Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সুন্নত ইতেকাফে যা যা করতে হবে

Icon

মুফতি বিলাল হুসাইন খান

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম

সুন্নত ইতেকাফে যা যা করতে হবে

শরীয়তের পরিভাষায় এতেকাফের হাকিকত ও মূল মর্ম হলো, ইবাদত ও সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা ও স্থির থাকা- যদিও তা এক মুহূর্তের জন্যও হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে এতেকাফের অনেক বেশি সওয়াব রয়েছে। 

এতেকাফ মূলত তিন প্রকার। 

১. ওয়াজিব এতেকাফ: এতেকাফের মান্নত করলে এতেকাফ ওয়াজিব হয়ে যায় কিংবা সুন্নাত এতেকাফ শুরু করার পর তা নষ্ট করে ফেললে তার জন্য কাযা এতেকাফ ওয়াজিব হয়ে যায়। 

২. সুন্নাত এতেকাফ: রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ হচ্ছে সুন্নাত এতেকাফ। এটাই আজকের আমাদের আলোচ্যবিষয়। এ সম্পর্কে মাসয়ালাসমূহ একটু পরে আসছে।

৩. নফল এতেকাফ: রমজানের শেষ দশক ছাড়া যে-কোনোসময়ে এতেকাফ করাকে ‘নফল এতেকাফ’ বলে। চাই বেশি সময়ের জন্য হোক বা অল্প সময়ের জন্য হোক। 

নফল এতেকাফকারীদের জন্য রোজা রাখা শর্ত নয় এবং কোনো সময়ও নির্ধারিত নেই; বরং নামাজ বা অন্য কোনো ইবাদতের নিয়ত করে নিলে সওয়াব পেতে থাকবে। 

সুন্নত এতেকাফের সময় হলো রমজানের ২০ তারিখে সুর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত। কাজেই সুন্নত এতেকাফকারীর উপর আবশ্যক হলো ২০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বেই প্রয়োজনীয় সামানপত্র নিয়ে মসজিদে পৌঁছে যাবে। যাতে ওই দিনের সূর্য এতেকাফকারীর মসজিদে থাকা অবস্থায় অস্ত যায়। 

যদি সামানাপত্র প্রস্তুত করতে দেরি হয়ে যায়, তাহলে সে নিজে সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে পৌঁছে যাবে, পরে সামানাপত্র অন্য কোনো লোকের মাধ্যমে মসজিদে নিয়ে আসা হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের নিয়তে তাশরিফ আনার পর থেকে প্রতি বছরই রমজানে এই এতেকাফ করতেন, শুধু এক বছর ওজরবশত এতেকাফ করতে পারেননি। রাসূল নিজেও লোকদেরকে এতেকাফের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। 

সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ এতেকাফ করতেন, আর কেউ কেউ এতেকাফ করতেন না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কারো প্রতি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। এ কারণে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন যে, এই এতেকাফ (রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ) সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। 

সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া-এর অর্থ হলো, গ্রাম বা প্রত্যেক মসজিদের অধিবাসীদের একজনও যদি রমজানের শেষ দশকে মসজিদে এতেকাফ করে তাহলে সকলের পক্ষ থেকে এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে, নতুবা সব মহল্লাবাসী গুনাহগার হবে ও আল্লাহর দরবারে তিরস্কারের পাত্র হবে। 

প্রয়োজনবশত কিংবা প্রয়োজন ছাড়াই এক মহল্লার মসজিদে অন্য মহল্লাবাসীর সুন্নত এতেকাফ আদায়ের দ্বারা সুন্নতে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। কারণ, এ এতেকাফের জন্য মসজিদের মহল্লাবাসী হওয়া উত্তম বটে; তবে শর্ত নয়।

পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফ করা অথবা বসানো উভয়টা নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ। কারণ, এতেকাফ এক ধরনের ইবাদত। তাই এতেকাফের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেওয়া ও নেওয়া উভয়টা হারাম। তবে এতেকাফকারী গরীব হলে কোনো রূপ শর্ত ছাড়াই মহল্লাবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে সাহায্য করাতে কোনো ক্ষতি নেই এবং তা জায়েয হবে। 

২. সুন্নত এতেকাফ যেহেতু রমজানের শেষ দশকে হয়, তাই দশ দিনের কম এতেকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করলে কিংবা ১০ দিনের কম দিন এতেকাফ করলে সুন্নত এতেকাফ আদায় হবে না। সুতরাং সুন্নত এতেকাফ আদায় করতে হলে পূর্ণ শেষ দশকের এতেকাফের নিয়ত করতে হবে এবং তা পূর্ণও করতে হবে।

৩. কোনো কোনো লোক এভাবে নিয়ত করে থাকে যে, প্রথম পাঁচদিন এতেকাফ করবো, এরপর যদি ইচ্ছা হয় তাহলে পূর্ণ দশদিনই এতেকাফ করে নেবো। এভাবে নিয়ত করলে সুন্নত এতেকাফের সওয়াব পাবে না। তবে নফল এতেকাফের সওয়াব পাবে।

৪. সুন্নত এতেকাফ শুরু করার পর তা পূর্ণ করা চাই। বিনা ওযরে মাঝখানে এতেকাফ ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, সুন্নত এতেকাফ শুরু করার পর তা পূরণ করা এক ধরনের ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে পড়ে। 

৫. সুন্নত এতেকাফ শুরু করার পর মাঝখানে যদি ওজর বশত কিংবা বিনা ওজরে এতেকাফ নষ্ট করে ফেলে, তাহলে ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর মতে পুরো দিনের (অর্থাৎ পূর্ণ দশকের) এতেকাফ রোজার সঙ্গে আদায় করে নেওয়া আবশ্যক। তবে ইমাম আজম আবু হানীফা রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ.-এর মতে যে দিনের এতেকাফ নষ্ট করেছে শুধু সেই দিনের এতেকাফ রোজার সঙ্গে কাজা করে নেওয়াই যথেষ্ট। 

এই শেষ মতামতের উপরই ফতোয়া, বাকী ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর মতামত অধিক সতর্কতা ও তাকওয়ার উপর ভিত্তিশীল। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম