শাবান মাসে যেভাবে নেবেন রমজানের প্রস্তুতি

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম

আরবি ক্যালেন্ডারে এখন শাবান মাস। আসছে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস রমজানুল মোবারক। শাবান মাসে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) রমজানের আগমনের জন্য দিনক্ষণ গণনা করতেন।
এ মাসের পূর্ণ নাম হচ্ছে ‘আশ শাবানুল মুয়াজ্জাম তথা মহান শাবান মাস’। এ মাসে রাসূল (সা.) বেশি বেশি ইবাদত পালন করতেন।
রমজানের গুরুত্বের জন্য প্রিয় নবী (সা.) উম্মতকে শাবান মাসের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন, যেন রমজান আগমনের বিষয়ে সন্দেহে পতিত হতে না হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখ। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, ২/১০৩)।
রমজান মানেই সওয়াবের অনন্ত উৎসধারা। নেক আমলের ভরা বসন্ত। রমজান মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের মাস।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা যুমার, আয়াত নং ৫৩।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবানের পূর্ণ মাসই রোজা রাখতেন। তিনি শাবানের রোজা রাখতেন, তবে অল্প কিছু দিন (রাখতেন না)। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, বায়হাকি, মিশকাত, মুসনাদে আহমাদ)। তাই এ মাসে রোজার প্রস্তুতি হিসাবে আমাদের উচিত রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা।
রমজানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। আমরা সাধারণ মানুষ অনেক সময় ইমাম সাহেবকে বলি, হুজুর দ্রুত পড়ুন। কারণ আমরা নিজেরা বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত যেমন শিখি না, তেমনি আমাদের মাতৃভাষায় না হওয়ায় তা অনুধাবনও করি না। অথচ কুরআন শুধু একটি গ্রন্থ বা ধর্মগ্রন্থই নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। রমজান মাসেই অবতীর্ণ হয় এ মহাগ্রন্থ আল কুরআন।
আসুন আমরা কুরআন তেলাওয়াত শিখি; অল্প করে হলেও অনুবাদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। এ মাসকে কেন্দ্র করে যা হতে পারে আমাদের রমজানে তারাবির নামাজে একাগ্রতার প্রতীক। ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো রোজা। রোজা ফারসি শব্দ। সাওম হলো তার আরবি প্রতিশব্দ, যার অর্থ বিরত থাকা। অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যাবতীয় গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা।
এ রোজা পূর্ববর্তী নবিদের ওপরও ফরজ ছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা খোদাভিরু হতে পার।’ (সূরা বাকারা-১৮৫)।
রোজার বিনিময় সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)। দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজে অনেকেই শারীরিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামের এ বিধান পালনে উদাসীনতা দেখান।
তাদের জন্য এ মাস থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কেননা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া একটি রোজা পরিত্যাগের শাস্তি একাধারে ৬০টি রোজা রাখা; যা পালন করা আরও অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
এ মাসে আমাদের প্রস্তুতি যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন; যাতে আমাদের রমজানের প্রস্তুতি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী হয়, আমরা যেন অতিরঞ্জিত কিছু করে না ফেলি, যা সুন্নতের পরিপন্থি।
রাসূল (সা.) সাহাবিদের রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রদান করতেন। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, রমজান বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন।
এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ থেকে)। (নাসায়ি, হাদিস ২১০৬)।
এ জন্য রমজান আসার আগেই নিজেকে মানসিক, শারীরিক ও সর্বোতভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। মহামূল্যবান এ মাসকে কীভাবে অধিক ইবাদত বন্দেগিতে কাটানো যায়?
সে প্রস্তুতি এখন থেকেই নেওয়া প্রয়োজন।