যেসব আমলে সমস্যা সমাধান হয়
মুহাম্মদ মিযান বিন রমজান
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম
আমরা কেউই সমস্যায় পড়তে চাই না। আমাদের চারপাশে এমন কাউকে খুঁজে পাবো না, যার কোনো ধরনের সমস্যা নেই। এমনকি নবী রাসুলরাও কোনো না কোনো সমস্যায় পড়েছিলেন। তাহলে আমরা কেন সমস্যা বা বিপদাপদ মুক্ত থাকতে চাই? তার মানে সমস্যা মুক্ত থাকতে চাওয়াটাই আরেক বড় সমস্যা।
অবাক হওয়ার মতো বাস্তব কথা হলো সমস্যা বা বিপদাপদ হতে পারে আপনার জন্যে আশীর্বাদস্বরুপ। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যখন তার কোন বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি থাকে। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৯৬)
আর কোনো সমস্যায় পড়তে চাই না। এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন বাকি জীবনের জন্যে। সমস্যার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই হলো বড় সমাধান।
মাঝেমধ্যে ভাবুন- হযরত আইয়ুব আ. এর জীবনী নিয়ে। সময়ের পরিক্রমায় বউ-বাচ্চা, ধন-দৌলত স্বজন পড়শী সবাই হারিয়ে যায়। সেই ভয়ানক পরিস্থিতিতে আইয়ুব আ. কি করেছিলেন? (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১/৮৫৮)
আপনি যে সমস্যায় হিমশিম খাচ্ছেন সেটি আপনার পাশের কাউকে বলুন। দেখবেন সে কতো সহজে আপনাকে সমাধান বাতলে দিচ্ছেন। এমনকি আপনিও আপনার বন্ধুর যে কোনো সমস্যা নিমিষে মুখেমুখে সমাধান করে দিতে পারছেন। এমন হবার পেছনে যুক্তি হলো অন্যের বেলায় আমরা আবেগতাড়িত হয়ে ভেঙে পড়ছি না। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে সমস্যার সহজ সমাধান বের করছি। এই সূত্র দিয়েই নিজের সমস্যা সমাধান করুন। আবেগতড়িত না হয়ে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগান।
মনেমনে কল্পনা করুন মুসা আ. এর জীবনকথা। জন্মের পর থেকে তিনি কতোশতো সমস্যায় নাই পড়েছেন!? সবকিছু থেকে মুক্ত হবার পরও “ময়দানে তীহ”-তে বহুদিন উম্মতসহ বন্দি থাকতে হয়েছে। (সুরা মায়েদা, আয়াত ২৫-২৬, তাফসীরে ইবনে কাসীর)
মনে রাখতে হবে সমস্যা আসা মানে বড় কোনো কাঙ্খিত বস্তু আপনার জীবনে আসছে। ছোট বড় যে কোনো সমস্যা আপনার অলসতা দূর করে দেয়, ঘুম ভেঙে দেয়। কেননা এই ক্ষেত্রে আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধু হলো সুস্থ চিন্তাশক্তি।
নিজেকে শক্ত রেখে সমাধানের পথ খোঁজতে হবে এবং পাশাপাশি কিছু দোয়া-দরুদ পড়তে হবে। সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ কষ্টে কিংবা সমস্যায় পড়লে দোয়া ইউনুস পড়তেন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫০০)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো কঠিন সমস্যা বা বিপদের সম্মুখীন হতেন তখনই তিনি আল্লাহর কাছে একান্তভাবে দোয়া প্রার্থনা করতেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালায়ি ওয়া দারাকিশ শিক্বায়ি ওয়া সুয়িল কাদ্বায়ি ওয়া শামাতাতিল আদায়ি। (সহীহ বুখারী : ৬৩৪৭)
আসমা বিনতে উমাইর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেবো না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে, সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন, নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহু রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান।(সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৫)