতেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অবস্থানে থাকার কারণেই অধিকার’র সঙ্গে যুক্ত মানবাধিকারকর্মীরা মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। আগামী দিনেও অধিকার ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
লেখক : পরিচালক, অধিকার