ইসলামে নফল নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। নফল নামাজ মুমিন জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায় এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে ।
নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম চাশতের নামাজ । ইশরাক এবং চাশতের নামাজের সময় এক। তবে আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে চাশতের নামাজ পড়া ভালো। সাধারণ নফল নামাজের নিয়মে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায় । এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো।
চাশতের নামাজের রাকাত:
মুআজা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি চাশতের সালাত আদায় করতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন। (মুসলিম, হাদিস: ১৬৯৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮১)
কখনো পড়তেন কখনো ছাড়তেন:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) চাশতের নামাজ এমনভাবে আদায় করতেন যে, আমরা বলতাম (মনে মনে) তিনি এ নামাজ আর ছাড়বেন না। আবার কখনো (ছেড়ে দিতেন। ফলে আমরা বলতাম তিনি এ নামাজ আর পড়বেন না।(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১৩১২, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৭৮৮৮)
চাশতের নামাজের বিশেষত্ব:
আবদুল্লাহ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারীম (সা.) সূর্য হেলার পর থেকে যোহরের পূর্ব পর্যন্ত ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, এ সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। আমার একান্ত ইচ্ছা, এ সময় আমার কোনো সৎকাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছুক। (তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮; শরহুস সুন্নাহ, হাদিস: ৭৯০)
দীর্ঘ কিরাতে নামাজ:
আলি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি যোহরের পূর্বে ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, সূর্য হেলার সময় নবী কারীম (সা.) এ সালাত আদায় করতেন এবং তাতে দীর্ঘ কিরাআত পড়তেন।(সুনানুল কুবরা নাসায়ি, হাদিস: ৩৩৩,শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস:২৮১)
চাশতের জন্য উপদেশ:
আবু হুরায়রা (রা.)বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। ঘুমের আগে বিতর পড়া। চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়া এবং প্রতি মাসে তিনদিন রোজা রাখা। ( সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস:২৫৩৬)
চাশতের নামাজের গুরুত্ব:
আবু জার গিফারি (রা.)থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা,প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা,প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা,প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা ,আমর বিল মা'রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা, অবশ্য চাশতের সময় দু রাকাত নামাজ আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। ( মুসলিম, হাদিস:১৫৪৪)
চাশতের নামাজের ফজিলত:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবু জার (রা.) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন আমি তাকে বলি যে, হে চাচা! আমাকে কল্যাণী উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছো, তেমনি আমিও রাসুলুল্লাহ (সা.)এর কাছে এমনটি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি চাশতের নামাজ দুই রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে গাফেলদের মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যদি চার রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে নেককারদের মাঝে গণ্য করা হবে।
আর যদি তুমি ছয় রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে। আর যদি তুমি আট রাকাত পড়, তাহলে তোমাকে সফলকাম ব্যক্তিদের তালিকায় লেখা হবে। আর যদি দশ রাকাত পড়, তাহলে সেদিন তোমার আমলনামায় কোন গোনাহ লেখা হবে না। আর যদি বার রাকাত পড়, তাহলে তোমার জন্য জান্নাতে তোমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। (সুনানুল কুবরা বায়হাকী, হাদিস:৪৯০৬,মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস :৩৮৯০)