বাড়ি বানানোর জন্য জমানো টাকায় জাকাত আসবে?

মুফতি আশরাফ জিয়া
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

ইসলাম শুধু ইবাদতের বিধানই দেয়নি, বরং মানুষের সম্পদ ব্যবস্থাপনাকেও সুবিন্যস্ত করেছে। জাকাত হলো সেই ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ধনীদের সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে এবং দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করে।
অনেকেই বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে টাকা জমিয়ে রাখেন এবং ভাবেন, এ ধরনের সঞ্চয়ের ওপর জাকাত ফরজ কি না। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে।
জাকাত ফরজ হওয়ার মৌলিক শর্ত
শরিয়তে জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে—
১. সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের অর্থ)।
২. সেই সম্পদ এক বছর অতিক্রম করতে হবে এবং তা মৌলিক চাহিদার বাইরে অতিরিক্ত হতে হবে।
বাড়ি বানানোর উদ্দেশ্যে জমানো টাকার বিধান
যদি কেউ বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা জমা করে এবং সেই টাকা এক বছর অতিক্রম করে, তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে। কারণ এটি এখনো ব্যক্তির প্রয়োজনীয় খরচে ব্যবহৃত হয়নি, বরং সঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। শরিয়তে এমন সঞ্চিত সম্পদের ওপর প্রতি বছর ২.৫% হারে জাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক।
যখন জাকাত ফরজ নয়
যদি কেউ জমি বা বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে ফেলে এবং তা ব্যবহার শুরু হয়ে যায়, তবে সেই টাকার ওপর আর জাকাত ফরজ হবে না। কারণ তখন তা নগদ সঞ্চয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না, বরং ব্যবহৃত সম্পদে পরিণত হবে।
একজন মুমিনের জন্য জাকাত শুধু একটি আর্থিক লেনদেন নয়, বরং আত্মশুদ্ধির একটি উপায়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয় এবং সমাজের অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হয়।
তাই বাড়ি নির্মাণের উদ্দেশ্যে হলেও জমিয়ে রাখা অর্থের জাকাত যথাযথভাবে আদায় করা উচিত, যেন আল্লাহর দেওয়া সম্পদে বরকত আসে এবং সামষ্টিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
সূত্র: আদ দুররুল মুখতার: ৩/২২১, হিদায়া : ২/৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৬১
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম, ঘাটারচর, মোহাম্মদপুর