Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

প্রতিরাতে ‎নবীজি (সা.) যেসব আমল করতেন

Icon

মাওলানা তানবির শেখ

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

প্রতিরাতে ‎নবীজি (সা.) যেসব আমল করতেন

‎মুমিন বান্দার ইবাদতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো রাত। রাতে ঘুমানোর আগে নবীজি (সা.) সাধারণত যে আমলগুলো করতেন, আজকে আমরা সেই সম্পর্কে জানবো।

‎১. ওজু করা

রাতে ঘুমানোর আগে ওজু করা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে দুটি নেয়ামত অর্জিত। হাদিসে এসেছে- হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের শরীরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। আর যখন আল্লাহর কোনো বান্দা ওজু করে বিছানায় ঘুমাতে যায়, আল্লাহ ওই ব্যক্তির সঙ্গে (তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনায়) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। ঘুমের মধ্যে ওই বান্দা যখনই নড়াচড়া করে কিংবা এপাশ-ওপাশ করে তখনই ওই ফেরেশতা তার জন্য এ বলে দোয়া করে- ‘اللّهُمّ اغفر لعبدك (আল্লাহুম্মাগফির লি-আবদিকা) হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিন।‘ কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমিয়েছে।" (তাবারানি, ইবনে হিব্বান)

২. আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা

ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। 

হাদিসের পুরো বর্ণনাটি এমন- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একবার দেখতে পেলেন একজন ব্যক্তি সাদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব! তখন ওই ব্যক্তি বলল যে, সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়াবশত আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। 

পরদিন সকালে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল অপরাধীকে কী করেছো? আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানালেন। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে। এভাবে ওই চোর পরপর ৩দিন সাদকার মাল চুরি করতে আসে। 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)ও তাকে প্রত্যেকবার ছেড়ে দেন। সর্বশেষ সে (ওই চোর) তাকে আয়াতুল কুরসির আমলের কথা বর্ণনা করে। (আয়াতুল কুরসির ফজিলত এভাবে বর্ণনা করে): ‘আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব; যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন?’ 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সেটা জানতে চাইলে (ওই) চোর বললো, রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (اللّهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ) পড়বে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি জান সে কে?’ 

আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। (সহিহ বুখারি)

‎‎৩. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত

‎রাতের বেলায় ভয় ও অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বাঁচতেও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের আমল কার্যকরী। যা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টিতা থেকে মুক্তি দেয়। 

হাদিসে এসেছে: হযরত আবু মাসউদ বদরি (রা.) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি তেলাওয়াত করবে, তার জন্য এ দুটিই যথেষ্ট। (বুখারি)

অর্থাৎ সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটির তেলাওয়াত সে রাতের অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। 

‎৪. সুরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাস ৩ বার পড়া

‎নিরাপত্তার জন্য এ তিন সুরার আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস ৩বার পড়বে; এগুলোই তার সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট হবে। (সহিহ বুখারি)

‎‎হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহিহ বুখারি)

৫. সুরা ফাতিহা ও সুরা কাফিরূন পড়া

‎‎সুরা কাফিরূন রাতের বিশেষ আমল হিসেবে পরিচিত। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে: এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমাকে ঘুমের আগে পড়ার জন্য কোনো দোয়া বলে দিন। তখন তিনি ‘সুরা কাফিরূন’ পড়তে আদেশ দেন এবং বললেন এটা শিরক থেকে মুক্তিপত্র। (আবু দাউদ; তাবারানি, তাফসিরে ইবনে কাসির)

‎৬. তিন তাসবিহ পড়া

‎রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩ তাসবিহ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। 

হাদিসে এসেছে: হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যেক নামাজের পর তাসবিহ পড়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘فَسَبِّحْهُ عِدَّةَ السُّجُود’ দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন। এর মানে ‘এবং সেজদাসমূহের সমাপ্তির পর’ অর্থাৎ নামাজ শেষে তাসবিহ পড়। (সহিহ বুখারি)

‎৭. ঘুমানোর সময় দোয়া পড়া এবং ডান কাতে শোয়া

‎اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَ أَحْيَا (উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া’)

‎অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি এবং জেগে ওঠি।’

তাই আমাদের উচিত রাতে ঘুমানোর আগে ইখলাসের নিয়তে উল্লেখিত আমলগুলো রাতে নিয়মিত করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ হাসিল করা। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন!

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম