রাশিয়ার মূর্তিমান আতঙ্ক চেচেন বীর শামিল বাসায়েভ ও আজকের পুতিন

কামরুল হাসান কাওছার
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম

সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে চেচনিয়ার মুসলমানদের স্বাধীন হতে চাওয়া এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বশ মানিয়ে রাখার এক সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের মুসলিম যুবকদের অনেকেরই অজানা।
সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার এক মুসলিম জনপদের নাম চেচনিয়া। অবশ্য ১৯৯১ সালের ১ নভেম্বরের আগে বাংলাদেশের মানুষ সেভাবে জানতো না এই মুসলিম অধ্যুষিত জনপদটির কথা। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ জনগণও এই জনপদটির খবর রাখত না। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া ১৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে তখন চেচনিয়া স্বাধীনতার ডাক দেয়। রাশিয়ার পনেরটি প্রজাতন্ত্রের বাইরে নব্বইটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঙ্গ প্রজাতন্ত্র এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে চেচনিয়া একটি।
এই জনপদের অধিকাংশ মানুষই তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমান। জার শাসন ও পরবর্তীকালে সত্তর বছরে কমিউনিস্ট শাসনামলে চেচেন মুসলমানদের চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চেচনিয়া কোনো কালেই রাশিয়ার অংশ ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে চেচনিয়াকে জোরপূর্বক রুশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়। বহুকাল ধরে রুশরা বারবার চেচেনদের ওপর হামলা চালিয়েছে; কিন্তু চেচেন মুসলমানরা কোনো কালেই এই অন্যায় আধিপত্য মেনে নেয়নি। রাশিয়ার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এই জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন মুসলিম অকুতোভয় বীর। তাদেরই একজন চেচেন বীর শামিল সালমানোভিচ বাসায়েভ।
শামিল বাসায়েভের বীরত্ব ও সাহসের কথা নিয়ে ককেশাস অঞ্চলে বহু গল্প প্রচলিত আছে। তাকে চেচনিয়া অঞ্চলের সিংহপুরুষ বলা হয়।
১৯৬৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব চেচনিয়ার দিশেন ভেদেনো গ্রামে শামিলের জন্ম হয়। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার পরিবারের জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
চেচনিয়া ও দাগেস্তানের রুশবিরোধী লড়াই সংগ্রামের বীর সেনানী ইমাম শামিলের নামে তার নামকরণ করা হয়। জীবনের প্রথম পর্বে রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ এলাকার আকসাইস্কি প্রদেশের একটি খামারে কাজ করতেন তিনি। ১৯৮৭ সালে মস্কো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অফ ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন শামিল।
নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চেচেনরা স্বাধীনতার ডাক দেন। তারা গণভোটের আয়োজন করে স্বাধীন দেশের ঘোষণা দেন। ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত বিমানবাহিনীর সাবেক জেনারেল জোখার দুদায়েভের নেতৃত্বাধীন অল-ন্যাশনাল কংগ্রেস অব দ্য চেচেন পিপল পার্টির সদস্যরা চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সুপ্রিম সোভিয়েতের একটি অধিবেশনে আক্রমণ চালান। এ সময় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির গ্রোজনি শাখার প্রধান ভিতালি কুৎসেঙ্কো নিহত হন, ফলে চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সরকারের পতন ঘটে। পরের মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুদায়েভ বিপুল জনসমর্থন লাভ করে জয়লাভ করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকারসমর্থিত প্রজাতন্ত্রটির অন্তর্বর্তী সরকারকে বহিষ্কার করেন। দুদায়েভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তবে রাশিয়া এই স্বাধীনতার ঘোষণা মানতে পারেনি। তারা স্বাধীন চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর রুশ বাহিনীর চেচনিয়া আক্রমণ করে বসে। ইতিহাসে এটিই প্রথম চেচেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়া ভয়ংকর গণহত্যা চালায়। আরব নাগরিক সামির সালেহ আবদুল্লাহ আল সুয়াইল্লিম (যিনি ইবনুল খাত্তাব নামে বেশি পরিচিত) ও শামিল বাশায়েভের নেতৃত্বে চেচেনরা ঘুরে দাঁড়ায়।
১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ছিল এ যুদ্ধের স্থায়ীত্বকাল। প্রাথমিকভাবে রুশ-বাহিনী চেচনিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর রুশ বাহিনী যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি অভিমুখে নিয়ে যায়। চতুর্দিক থেকে গ্রোজনি অবরোধ করে রুশ বাহিনী। দীর্ঘ এক সপ্তাহব্যাপী বিমান হামলা ও অনবরত গোলাবর্ষণ চলতে থাকে পুরো গ্রোজনি জুড়ে। এর ফলে গ্রোজনির হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়। অসংখ্য বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। স্বয়ং রাষ্ট্রপতির প্রাসাদও বাদ যায়নি রুশ সেনাদের বোমাবর্ষণের কবল থেকে।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ থেকে স্বাধীনতাকামীরা রুশদের বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতিতে জোরদার আক্রমণ শুরু করে। রুশদের অধিকৃত অনেক অঞ্চল তারা ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। একই বছরের ১৬ এপ্রিল আরব জিহাদী নেতা আমীর খাত্তাবের (১) যোদ্ধারা শাতোয়ে একটি বৃহৎ রুশ আর্মার্ড কলামকে ধ্বংস করে এবং কমপক্ষে ৭৬ জন রুশ সৈন্যকে হত্যা করে। শামিল বাসায়েভের জন্মভূমি ভেদেনোর নিকট আরেকটি আক্রমণে কমপক্ষে ২৮ জন রুশ সৈন্য নিহত হয়। এভাবে একের পর এক শক্তিশালী আক্রমণের সামনে রাশিয়ান সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
রুশ বিরোধী তীব্র জনমত, চেচেন গেরিলা যোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ের ফলে প্রচুর জনবল ও অস্ত্রবল থাকা সত্ত্বেও রুশ বাহিনী পরাজিত হয়। অবশেষে ১৯৯৬ সালের আগস্টে বোরিস ইয়েলৎসিনের সরকার চেচেনদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। পরবর্তী বছর রাশিয়া ও চেচনিয়ার মাঝে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এভাবেই প্রথম চেচেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রথম চেচেন যুদ্ধ ও শামিল বাসায়েভ:
প্রথম চেচেন যুদ্ধে চেচেন রাষ্ট্রপতি জোখার দুদায়েভ শামিল বাসায়েভকে রাশিয়া বিরোধী যুদ্ধক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইন প্রতিরক্ষা কমান্ডার হিসাবে নিযুক্ত করেন। যুদ্ধ ক্রমাগত তীব্র আকার ধারণ করে। সেই সাথে শামিল বাসায়েভ একজন অভিজ্ঞ ফ্রন্ট-লাইন কমান্ডার হয়ে ওঠেন। আবখাজিয়ার যুদ্ধে তিনি ও তার ব্যাটালিয়ন সফল ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রোজনির যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন।
যুদ্ধ চলাকালীন শামিল বাসায়েভ একটি অভিনব কৌশল আবিষ্কার করেন। তিনি নিজ বাহিনী নিয়ে বড় বড় রুশ সেনাপতি ও সাধারণ সৈনিকদের ব্যাপকহারে জিম্মি করার অভিযানে নেমে পড়েন। এতে রুশ সেনাপতি ও সাধারণ সৈনিকদের অন্তরে আতঙ্ক ঢুকে যায়। এক অনিশ্চিত আতঙ্কে তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন বিপন্ন হয়ে উঠে।
১৯৯৫ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে শামিল বাসায়েভের নেতৃত্বে একদল চেচেন যোদ্ধা দক্ষিণ রাশিয়ার বুদিয়োন্নোভস্ক শহরের একটি হাসপাতালে ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে। এর উদ্দেশ্যে ছিল, রাশিয়া যেন গ্রোজনি অবরোধ তুলে নেয়। কেননা, তখন চেচেনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি অবরুদ্ধ ছিল। অনবরত বোমাবর্ষণ চলছিল। ফলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হতাহত ও বাস্তুচ্যুত হচ্ছিল। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে শামিল বাসায়েভের এমন সময়োপযোগী কৌশল ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। (২) বাসায়েভ ও রুশ প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর চের্নোমির্দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ১২০ জন রুশ নিহত হয়েছিল। শামিল বাসায়েভের এই আক্রমণের ফলে রুশরা সাময়িকভাবে চেচনিয়ায় তাদের সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখতে এবং গ্রোজনির অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এই সুযোগে চেচেনরা তাদের শক্তিবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
শামিল বাসায়েভ চেচেন সমস্যার প্রতি বিশ্বের অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। সে লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ মার্চ তার বাহিনী জার্মানিগামী একটি সাইপ্রিয়ট যাত্রীবাহী বিমান জিম্মি করেন। একই উদ্দেশ্যে সে বছরের ৯ জানুয়ারি চেচেন মুজাহিদরা কৃষ্ণসাগর থেকে ২০০ রুশ যাত্রীসহ একটি তুর্কি জাহাজ জিম্মি করেন। উভয় ক্ষেত্রে চেচেনদের সঙ্গে রুশ সেনাপতিরা আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধের ময়দানে শামিল বাসায়েভের অভিজ্ঞ নেতৃত্বের ফলে রাশিয়া গ্রোজনি থেকে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়। চেচেন-অচেচেন, প্রজাতন্ত্রের সমর্থক ও ইসলামী শরীয়াহর সমর্থক- সকলেই শামিল বাসায়েভকে দ্বিধাহীনচিত্তে রুশ বিরোধী যুদ্ধের কমাণ্ডার হিসেবে মেনে নেয়। শেষ পর্যন্ত এ যুদ্ধে শামিল বাসায়েভ জয়লাভ করেন এবং রাশিয়ান সরকারকে চেচনিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য করেন। এর মধ্য দিয়ে চেচেনরা বিজয়ী হয় এবং রাশিয়া থেকে তাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
তবে ১৯৯৬ সালে দুদায়েভ গুপ্তহত্যার শিকার হন। এরপরই স্বাধীন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন সালিম খান এন্দারবায়েভ। সালিম খান চেয়েছিলেন, আশপাশের মুসলিম দেশগুলোও চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হোক। এই ভাবনা থেকে তিনি দাগেস্তানকে চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিলে রাশিয়া আবার চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। রাশিয়ার পক্ষে সেই যুদ্ধের দায়িত্ব যিনি নেন, তিনি হলেন আজকের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
১৯৯৯ সাল। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে পুতিন ভয়ংকরভাবে চেচেনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পুতিন এবার ব্রিটিশদের পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে চেচেনদের মধ্য থেকে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে খুঁজতে থাকেন যাকে অর্থ ও ক্ষমতা দিয়ে নিজের সহযোদ্ধাদের কাছে থেকে ভাগিয়ে আনা যাবে। সে রকম একজন তিনি পেয়েও গেলেন। তার নাম আখমাদ আবদুল হামিদোভিচ কাদিরভ। তিনি আখমাদ কাদিরভ নামে পরিচিত।
প্রথম চেচেন যুদ্ধে আখমাদ কাদিরভ রুশবিরোধী নেতা ও চেচেন রিপাবলিক অব এসকেরিয়ার প্রধান মুফতি ছিলেন। পুতিন তার সঙ্গে সমঝোতা করলেন। আখমাদ স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ ত্যাগ করে তার দলবল নিয়ে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলেন। আখমাদের সহায়তা নিয়ে পুতিনের রুশ বাহিনী গ্রোজনির ওপর যেভাবে হামলা চালায়, তা চেচনিয়ার ইতিহাসের সমস্ত বর্বরতাকে ছাপিয়ে গেল। গোটা গ্রোজনিকে আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস করা হলো। চেচেন স্বাধীনতাকামীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হলেন।
এর পুরস্কার হিসেবে ২০০০ সালে আখমাদ কাদিরভকে চেচেন প্রশাসনের প্রধান এবং ২০০৩ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনভুক্ত চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে বসানো হলো। ২০০৪ সালের ৯ মে আখমাদ কাদিরভ চেচেন স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৭ সালে তার ছেলে রমজান কাদিরভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসলেন।
আমাদের এই অঞ্চলের মীরজাফরের সঙ্গে আখমাদ কাদিরভ আর মীরজাফরের পুত্র মীরনের সঙ্গে রমজান কাদিরভের মিল পাওয়া যায়। পুতিনের একান্ত বাধ্যগত হয়ে পিতা যে গদিতে বসেছিলেন, সেখানে এখন পুত্র রমজান বসেছেন। স্বদেশের স্বাধীনতাকামীদের দমন করে রাখার বিনিময়ে তিনি সহি-সালামতে গদিতে থাকতে পারছেন।
শামিল বাসায়েভের জীবনাসান
১৯৯৫ সালের ৩ জুন রাশিয়া প্রথমবার শামিল বাসায়েভকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার চাচার বাড়িতে দুটি বোমা নিক্ষেপ করে রাশিয়া। কিন্তু দ্বীনের এই মহান খাদেমকে সেবারের মতো আল্লাহ তা’আলা বাঁচিয়ে রাখেন। তবে এই হামলায় তার স্ত্রী, সন্তান ও বোনসহ তার পরিবারের ১২ জন সদস্য নিহত হন এবং পরে এক যুদ্ধে তার এক ভাইকেও হত্যা করা হয়।
পরে আবার ২০০৪ সালে শামিলকে হত্যার চেষ্টা চালায় রুশ বিমান বাহিনী। কিন্তু সেই অপারেশনেও সাফল্য মেলেনি। শেষে ২০০৬ সালে একটি ট্রাক বিস্ফোরণে প্রাণ হারান মুসলিম মিল্লাতের এই অকুতোভয় বীর সেনানী। গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্ত্র চুক্তির জন্য গোপন ডেরা থেকে বাইরে এসেছিলেন বাসায়েভ। সেই খবর পেয়েই ফাঁদ পাতেন রুশ গুপ্তচরেরা।
২০১৭ সালে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারাল সিকিউরিটি সার্ভিস’ ঘোষণা দিয়েছিল, উত্তর-পূর্ব ককেশাসভিত্তিক সন্ত্রাসীবাদী আন্দোলন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এক স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক অবসান হয়। অবশ্য এই সংগ্রামের ঐতিহাসিক সূচনা প্রায় ৩০০ বছর আগে। তবে অনেকের মতে, রুশ সরকারে দাবিও সঠিক নয়। অর্থাৎ চেচনিয়াসহ উত্তর-পূর্ব ককেশাস অঞ্চলে স্বাধীনতার সংগ্রামকে আজও পুরোপুরি দমন করা যায়নি।