
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৯ এএম
যাদের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:২৭ পিএম

আরও পড়ুন
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।
সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন অথবা বুঝমান-বালেগ হওয়া কিংবা মুকীম হওয়া শর্ত নয়। অবুঝ-নাবালেগ, মুসাফির এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাদের ওপরও সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় সকলের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নাবালেগ, মানসিক ভারসাম্যহীনের সম্পদ থেকে তার অভিভাবক সদকায়ে ফিতর আদায় করবেন। –রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৯
সদকাতুল ফিতরের নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা- রুপা, অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্যের সঙ্গে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, বসবাসের অতিরিক্ত বাড়ি, অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র– এসব কিছুও হিসাবযোগ্য। এসব মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলেও সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।
সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাবের ওপর বছরপূর্তি জরুরি নয়; ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। তবে কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হলে সে ঋণ বাদ দিয়ে নেসাবের হিসাব করবে।
কেউ রমজানের রোজা রাখতে না পারলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। –বাদায়েউস সানায়ে ২/১৯৯
ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে সন্তান ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পর জন্মগ্রহণ করবে, তার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে না। অনুরূপ কেউ যদি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের আগে মারা যায়, তাহলে তার ওপরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় না। –বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৫
সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ
হাদিসে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা : ১. যব, ২. খেজুর, ৩. পনির, ৪. কিশমিশ ৫. গম।
এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে মাথাপিছু এক সা‘ পরিমাণ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা সা‘ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম। এটা ওজনের দিক দিয়ে তফাৎ। আর মূল্যের পার্থক্য তো আছেই।
উল্লেখ্য, হাদিসে এ পাঁচটি দ্রব্যের যে কোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোনোটি দ্বারা তা আদায় করতে পারেন।
তাই এক্ষেত্রে উচিত হল, যার উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকাতুল ফিতর আদায় করার সামর্থ্য আছে, তার জন্য ওই হিসাবেই দেওয়া। যার সাধ্য পনির হিসাবে দেওয়ার, তিনি তাই দেবেন। এরচেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিশমিশের হিসাব গ্রহণ করতে পারেন। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন, তিনি আদায় করবেন গম দ্বারা।
আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে, কুরআনের নির্দেশনা–
مَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَهُوَ خَیْرٌ لَّهٗ.
(অবশ্য কেউ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো পুণ্যের কাজ করে (এবং নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে আরো বাড়িয়ে দেয়) তবে তার পক্ষে তা শ্রেয়। [সূরা বাকারা (০২) : ১৮৪)
–এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বড় বড় বিত্তশালী ব্যক্তিগণ যদি সাধারণ সম্পদশালীদের মতো একই মানের সদকাতুল ফিতর আদায় না করে হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্য থেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করেন, তবে তা-ই উত্তম হবে।
তবে এটি ভিন্ন কথা যে, কোনো ব্যক্তি হাদিসে বর্ণিত যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে তার সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।