ব্যবসায়িক পণ্যের জাকাত দেবেন যেভাবে

মুফতি বিলাল হুসাইন খান
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭ এএম

জাকাতের শাব্দিক অর্থ হলো- পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি, বিকাশ ও উন্নতি। যেহেতু জাকাত মানুষকে কৃপণতা, গুনাহ ও আজাব হতে পবিত্র ও মুক্ত করে এবং সার্বিক পবিত্রতা, সম্পদের উন্নতি এবং অন্তরের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার কারণ হয়, তাই এই হুকুমটির নামকরণ করা হয়েছে ‘জাকাত’।
জাকাতকে ‘সদকা’ও বলা হয়। কারণ, জাকাত দিলে জাকাতদাতার ঈমানের সত্যায়ন হয় এবং তার অন্তরের সততা ও সত্যবাদিতা প্রকাশ পায়।
শরীয়তের পরিভাষায় জাকাত বলা হয়- সম্পদশালী ব্যক্তি তার সম্পদের শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত একটি অংশকে (তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ) সৈয়দ বংশের নয়, নেসাবের মালিক নয় এমন দরিদ্র মুসলমানকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। আর তা দেওয়া হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি খুশি করার লক্ষ্যে, প্রদানকারীর কোনো প্রকার স্বার্থ তাতে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না
মালে নামি অর্থাৎ বর্ধনশীল সম্পদের জাকাত দিতে হয়, যদি নেসাব পরিমাণ হয়।
ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বর্ধনশীল সম্পদ হচ্ছে-
১. স্বর্ণ ও রুপা
২. নগদ অর্থ
৩.ব্যবসায়ী পণ্য
৪. গবাদি পশু
ব্যবসার মাল যদি নেসাব পরিমাণ হয়ে থাকে, (অর্থাৎ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ হয়,) তাহলে বছরান্তে তার উপর জাকাত ফরজ। শতকরা আড়াই টাকা করে জাকাত দিতে হবে।
২. ব্যবসার মালের মূল পুঁজি ও লভ্যাংশ যা বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয় করার পর বছরান্তে অবশিষ্ট থেকে যায়, ওই পুঁজি এবং লভ্যাংশের উভয়ের উপর জাকাত ওয়াজিব হয়।
উদাহরণত, কোনো ব্যক্তির ব্যবসার মূল পুঁজি হলো দশ লাখ টাকা এবং সারা বছরে লাভ হয়েছে ১ লাখ টাকা এবং লভ্যাংশ থেকে খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে চল্লিশ হাজার টাকা আর বাকি থাকছে ষাট হাজার টাকা। এখন বছরান্তে দশ লাখ ষাট হাজার টাকার উপর জাকাত ফরজ হবে।
৩. জাকাত দেওয়ার জন্য বছরের শেষে পূর্ণ ব্যবসার পুঁজি এবং নগদ টাকা ও ধারের টাকা হিসাব করা জরুরি এবং নেসাব মতো জাকাত আদায় করাও জরুরি। হিসাব করে সামান্য কিছু টাকা জাকাত বাবদ দিয়ে দিলেই জাকাতের দায়িত্ব আদায় হবে না।
৪. ব্যবসার মালের উপর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য এগুলোর বিক্রয় দর দেখতে হবে; ক্রয়ের দর দেখা হবে না। চাই ব্যবসার মাল স্বর্ণ-রৌপ্য হোক বা অন্য কোনো পণ্যদ্রব্য হোক।
যেমন- ব্যবসার যে মাল মওজুদ আছে তার মূল্য হচ্ছে দশ লাখ টাকা কিন্তু বর্তমান বিক্রয় মূল্য হচ্ছে দশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। তাহলে জাকাত আসবে দশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার উপর।
অথবা ব্যবসার মালের মূল্য দশ লাখ টাকা কিন্তু বর্তমান বিক্রয় মূল্য হচ্ছে নয় লাখ টাকা। তাহলে নয় লাখ টাকার উপর জাকাত ওয়াজিব হবে। দশ লাখ টাকার উপর নয়। যেমনিভাবে ব্যবসার গুদামজাত মালের উপর জাকাত ওয়াজিব হয়, ঠিক তদ্রুপ বিক্রয় মালের যে মূল্য উসুল হয় তার উপরও জাকাত ওয়াজিব হয়।
দোকানে বিদ্যমান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের বিক্রয় মূল্য এবং এগুলোর লভ্যাংশ (যা বৎসরে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয় হওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে) উভয়টার উপর জাকাত ফরজ হবে।
এ ক্ষেত্রে জাকাত আদায়ের মূহূর্তে দোকানে অবস্থিত যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের যে বাজার দর আছে, ওই বাজার দর অনুপাতে এগুলোর বিক্রয় মূল্যের শতকরা আড়াই টাকা হিসাব ধরে জাকাত দিবে।