Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পবিত্র হজ পালিত

ফিলিস্তিনের জন্য বিশেষ দোয়া

Icon

তানজিল আমির

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফিলিস্তিনের জন্য বিশেষ দোয়া

পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় সৌদি আরবের ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে অবস্থান ও খুতবা শোনার মধ্য দিয়ে শনিবার পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন ২০ লাখেরও বেশি মুসলমান।

কণ্ঠে ছিল সেই আকুল ধ্বনি-‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)।

সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ ধ্বনিতে মুখর ছিল আরাফাতের ময়দান।

হজের দিন তীব্র গরম পড়তে পারে সে ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিল সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। তবে গরম উপেক্ষা করেই আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় সব কষ্ট সহ্য করে নিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

হাজিরা শনিবার সারা দিন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে খুতবা শুনেছেন, তিলাওয়াত-তাসবিহাত পড়েছেন, আদায় করেছেন নামাজ। মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে জানিয়েছেন শত আর্জি। আরাফাতের ময়দানে এ অবস্থান হজের প্রধান ফরজ।

এদিন হজের খুতবায় আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করে তাকওয়া অবলম্বন করার এবং মুসলমানদের পরস্পরকে সৎকাজে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া এবার হজের খুতবায় ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য রহমত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে।

আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে এ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদুল হারামের জনপ্রিয় ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়) মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা শুরু করেন তিনি। শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি শুরুতে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন।

হজের খুতবায় তিনি বলেন, হে মানুষ, আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করো, কুরআনে বলা হয়েছে যে অন্যায় করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন। ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্য এবং বিধান শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহতায়ালা সবকিছুর মালিক। তিনি আমাদের জন্য রহমত হিসাবে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যার প্রতিটি আয়াত প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ। এই কুরআন মানুষকে সরল পথ দেখায়।

মুসলমানদের তাকওয়া অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি বলেন, তাকওয়া মানুষকে সফলতা ও মুক্তি দেয়, তাকওয়া অবলম্বনকারীরা কিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত থাকবেন। যে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহতায়ালা তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যেখান থেকে সে কল্পনাও করতে পারবে না। যে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে তাকে প্রতিদান দেবেন।

তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা).কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছেন। যারা নবিজি (সা.)-কে সম্মান করবে, ইমান আনবে এবং আল্লাহর হেদায়েত স্বরূপ যে কুরআন নাজিল করেছেন তার বিধান মেনে চলবে তারাই সফল।

হজের খুতবায় আরও বলা হয়, একে অপরের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করা ঠিক নয়, আল্লাহ বলেন, ন্যায়ের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিন, মদ ও জুয়া মন্দ কাজ। নিজের পিতামাতা এবং যে আপনার প্রতি দয়া ও সদ্ব্যবহার করেছে তার জন্য দোয়া করুন। অন্যের জন্য তার অনুপস্থিতিতে করুন, তাহলে ফেরেশতাও আপনার জন্য দোয়া করবেন।

হজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়ার আহ্বান: হজের খুতবায় ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে দোয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি।

খুতবায় ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানেরা যুদ্ধের কবলে। তারা বিপর্যস্ত। তাদের খাওয়ার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পৃথিবীর সব ধরনের আরাম ও সুখ থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের জন্য দোয়া করুন। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এটা তাদের পাওনা। তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, সহযোগিতার চেষ্টা, অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারাও দোয়ার হকদার। এছাড়াও যারা হজযাত্রীদের সেবা করছেন তারাও দোয়ার হকদার।

হজের খুতবা আরবি ভাষায় দেওয়া হলেও এর অনুবাদ প্রচারিত হয়েছে আরও ৫০টি ভাষায়। খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক এবং নাজমুস সাকিব। তারা দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

খুতবা শেষে আরাফাতের ময়দানে সমবেত মুসল্লিরা মসজিদে নামিরায় আদায় করেছেন জোহর ও আসরের নামাজ। ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ মসজিদ এবং এর ৮০ হাজার বর্গমিটার চত্বর ছাপিয়ে রাস্তা ও আশপাশের বাগানেও নামাজে দাঁড়িয়ে যান মুসল্লিরা।

বিকালে মুসল্লিরা পা বাড়ান প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার পথে। মাগরিব ও এশার নামাজ সেখানে পড়েন তারা। সেখানেই রাতে খোলা আকাশের নিচে ছিলেন। এটি ওয়াজিব।

এ সময়েই তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাথর সংগ্রহ করেছেন, যা মিনার জামারায় প্রতীকী শয়তানকে উদ্দেশ করে ছোড়া হবে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউ হেঁটে মিনায় নিজ তাঁবুতে ফিরবেন।

মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কুরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া) গোসল করবেন। এরপর কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এটি হজের আরেকটি ফরজ। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাই (সাতবার দৌড়ানো) করবেন।

মিনায় তারা যতদিন থাকবেন, ততদিন প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারবেন। সবশেষে কাবা শরিফ বিদায়ি তাওয়াফের (ওয়াজিব) মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

হজযাত্রীদের স্বস্তি দিতে রোড-কুলিং প্রযুক্তি: এবার হজযাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক চলাফেরার জন্য রাস্তায় কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। রোডস জেনারেল অথরিটির মুখপাত্র আব্দুল আজিজ আল-ওতাইবি আরব নিউজকে বলেছেন, ‘রাস্তা যখন সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে, তখন এই প্রযুক্তি তাপ শোষণ করে। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত শোষণ করবে এই প্রযুক্তি।’

তিনি বলেন, রাস্তা থেকে তাপ নির্গত হতে শুরু করে, যা তাপ দ্বীপের ঘটনা হিসাবে পরিচিত। এটি মোকাবিলা করার জন্য, একটি শীতল উপাদান পবিত্র স্থানগুলোর চারপাশে ফুটপাতে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা অন্যান্য পদার্থের তুলনায় কম সূর্যের রশ্মি শোষণ করে।

আল-ওতাইবি বলেছেন, ‘আমরা যে উপাদানটি তৈরি করেছি তা রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর। যেহেতু এটি সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে, যা তাপ শোষণ হ্রাস করে রাস্তার তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এটি তাপ বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে, রাস্তা ঠান্ডা রাখে এবং পথচারীদের জন্য আনন্দদায়ক করে তোলে। রোড-কুলিং প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ হজযাত্রীর জন্য অবকাঠামো ও সেবা উন্নত করার জন্য সৌদি আরবের চলমান প্রচেষ্টার অংশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম