![মিথ্যা বলা কখন জায়েজ?](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2025/02/06/Untitled-6-67a4c686808d9.jpg)
মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়। একটি মিথ্যা থেকে শতশত পাপের সূত্রপাত হয়। তাই খুব সাধারণ বিষয়েও মিথ্যা কথা বলা ঠিক নয়। এতে করে যে কেউ ধীরে ধীরে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন মিথ্যা কথা বলতে আর দ্বিধাবোধ করে না। যে কোনো বিষয়ে মুখ দিয়ে অকপটে মিথ্যা বের হয়ে আসে।
মিথ্যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই কেবল ঘৃণা করা হয় না বরং সব বর্ণের-ধর্মের মানুষ মিথ্যাকে ঘৃণা করে। যারা কোনো ধর্ম মানে না, তারাও মিথ্যাকে ঘৃণা করে। যারা অনর্গল মিথ্যা বলে, তারাও মিথ্যাকে ঘৃণা করে। মিথ্যাবাদীও চায়, অন্যেরা তার সঙ্গে সত্য কথা বলুক।
তবে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তিনটি ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে মিথ্যা বলার অবকাশ রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে- এসব ক্ষেত্রে সত্য কথাটিই ঘুরিয়ে বলতে হবে। পুরোপুরি মিথ্যা বলা যাবে না।
হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ক্ষেত্র ছাড়া মিথ্যা বলা বৈধ নয়- ১) মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলা। ২) যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা এবং ৩) স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মিথ্যা বলা।’ (আবু দাউদ: ৪৯২১)
এক) স্ত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বলার অর্থ হলো- তাকে গুরুত্ব দেওয়া, আপন করে নেওয়া, অন্তরে যতটুকু ভালোবাসা আছে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা, এর মাধ্যমে স্থায়ী সম্পর্কের প্রচেষ্টা করা এবং তার চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা করা।
দুই) যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অর্থ হলো- নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা, সঙ্গীদের মনোবল বাড়াতে উৎসাহব্যঞ্জক কথা বলা এবং এর মাধ্যমে শত্রুকে ধাঁধায় ফেলে দেওয়া। এ কারণেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যুদ্ধ ধোঁকার নাম।’
তিন) পরস্পরের মধ্যে সংশোধনের জন্য মিথ্যা বলার অর্থ হলো- দু ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলার বিষয়টি একজনের পক্ষ থেকে আরেকজনের কাছে কল্যাণ ও সৌন্দর্য হিসেবেই পৌঁছে৷ তাই মধ্যস্থতাকারী শুধু মীমাংসার জন্য প্রয়োজনে মিথ্যা বলতে পারে৷ (শারহুস সুন্নাহ ১৩/১১৯)
হাদিসে বর্ণিত এই তিন ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় মিথ্যা বলা জায়েজ নাই বরং হারাম। (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৪২৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ২/৬৩১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ৪/৩৪৬ পৃষ্ঠা৷)
উল্লেখ্য, উপরোক্ত তিন ক্ষেত্রেও এমন কোন মিথ্যা বলা জায়েজ হবে না, যা ফেতনার আশংকা সৃষ্টি করে। যেমন, কোন কাজ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করার পর কাজটি করা সত্ত্বেও ‘করে নি’ বলে দেওয়া, যা স্পষ্টই মিথ্যা ও ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত, এমন করা যাবে না।
একইরকম হাদিস ইমাম তিরমিজির বর্ণনায়ও এসেছে। হাদিসটি হলো- ‘তিনটি ব্যাপার ছাড়া মিথ্যা বলা বৈধ নয়। তা হলো- স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে স্বামীর মিথ্যা। যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যা বলা। মানুষের মাঝে সম্প্রীতি তৈরি করতে মিথ্যা বলা।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৯৩৯)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিস দ্বারা (বিশেষ প্রয়োজনে) মিথ্যা বলার অবকাশ রয়েছে ঠিক, তবে তা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা উত্তম।’ আর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) বলেন, যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যা বৈধ হওয়ার অর্থ হলো- ‘কৌশল’ অবলম্বন করা বৈধ। কেননা প্রকৃত মিথ্যা বৈধ হয় না।’ (আবুল ফজল জাইনুদ্দিন আবদুর রহিম ইরাকি, তরহুত-তাসরিব ফি শরহিত-তাকরিব: ৭/২১৫)
লক্ষণীয় হলো, হাদিসে তিন ক্ষেত্রে মিথ্যার অবকাশ দেওয়া হলেও তাকে ‘মিথ্যা’ই বলা হয়েছে। সত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আর মুহাদ্দিসরা তার ব্যাখ্যায় বলেছেন কৌশল অবলম্বন করার কথা। সুতরাং আমাদের উচিত নানা অজুহাতে মিথ্যার চর্চা না করে সর্বতোভাবে তা পরিহার করা।