ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন কাঠামো ও নীতিমালা চান মাসুদ সাঈদী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম
সারা দেশের সব মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী।
শনিবার পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি আয়োজিত উপজেলা ইমাম সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
দেশের ইমামদের অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা কঠিন সময় পার করছেন। নিতান্ত অল্প বেতনে তাদের জীবন নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য। দেশের লাখ লাখ ইমাম মুয়াজ্জিনের কোনো বেতন স্কেল নেই, নেই ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের মান-সম্মান ও নিরাপত্তা। মসজিদ পরিচালনায় নেই কোনো নীতিমালা। এমতাবস্থায় দেশের প্রথিতযশা আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দেশের সব মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন স্কেল ও চাকরির নীতিমালা তৈরি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোনো পেশা নয় বরং এটা হচ্ছে একটি মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (স.) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য এই বলে দোয়া করেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার।’
মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তাই ইমামকে এ কাজের জন্য যেমন যোগ্য হতে হবে তেমনি তাকে মহৎ গুণের অধিকারীও হতে হবে। তাকে হতে হবে সৎ নিষ্ঠাবান তাকওয়ান ও আল্লাহওয়ালা আলেম। একজন ইমাম শুধু মসজিদের ইমামই নন বরং তিনি সমাজেরও ইমাম। একজন ইমাম হলেন মানবতার পথ প্রদর্শক।
ইমামদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সাঈদীপুত্র বলেন, ইমামরা জনসাধারণকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নসিহতের পাশাপাশি তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। মসজিদে নববীতে মহানবী (স.) আজীবন ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। মসজিদে নববীকে তিনি শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং সমাজ উন্নয়নের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
মাসুদ সাঈদী বলেন, আমরা যদি প্রতিটি মসজিদকে নবীজির দেখানো সেই মসজিদে নববীর রোল মডেল রূপে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, সমাজে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদের ইমাম যেমন জাতির আমলগত সংস্কারের জিম্মাদার তেমনি আকিদাগত সংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করারও পুরাপুরি দায়িত্বশীল। বাতিল আকিদা ও মতবাদকে খণ্ডন করা এবং ভ্রান্ত চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা তাদের প্রধান দায়িত্ব। যদি আল্লাহর একত্ববাদ পরিপন্থি কোনো আওয়াজ রাষ্ট্রে উঠে অথবা রাসুলের (স.) রিসালাতের অবমাননা করা হয় তাহলে বাতিল শক্তির এই সব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা ও প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা ইমামদের কর্তব্যও বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা ইমাম সম্মেলনের প্রধান অতিথি মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও রাসুলের (স.) আনুগত্যের পরিবর্তে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে এ যাবৎ দলের সার্বভৌমত্ব ও দলীয় নেতাদের আনুগত্য, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব চলছে। যার কারণে মানুষ সুশাসন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম, খুন, ধর্ষণ, মাদক ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের সয়লাবে জাতীয় জীবনে চরম দুর্ভোগ ও অশান্তি চলছে।
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি জিয়ানগর উপজেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় উপজেলা ইমাম সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল হালিম।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- টগড়া দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো. হারুন অর রশিদ, ওলামা বিভাগের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা শওকত আলী, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ইয়াহইয়া হাওলাদার, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলার উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান, ইমাম সমিতির জিয়ানগর উপজেলার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মো. আলী হোসেন, উপদেষ্টা মো. তৌহিদুর রহমান রাতুল ও উপদেষ্টা মাওলানা মো. সারোয়ার হোসেন মোল্লা।