বিদায় হজ সবে মাত্র শেষ হল। নবীজি (সা.) বিদায় হজের ভাষণে উম্মতে মুহাম্মাদীর কর্মপন্থা পরিপূর্ণ রূপে বলে দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও তখন বুঝতে পেরেছিলেন এটাই নবীজির শেষ হজ।
নবীজি মদিনায় ফিরে আসার কয়েক মাস (১১ হিজরী সফর মাস) পরেই অসুস্থতা অনুভব করেন। ইন্তেকালের আগে নবীজি (সা.) তার কলিজার টুকরা মেয়ে হজরত ফাতেমা (রা.)-এর কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।
এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন , নবী (সা.) মৃত্যুর সময় ফাতেমাকে (রা.) ডেকে আনলেন এবং চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন ফাতেমা (রা.) কেঁদে ফেললেন। এরপর নবী (সা.) পুনরায় তাকে ডেকে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হাসলেন। আমরা এই সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী (সা.) যে রোগে আক্রান্ত আছেন, এই রোগেই তার ইন্তেকাল হবে। এ কথা তিনি গোপনে আমাকে বলেছেন। তখন আমি কাঁদলাম। আবার তিনি আমাকে চুপে চুপে বললেন, তার পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি তার সঙ্গে মিলিত হবো। তখন আমি হাসলাম। (সহিহ বুখারি: ৪৪৩৪)
নবীজি (সা.) অন্তিমকালে উম্মতকে অসিয়ত করেন ও বিশেষ আমল শিক্ষা দিয়েছিলেন।
নবীজির অসিয়ত
যথাযথ নামাজ আদায়:
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ইবাদত হল ফরজ সালাত আদায় করা।কেননা কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। প্রত্যাশিত জান্নাতের চাবিও এই নামাজ। নামাজ ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। নবী (সা.) ইন্তেকালের আগ মূহুর্তে উম্মতকে নামাজের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়ে অসিয়ত করেছিলেন।
হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তিম মুহূর্তে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার অসিয়ত এই ছিল যে ‘নামাজ পড়বে এবং তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচার করবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৬৯৭)
অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচার করা:
ইসলাম সাম্য ও মানবতার ধর্ম। ইসলামে সকল নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত। কৃষক, শ্রমিক, দাস-দাসীসহ সকল অধিনস্থদের অধিকার রক্ষায় ইসলাম সোচ্চার।
নবীজি (সা.) ইন্তেকালের আগ মূহুর্তে অধিনস্থদের অধিকার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তাদের প্রতি অবিচার বা জুলুম না করতে অসিয়তও করেছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তিম মুহূর্তে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার অসিয়ত এই ছিল যে ‘নামাজ পড়বে এবং তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচার করবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৬৯৭)
নবীজির শেষ আমল
মেসওয়াক করা:
মেসওয়াক নবীজির সুন্নাহগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম। মেসওয়াকের ফজিলত অনেক। মেসওয়াকে প্রায় সত্তরটি রোগের প্রতিশেধক রয়েছে।আর নবীজি (সা.)-এর সর্বশেষ আমল ছিল মেসওয়াক করা।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) একটি মেসওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে (নবী (সা.) এর অন্তিম অবস্থায়) তার ঘরে প্রবেশ করলেন। নবী (সা.) তার দিকে তাকালেন। (আয়েশা রা.) বলেন, আমি তাকে বললাম, হে আব্দুর রহমান! মেসওয়াকটি আমাকে দাও। সে আমাকে দিয়ে দিল। অতঃপর আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙে ফেলে তা চিবিয়ে নবী কারিমকে (সা.) দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দ্বারা মেসওয়াক করলেন। (সহিহ বুখারি : ৮৯০)
মেসওয়াকের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নামাজ মিসওয়াক করে আদায় করা হয় , সেই নামাজ মিসওয়াক করা বিহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি নেকি হয়। (বায়হাকি, সুনানুল কুবরা :১৫৯ , মুস্তাদরাকে হাকেম: ৫১৫)