Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নিতে পারি

Icon

বিলকিস নাহার মিতু

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম

রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নিতে পারি

শাবান মাস প্রায় শেষের পথে। রমজানের আর বেশি দিন বাকি নেই। অর্থাৎ, মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। 

মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত, বরকত ও নাজাত পেতে হলে আমাদেরকে এখনই নিতে হবে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি। এখন যত ভালো প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করবো রমজান মাসে সিয়াম সাধনাও ততো মজবুত হবে আমাদের। 

হযরত মোহাম্মদ (স.) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনও ভালো কাজ বা আমল যদি উত্তম উপায়ে করে; তবে সে আমল বা কাজ আল্লাহ তায়ালা পছন্দনীয় হিসেবে গ্রহণ করেন। (তাবারানি) 

সাহাবিদের জীবনী পড়লে দেখা যায় রমজান উপলক্ষে তারা ইবাদতের পরিকল্পনা করতেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে, রমজান মাস, এতে মানুষের পথপ্রদর্শক ও সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন। এবং ন্যায় অন্যায়ের মীমাংসারূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিলো। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে- কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। আর যে রোগী বা মুসাফির তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, যাতে তোমরা নির্ধারিত দিন পূর্ণ করতে পার ও তোমাদেরকে সৎ পথ পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে পার, আর তোমরা কৃতজ্ঞ হলে হতে পার। (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

 একজন মুমিনের জন্য রমজান মাসের প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

রমজানের প্রস্তুতি: রমজানের প্রস্তুতি নিতে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি

১. নিয়ত করা:

রোজা রাখার জন্য সর্বপ্রথম মানসিক ভাবে আমাদের নিয়ত করতে হবে যেন সুস্থভাবে সম্পূর্ণ রোজা রাখা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজাগুলো রাখে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। 

রাসুল (স.) আরও বলেছেন, তাদের জন্য দুর্ভাগ্য যারা রমজান মাস পেলো কিন্তু গুনাহ মাফ করাতে পারলো না।

২. তওবা করা:

তওবা করা ওয়াজিব। অতীতের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে যেন পূত-পবিত্র ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে রমজানে আল্লাহর আনুগত্য করা যায়। 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার। (সুরা আন-নূর, আয়াতা: ৩১) 

নবী করিম (স.) বলেছেন, হে লোকেরা, আপনারা আল্লাহর কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি। (ইমাম মুসলিম, ২৭০২) অর্থাৎ, রমজানে অবশ্যই বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার আদায় করতে হবে।

৩. রমজানের আগমনে খুশি হওয়া:

রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে রাখা হয়। তাই রমজানের আগমনে সকলের খুশি হওয়া উচিত। একজন মুসলমানের জন্য রমজান মাস হলো আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। 

পবিত্র কুরআনে আছে, তাদের বলে দাও, আল্লাহর এই দান ও রহমতের প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; তা দুনিয়াবি সম্পদ হতে বহুগুণে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮)

৪. শাবান মাসে রোজা রেখে প্রস্তুতি আরম্ভ:

আমাদের সবার উচিত রমজান মাসের প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাস থেকেই রোজা শুরু করা। হাদিসে এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এমনভাবে রোজা পালন করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোজা ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে রোজা ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোজা পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ (স.) কে রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক রোজা পালন করতে দেখিনি। (বুখারি ১৮৬৮, মুসলিম, ১১৫৬)

হজরত উসামাহ্ ইবনে যায়িদ (রা.) বর্ণনা করেছে, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এতো রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন রাসুল (স.) বলেন, এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস, যখন মানুষ গাফিল হয় এবং এমন মাস যখন আমল সমূহ রাব্বুল আলামিনের কাছে উঠানো হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে আমার আমল আমি রোজা পালনরত অবস্থায় উঠানো হবে। (নাসাই ২৩৫৭)

৫. কুরআন তেলাওয়াত চর্চা করা:

রমজান মাসকে বলা হয় কুরআন নাজিলের মাস। কুরআন তেলওয়াত করা সুন্নত এবং শোনাও। রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলওয়াত করতে হবে। সাহাবিরা অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে দ্বিগুণ কুরআন খতম দিতেন। 

হজরত সালামাহ ইবন কুহাইল বলেছেন, (রমজানের আগে) শাবান মাসকে ক্বারীগণের মাস বলা হতো। 

হজরত আবু বকর আল-বালাখি বলেছেন, রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস, শাবান মাস হলো ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হলো ফসল তোলার মাস। তাই বেশি বেশি আল্লাহর কালাম পাঠ করতে হবে।

৬. ভাঙতি রোজার কাজা আদায়:

পূর্বের বছরের ফরজ রোজা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে আদায় না হলে সেটা আদায় করে নিতে হবে। বিশেষ করে মা-বোনদের ভাংতি রোজা থাকতে পারে তার কাজা আদায় করে নেয়া উচিত। 

হজরত আবু সালামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি হজরত আয়েশা (রা.) বলতে শুনেছি- আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকতো যার কাজা আমি শাবান ছাড়া আদায় করতে পারতাম না। (বুখারি ১৮৪৯, মুসলিম ১১৪৬)

৭. অন্যায় থেকে বিরত থাকা:

ছোট-বড় সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। শির্ক থেকে মুক্ত থাকা ও হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত থাকা উচিত। কারো হক নষ্ট হয় এমন কাজ করা অনুচিত। রমজানের ইবাদত নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কা জনক কাজ পরিহার করতে হবে।

৮. পারিবারিক ভাবে রমজানের প্রস্তুতি:

পরিবারের সকল সদস্য একত্রে রোজার বিধি-বিধান আলোচনা করা ও সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। ছোট শিশুদের রমজানে রোজা রাখতে উৎসাহিত করতে হবে।

৯. মাসয়ালা-মাসায়েল জানা:

রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নিতে হবে এবং রমজানের ফজিলত সম্পর্কে অবগত হতে হবে। পূর্নাঙ্গ ইলম অর্জন করতে হবে রমজানের ব্যাপারে।

১০. ইসলামি বই পড়া:

ইসলামি বই সংগ্রহ করতে হবে এবং পড়তে হবে ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান আহরন করার জন্য। এছাড়া মসজিদের ইমামাকে বই হাদিয়া দিতে হবে যেন তিনি মুসল্লীদের শোনাতে পারেন এবং বাকিদের উৎসাহী করতে পারেন বই পড়ার ব্যাপারে।

এছাড়া রমজানের বিশেষ তিনটি আমল হলো কম খাওয়া, কম ঘুম ও কম কথা বলা। সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যথাযথভাবে রোজা রাখার দাওফিক দিন। আমিন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম