‘খোলা তালাক’ কাকে বলে? এর হুকুম কী
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২০ পিএম
খোলা হচ্ছে: কোন কিছুর বিনিময়ে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে স্বামী সে বিনিময়টি গ্রহণ করে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে; এ বিনিময়টি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহরানা হোক কিংবা এর চেয়ে বেশি সম্পদ হোক কিংবা এর চেয়ে কম হোক।
স্বামীর পক্ষ থেকে যে তালাক দেওয়া হয় সেটাকে তালাক বলা হয়।
আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাজি বা তার স্থলাভিষিক্ত কারো নিকট তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে মালের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খোলা বলে।
এ বিধানের দলিল হচ্ছে, আল্লাহ্র বাণী: ‘আর তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো (বিদায় করার সময়) তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তবে এটা স্বতন্ত্র, স্বামী-স্ত্রী যদি আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না বলে আশংকা করে, তাহলে এমতাবস্থায় যদি তোমরা আশংকা করো, তারা উভয়ে আল্লাহ্ নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে স্ত্রীর কিছু বিনিময় দিয়ে তার স্বামী থেকে বিচ্ছেদ লাভ করায় উভয়ের কোন গুনাহ নেই।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২৯)
সুন্নাহ্ থেকে এর দলিল: সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্মাসের স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও’ (সহিহ বুখারি ৫২৭৩)
এই ঘটনা থেকে আলেমরা গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সঙ্গে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিবেন।
এর পদ্ধতি হচ্ছে- স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খোলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।
খোলা তালাক যদি স্বামীর দোষের কারণে হয়ে থাকে তাহলে তালাকদাতার জন্য খোলার বিনিময়ে স্ত্রী থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর স্ত্রীর দোষের কারণে হয়ে থাকলে মহর সমপরিমাণ নেওয়া বৈধ হবে। এরচেয়ে বেশি নেওয়া মাকরূহ বা অনুত্তম হবে।
প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘খোলা তালাক যদি মহিলার দোষের কারণে হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর জন্য তার থেকে যা নিবে তা বৈধ হবে। আর যদি স্বামীর দোষে হয় তাহলে স্ত্রী থেকে যা নিবে তা বৈধ হবে না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ১১৮২৫)
আর ইমাম যুহরী রহ. বলেন, ‘তালাকের বিনিময়ে স্ত্রী থেকে কিছু নেওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হবে না যতক্ষণ না অবাধ্যতা স্ত্রীর পক্ষ থেকে না হবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, অবাধ্যতা কখন সাব্যস্ত হবে? তিনি বললেন, সে যদি স্বামীর সাথে বিদ্বেষ প্রকাশ করে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তার প্রতি অপছন্দ প্রকাশ করে ও তার হুকুম অমান্য করে।
খোলার হুকুম
খোলা করার দ্বারা বায়িন তালাক পতিত হয়।সাধারণত এক তালাকে বাইনই পতিত হবে,তবে তাতে তিন তালাকের নিয়ত ও বিশুদ্ধ হবে।
যদি কেউ কোনো নারীকে বারবার বিয়ে করে।এবং প্রত্যেকবারই বিয়ের করার পর খোলা করে নেয়।তাহলে ওই স্বামীর জন্য খোলাকৃত স্ত্রীকে তিনবার খোলার পর আর বিয়ে করা যাবে না।
হ্যাঁ, তিনবার খোলা করার পর যদি ওই স্ত্রী অন্য স্বামীকে গ্রহণ করে অতঃপর ওই দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়,তাহলে ওই নারীর জন্য দ্বিতীয়বার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৮৮)
অনুরূপ যদি স্বামী তিন প্রথমবার খোলা করার সময় তিন তালাকের নিয়ত করে তাহলে তিন তালাকে বাইন-ই পতিত হবে।
খোলা করার পর ইদ্দতের ভেতর বা বাহির যেকোনো সময় স্বামীর জন্য ওই খোলাকৃত স্ত্রীকে আবার বিয়ে করা জায়েজ।তবে এক্ষেত্র নতুন মোহর এবং দুইজন সাক্ষী থাকা শর্ত।