জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ
চার শহিদ পরিবারকে যমুনা গ্রুপের সম্মাননা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০ পিএম
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদ চারজনের পরিবারকে সম্মাননা দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ। যুগান্তরের রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে চার শহিদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ (২ লাখ টাকা) তুলে দেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
শনিবার বিশ্বের তৃতীয় এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কের মহল হল রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামীম ইসলাম, যমুনা গ্রুপের পরিচালক সোনিয়া সারিয়াত, পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম, পরিচালক সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম, পরিচালক এসএম আব্দুল ওয়াদুদ ও যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার উপস্থিত ছিলেন।
শহিদ আবু সাঈদের ক্রেস্ট তার বড় ভাই আবু হোসেন, শহিদ মো. আব্দুল গণির ক্রেস্ট তার বাবা আব্দুল মজিদ শেখ, মা লাকী আক্তার, ছেলে আলামিন ও মেয়ে জান্নাত, শহিদ নাঈমুর রহমানের ক্রেস্ট তার বাবা খলিলুর রহমান ও মা নাসিমা বেগম এবং শহিদ মো. গোলাম নাফিজের ক্রেস্ট তার মা নাজমা আক্তার নাসিমা ও ভাই গোলাম রাসেল নাদিম গ্রহণ করেন।
শহিদ আবু সাঈদ : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) ছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক। সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। তার ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। ১৭ জুলাই দুপুরের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে তিনি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য ধারণ করে একাধিক গণমাধ্যম। যমুনা টেলিভিশনও এ ধরনের একটি ভিডিও প্রচার করে। ওই ভিডিও থেকে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়।
শহিদ আব্দুল গণি : রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার আব্দুল গণি শেখ (৪৫) গুলশানের সিক্সসিজন হোটেলে ১৫ বছর ধরে চাকরি করতেন। উত্তর বাড্ডার গুপীপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে গুলশানে যাওয়ার পথে তিনি গুলিতে নিহত হন। ১৯ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটিতে বাসায় থাকলেও অফিসের ফোন পেয়ে গণি গুলশান-২ এ কর্মস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা হন। শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় পৌঁছলে তার মাথায় গুলি লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্ত্রী লাকি আক্তার, ছেলে আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সি মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে আব্দুল গণির সুখের সংসার ছিল।
শহিদ নাঈমুর রহমান : রাজধানীর গুলশান ডিগ্রি কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র নাঈমুর রহমান (২২) ১৯ জুলাই সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহজাদপুরে তার বুকে গুলি লাগে। উত্তর বাড্ডার এএম জেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মা-বাবা, ভাই লাশ নিয়ে গুলশানের কালাচাঁদপুরের বাসায় ফেরার পথে বিভিন্ন স্থানে বাধার মুখে পড়েন। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় নাঈমুরের ভাই সাইমুর রহমান আহত হন।
শহিদ নাঈমুর রহমান প্রায়ই মাকে বলতেন, ‘তোমরা দেখবে, স্বৈরাচারের পতন হবেই।’ শেষবার যখন তিনি বাসা থেকে বের হন তখন মাকে বলেছিলেন, ‘আমার সহপাঠীরা আন্দোলনে যাচ্ছে, আমি ঘরে থাকতে পারব না। আমি যদি মরেও যাই শহিদি মর্যাদা পাব।’
শহিদ নাফিজ : বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করে মো. গোলাম নাফিজ বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন নাফিজ। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। শুরুর দিকে পুলিশের রাবার বুলেট আর হেলমেট পড়া অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুস্থ হয়ে গোলাম নাফিজ ৪ আগস্ট রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন। ফার্মগেট এলাকায় পুলিশের বিশাল দল নাফিজসহ আন্দোলনকারীদের ঘিরে ফেলে। চারদিক থেকে একযোগে লাঠিচার্জ আর গুলি করতে থাকে পুলিশ। একটি গুলি নাফিজের বুক ছিদ্র করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার লাশ ফলের ঝুড়িতে ভরে ময়লার ড্রেনে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। গুলির মুখে নাফিজের নিথর দেহ রিকশায় তুলে এক রিকশাচালক শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।