Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ইসলামে মানুষের সম্মান

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামে মানুষের সম্মান

ইসলাম প্রকৃতই যে জীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তির নিশ্চয়তা দেয়, তা-ও মহানবি (সা.) নিজ আদর্শের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এ শান্তির ধর্মে কোনো ধরনের নৈরাজ্যের অনুমতি নেই। এ ছাড়া ইসলাম কাউকে হত্যা করার শিক্ষাও দেয় না। সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এটাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা।

কাউকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামের শিক্ষা হলো, ‘আর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে এর প্রতিফল হবে জাহান্নাম। সেখান সে দীর্ঘকাল থাকবে। আর আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত। তিনি তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য এক মহা আজাব প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (সূরা আন নেসা, আয়াত : ৯৩)।

কাউকে হত্যার ব্যাপারে হজরত মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা করা হবে, তা হবে রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত’ (বুখারি)। কাউকে হত্যা করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, শুধু নিষেধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং যারা এসব কাজ করে, তাদের শাস্তি কত ভয়াবহ, সে সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে।

আমরা যদি ইসলাম ও রাসূলে করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, কতই না উন্নত শিক্ষা আমাদের প্রিয় নবি (সা.)-এর। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করা হয়েছে, কিন্তু তিনি পালটা প্রতিশোধ না নিয়ে করেছেন ক্ষমা। দুহাত তুলে শত্রুদের সংশোধনের জন্য দোয়া করেছেন। মুসলমান ভাই ভাই। এ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। সে অন্যের প্রতি জুলুম করে না এবং তাকে অন্যের হস্তে (জুলুমের উদ্দেশ্যে) সমর্পণ করে না, যে তার ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। যে কেউ মুসলমানের কষ্ট দূর করে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন। যে কেউ মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখে, আল্লাহ কেয়ামতের দিনে তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ওপর এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল করিম (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান আর এক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না। তাকে লাঞ্ছিত করে না এবং তাকে ঘৃণা করে না। (বুকের দিকে তিনবার অঙ্গুলি নির্দেশ করে তিনি বললেন) তাকওয়া (খোদা-ভীতি) এখানে। এক মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করা যথেষ্ট অন্যায়। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, সম্পত্তি এবং সম্মান অন্য একজন মুসলমানের কাছে পবিত্র’ (মুসলিম)।

আরেক হাদিসে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অপর এক মুসলমানের গ্রাস আত্মসাৎ করে, আল্লাহ নিশ্চয় তার অনুরূপ তাকে দোজখ থেকে আহার করাবেন। যে কেউ এক মুসলমানের কাপড় ছিনিয়ে নিয়ে নিজে পরে, আল্লাহ নিশ্চয় তাকে তার অনুরূপ দোজখ থেকে পরাবেন এবং যে কেউ অন্যের সম্মানহানি করে, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ তার সম্মানহানি করবেন’ (আবুদাউদ)। ওপর এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ বিন আমের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমানের হত্যা অপেক্ষা পৃথিবীর বিলোপ সাধন আল্লাহর দৃষ্টিতে অবশ্যই সহজ’।

মহানবি (সা.)-এর মৃত্যুর অল্পদিন আগে বিদায় হজের সময় বিরাট ইসলামি সমাগমকে সম্বোধন করে তিনি (সা.) উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদি পিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে আল্লাহ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করল। এর দ্বারা আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মপরায়ণ’ (বায়হাকি)।

এ মহান শব্দগুলো ইসলামের উচ্চতম আদর্শ ও শ্রেষ্ঠতম নীতিমালার একটি দিক উজ্জ্বলভাবে চিত্রায়িত করেছে। শতধাবিভক্ত একটি সমাজকে অত্যাধুনিক গণতন্ত্রের সমতাভিত্তিক সমাজে ঐক্যবদ্ধ করার কী অসাধারণ উদাত্ত আহ্বান। যারা সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৈতিকতাবর্জিত ইসলামিক কর্মকাণ্ড চালায়, তারা যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, তারা সন্ত্রাসী। কেননা কোনো ধর্মেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই এবং ধর্ম কখনো অশান্তি ও রক্তপাতের উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয়নি।

বিশ্বাসের-স্বাধীনতা হচ্ছে সব মানুষের মৌলিক অধিকার। ইসলাম ধর্মের বিধান মতে, ‘ধর্ম’ হচ্ছে নিজ, পছন্দের একটি বিষয়। এ ধর্ম একটি সুস্পষ্ট ও শান্তির ধর্ম। এ ধর্ম গ্রহণের পরও চাইলে কেউ এটি ত্যাগ করতে পারে, কোনো জোর নেই, তবে এর বিচার সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিজ হাতেই করেন। ধর্মে যদি বল প্রয়োগের বিধান থাকত, তাহলে রাসূল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর অমুসলমানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতেন এবং মক্কায় বসবাসের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি! এতে প্রমাণিত হয়, ধর্মের জন্য বল প্রয়োগ ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলামের আদর্শ হলো শত্রুর সঙ্গেও বন্ধুসুলভ আচরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

হজরত নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয়, তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয়, তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (মুসলিম)।

আল্লাহপাক মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং শ্রেষ্ঠ নবি রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে নিজ জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

masumon83@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম