Logo
Logo
×

রাজনীতি

কাজিয়া মেটান

মারুফ কামাল খান

মারুফ কামাল খান

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পিএম

কাজিয়া মেটান

পতিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগকে কী করা হবে তা' নিয়ে অন্তর্বর্তীকালের সরকার, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের রূপকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের মধ্যে মতের অনৈক্য দেখা দিয়েছে। ছাত্ররা ছাড়া কোনো পক্ষই এ ব্যাপারে তাদের মতের ওপর স্থির বা অটল থাকতে পারছে না। একেক সময় একেক বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য খুব স্বচ্ছ বা স্পষ্টও হচ্ছে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, এই দলের অপরাধী নেতাকর্মীদের বিচার এবং এই দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া কিংবা না দেওয়া নিয়েই এই মতের অমিল।

আওয়ামী লীগের নেতারা দেশের জনগণের অধিকার ও শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রশক্তি ও অস্ত্রবলে তাদেরকে প্রায় ষোলো বছর দমিয়ে রেখেছিল। তারা নিজের দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল এক অঘোষিত যুদ্ধে। জনগণবিরোধী তাদের এ যুদ্ধে মদত দিয়েছে অতিকায় প্রতিবেশী দেশ ভারত। অবশেষে সেই যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে। সেই পরাজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের শীর্ষনেত্রী হাসিনা দেশের ভেতরে তার জন্য নিরাপদ এক ইঞ্চি জমিও খুঁজে পাননি। তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়েছে স্বদেশ নয়, ভারত। তিনি পালিয়ে গিয়ে সেখানেই তাদের আশ্রিত ও গলগ্রহ হয়ে আছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার দেশবৈরী ও ভারতের প্রতি আনুগত্যশীল অবস্থান প্রমাণ করেছেন। এ ঘটনায় তার ব্যাপারটা তিনি নিজেই ফয়সালা করেছেন। নিজেকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অনুপযুক্ত ও অযোগ্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। এখন বাংলাদেশের জনগণের প্রতি হাসিনা যে সব অন্যায় ও অপরাধ করেছেন তার বিচার তাকে এনে নাকি তার অনুপস্থিতিতে হবে সেটা নির্ভর করবে পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর।

হাসিনার রেজিম ও দলের আরো যেসব নেতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যারা চেষ্টা করেও পালাতে পারেননি, ধরা পড়েছেন বা এখনো দেশের মধ্যে লুকিয়ে আছেন আগে তাদের বিচার হোক। তারপর দোষী সাব্যস্ত বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে তাদের রাজনীতির অধিকার নির্ধারিত হবে। এদের সবার বাইরে নির্দোষ-নিরাপরাধ আওয়ামী লীগার কতোজন আছেন তার কোনো হিসেব-পরিসংখ্যান নেই এখনো কারো কাছে। এমন লোক খুঁজে পাওয়া গেলেও তারা আওয়ামী রাজনীতি করবেন কিনা অথবা অপরাধী আওয়ামী নেতারা সরে গিয়ে তাদের ওপর দলের নেতৃত্বের ভার অর্পণ করবেন কিনা সেটাও ভবিষ্যতের ওপর নির্ভরশীল। তার মানে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত কী হবে সেটা আওয়ামী লীগের 'কোর্স অব অ্যাকশন'-এর উপরেই নির্ভর করছে। অথচ আওয়ামী লীগের ওপর তাদের নিজেদের ভবিষ্যত বেছে নেওয়ার দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে অন্যরা অহেতুক এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন ও নিজেদের মধ্যকার মতের অমিলকে দৃশ্যমান করছেন। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে উৎখাতের সিদ্ধান্তই তাদের মধ্যকার ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

ছাত্রগণঅভ্যুত্থানকে বেআইনি পন্থায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মোকাবিলার প্রমাণিত অপতৎপরতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে ছাত্রলীগকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনের যারা একই ধরণের অপরাধ করেছে তাদের প্রত্যকের উপযুক্ত বিচারই হতে পারে সেসব সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিকল্প। নির্বাচনে কোন্‌ দল ও ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে তার শর্তাবলী ও সিদ্ধান্ত স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন নাও হতে পারে।

বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসব ইস্যুতে সংগ্রামে নেমেছিল তারমধ্যে প্রধান ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন। এখনো নির্বাচনই তাদের কাছে রয়ে গেছে অগ্রাধিকার হিসেবে। অন্য দিকে ছাত্ররা রাষ্ট্রের সংস্কারকে বরাবর অগ্রাধিকার দিয়েছে। উভয় পক্ষের মেলবন্ধন রচনার মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদ উৎখাতের অভিযান সফল হয়েছে। তাই নির্বাচন ও সংস্কারকে পরস্পরের বিকল্প করার দরকার নেই। নির্বাচন ও সংস্কার দুটোই হতে হবে। তবে সংস্কার একটি চলমান ও দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। কাজেই একটি যৌক্তিক পর্যায় ও সময়সীমায় অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সমাধা করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়াটাই উত্তম হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এটাকেই 'রোডম্যাপ' বলছে এবং এ সংক্রান্ত একটা ঘোষণা চাইছে সরকারের কাছ থেকে। ইতোমধ্যে একজন উপদেষ্টা দেশের বাইরে বলেছেন, ‘সংস্কার শেষে আগামী ২০২৬ সালের মাঝনাগাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। ‘ খুব ভালো কথা। এটা চূড়ান্ত করে সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট একটা ঘোষণা এলেই ল্যাঠা চুকে যায় বলেই মনে হয়। 'চব্বিশের সফল অভ্যুত্থান যে অমিত সম্ভাবনা তৈরি করছে, ছোটখাট কাজিয়ায় তা যেন কেউ বরবাদ না করে।

লেখক: সাংবাদিক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম