প্রশ্ন: আমি একজনের কাছ থেকে একটা তাবিজ আনি। সেটাতে পেরেক, সরিষার তেল, একটা কাগজে আরবি লেখা। এটা কি জায়েজ?
উত্তর: পেরেক, সরিষার তেল, কাগজে লেখা এসব মূল সমস্যা নয়। কারণ, এগুলো মূলত ব্যবহার-পদ্ধতি। আসল বিষয় হল, তাবিজ দুই প্রকার। ১. শিরকি তাবিজ। ২. জায়েয তাবিজ।
সুতরাং আপনাকে দেখতে হবে, আপনি যে তাবিজগুলো এনেছেন, সেগুলো কোন প্রকারের তাবিজ? বিষয়টা আপনার কাছে বোধগম্য না হলে প্রয়োজনে কোনো মুহাক্কিক আলেমকে দেখাতে পারেন।
কেননা, পবিত্র কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম বা দুআয়ে মাসুরা থাকলে তা শিরকি তাবিজ হয়না; বরং তা জায়েয তাবিজের আওতায় পড়ে। এ জাতীয় তাবিজের ব্যবহার সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিঈনে কেরাম থেকেও প্রমাণিত।
যেমন-
১.আমর ইবনে শুআইব তার পিতা ও তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন-তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) তার উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৮৯৫)
২.সাঈদ ইবনে যুবাইর (রা.)এর নিকট কেউ এসে তাবিজ চাইলে তিনি তাকে তাবিজ লিখে দিতেন।(মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ২৩৫১১)
৩. বিখ্যাত তাবিঈ আতা ইবন আবী রাবাহ (রহ.) সাঈদ ইবন মুসাইয়াব (রহ.) ইবন সীরীন (রহ.) মুজাহিদ (রহ.) প্রমূখ ফতওয়া দিতেন,তাবিজ কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম বা দুআয়ে মাসুরা দ্বারা হলে কোনো অসুবিধা নেই।(ইনাম নববীকৃত আলমাজমূ’ ৯/৭৪,মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৫/৪৩-৪৪, কিতাবুত্তিব্ব ৪৩৯/৩২৬১)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন- বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েজ। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৯/৬৪)
কোনো বৈধ প্রয়োজনে কোরআন শরিফের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া, জিকির বা সঠিক অর্থবহ কোনো দোয়া ইত্যাদি সংবলিত তাবিজ ব্যবহার বৈধ।
শর্ত হলো, তাবিজকে সত্তাগত শক্তিতে প্রভাব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে না। বরং আল্লাহ তাআলার হুকুমে কাজ হওয়ার আশা রাখবে। তবে শিরকি শব্দ, কুফরি কালাম বা অনর্থক লেখা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ নয়। (মুসলিম, হাদিস : ২২০০, তাকমিলা : ৪/৩২৬, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬৯৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১/৬৪৩-৬৪৪)