Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কিয়ামতের পূর্বলক্ষণ: সময় সংকীর্ণতার বাস্তবতা

Icon

মোহাম্মদ ইমতিয়াজ উদ্দিন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম

কিয়ামতের পূর্বলক্ষণ: সময় সংকীর্ণতার বাস্তবতা

সময় মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সময়ের সঠিক ব্যবহার আমাদের জীবনের গতি, মান এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। ইসলামে সময় ব্যবস্থাপনা ও তার বরকতের গুরুত্ব অপরিসীম। 

সময়ের অপব্যবহার থেকে বাঁচতে নবী করিম (সা.) বিভিন্নভাবে মুসলিম উম্মাহকে সচেতন করেছেন। বিশেষ করে কিয়ামতের পূর্বে সময় সংকীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন, কিয়ামতের আগে সময় দ্রুত চলে যাবে, এক বছর এক মাসের মতো, এক মাস এক সপ্তাহের মতো এবং একদিন এক ঘণ্টার মতো অনুভূত হবে (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)। 

এর অর্থ সময়ের বরকত কমে যাওয়া। বর্তমান সমাজে সময় দ্রুত চলে যাওয়ার অনুভূতি আমাদের জীবনযাপনে স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) এই পরিস্থিতিকে তার যুগেও উপলব্ধি করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, ইমাম মাহদীর শান্তিপূর্ণ শাসনামলে মানুষ এমনটাই অনুভব করবে, যখন সুখের মুহূর্তগুলো সময়কে আরও সংকীর্ণ মনে করাবে। আবার কেউ কেউ একে কিয়ামতের অতি নিকটবর্তী লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের আগে জ্ঞান হারিয়ে যাবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, ফিতনার বিস্তার ঘটবে, এবং খুনখারাবি বেড়ে যাবে (বুখারি, হাদিস : ১০৩৬)। 

এ সময়ের সংকীর্ণতা ও বিশৃঙ্খলার পেছনে মানুষের নৈতিকতা ও ধর্মীয় চেতনার ঘাটতি স্পষ্টত প্রতিফলিত হয়। এগুলো কেবল কিয়ামতের লক্ষণ নয়, বরং আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আত্মসমালোচনা করার একটি বার্তাও বটে।

একটি বিখ্যাত হাদিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করার জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন: যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, স্বচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে এবং জীবনকে মৃত্যুর আগে। (আত্ তারগিব ওয়াত তারহিব ৩৩৫৫)। 

প্রতিটি নির্দেশনা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কাজে লাগানোর আহ্বান জানায়। "যৌবনকাল ইবাদতে কাটানো ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিনে মহান আল্লাহর নিকট বিশেষ ছায়া লাভ করবেন (বুখারি ৬৬০)। 

সুস্থতাকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে ইবাদতে ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কারণ সুস্থ অবস্থায় ইবাদত সহজ এবং গ্রহণযোগ্য। দারিদ্র্যের আগে ধনসম্পদকে ভালো কাজে ব্যয় করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, কেননা সম্পদ থাকলেও তা যে সবসময় থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই (সুরা বনি ইসরাইল : ৩০)। 

অবসরকে মূল্যায়ন করে ব্যস্ততার আগে কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ, মৃত্যুর পূর্বে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীমে (সুরা জুমুআ : আয়াত ৮)।

উপরোক্ত হাদিস ও কুরআনের আলোকে আমাদের শিক্ষাগুলো পর্যালোচনা করলে আমরা বুঝতে পারি,  জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সময়ের সঠিক ব্যবহার আমাদের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার এই যে, বিভিন্ন সময়নাশকারী বিষয় ও সময়ের অপচয় আমাদের সময় ব্যবস্থাপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। 

সময়ের অপচয় হলো সময় সংকীর্ণ অনুভূত হবার পেছনের মূল রহস্য। আর বিশেষত সোশাল মিডিয়া আমাদের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করার জন্য শয়তানের এক শক্তিশালী মাধ্যম। তাই সোশাল মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। এই শেষ সময়ে ইসলামের শিক্ষাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বরকত ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাই আমাদের জীবনে শান্তি বয়ে আনতে পারে।

‘সময়ের সংকীর্ণতা’ নামক এই কিয়ামতের লক্ষণটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা বহন করে। সময়ের বরকত ফিরিয়ে আনতে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সময়ের অপচয় কমাতে হবে। 

ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনকে মূল্যায়ন করতে পারলেই আমরা সফলতা ও শান্তি অর্জন করতে পারবো ইনশাল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সময়ের সঠিক ব্যবহারে সচেতন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম