বৃষ্টির কারণে চেয়ারে নামাজ, যা বলছেন আলেমরা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সিরাত মাহফিলে অধিকাংশ শ্রোতার চেয়ারে নামাজ আদায়ের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত
টানা বৃষ্টির মধ্যে আয়োজিত এ মাহফিলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেন। মাওলানা আবু তাহের জিহাদির সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব আওলাদে রাসূল সাইয়েদ আনোয়ার হোসাইন তাহের আল জাবেরি আল মাদানী।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররমের খতিব করার জন্যই জাতীয়ভাবে পরিচিত করতে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব আনোয়ার হোসাইন তাহের আল জাবের আল মাদানীকে ঢাকায় এনে এ সম্মেলন করেছে জামায়াত।
তবে এ বিষয়ে আয়োজকদের অন্যতম, জামায়াত নেতা মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানীকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সিরাত মাহফিলে অধিকাংশ শ্রোতা বয়ান শোনার জন্য বিছানো চেয়ারে নামাজ আদায়ের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আলেমদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে নামাজ আদায়ের সমালোচনা করছেন বিভিন্ন ঘরানার আলেম ও নেটিজেনরা।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে মাহফিলের প্যান্ডেলের উপরে ও নিচে ওয়াটারপ্রুফ ম্যাট দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত এমন বড় মাহফিলে শ্রোতারা নিচে বসে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মূল প্যান্ডেলে শ্রোতাদের চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আসর ও মাগরিবের নামাজে অধিকাংশ মুসল্লি চেয়ারে বসেই রুকু-সিজদা আদায় করেন।
এ ঘটনার ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আলেমদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন- একজন সুস্থ মানুষের নামাজে মাটির উপর কপাল দিয়ে সিজদা করা ফরজ, এখানে সিজদা অনুপস্থিত বিধায় ফরজ লঙ্ঘন হয়েছে।
এ বিষয়ে দেশের পরিচিত অনেক আলেম সোশ্যাল মিডিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। সিরাত মাহফিলের আয়োজকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মুসল্লিদের দিকনির্দেশনা দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করছেন তারা। তাছাড়া যারা এভাবে নামাজ আদায় করেছেন তাদের আবার ওই নামাজ কাজা আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন আলেমরা।
দেশের অন্যতম বড় মাদ্রাসা মিরপুরের জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া লিখেছেন, সিরাত মাহফিল! নামাজ কি সিরাতশিক্ষার আলোকে হয়েছে? সিরাত মাহফিলেই যদি নামাজ সিরাতশিক্ষার আলোকে না হয়ে থাকে, তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র কিভাবে সিরাতশিক্ষার আলোকে পরিচালিত করবে?
দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী লিখেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাঠে কাঁদা বা পানির অজুহাতে যারা চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করেছেন; পরিষ্কার ফতোয়া-তাদের নামাজ হয়নি। দেশে ইসলাম নিয়ে তামাশা শুরু হয়েছে।
মিরপুরের আকবর কমপ্লেক্স মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি মাসুম বিল্লাহ লিখেছেন, যারা জমিনে সিজদা করার শক্তি রাখেন তারা চেয়ারে বসে সিজদা করলে নামাজ সহিহ হয় না। এভাবে পড়লে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
জনপ্রিয় আলেম ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার লিখেছেন, নিচে কার্পেট। হাজারো স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও নিজেরা দশ মিনিটে প্রত্যেকে চেয়ার সরাতে সক্ষম। আশেপাশে অসংখ্য মসজিদ! তারপরও হাজার হাজার মানুষ রুকু সিজদা করলেন চেয়ারে বসে! জমিনে ক্বা’দা তথা বসতে এবং সিজদা করতে সক্ষম ব্যক্তি চেয়ারে বসে ক্বা’দা এবং সিজদা করলে আমার জানামতে নামাজ হয় না! সিরাত মাহফিল শরয়ী কোন ইবাদত নয়। আশেপাশে অসংখ্য মসজিদ এবং শত শত মিটার শুকনো রাস্তা থাকতে মাঠে কাদাঁ কিংবা পানি এগুলো শরয়ী কোন ওজর নয়। এজন্য যারা চেয়ারে বসে নামাজ পড়েছেন, তারা দুটি ফরজ ত্যাগ করার কারণে নামাজ হয় নি। জামায়াতের কোন পরিচিত আলেমকে এখনও এ নামাজকে জায়েজ করার কসরত করতে দেখি নি। কিন্তু কয়েকজন দেখলাম এটাকে জায়েজ করার পক্ষে যুক্তি দিয়েই যাচ্ছেন! দয়া করে অফিসিয়াল ঘোষণা দিয়ে দিন যে, এটা উপস্থিত বেখেয়ালে হয়ে গেছে! এতে আপনারা ছোট হবেন না ইনশাআল্লাহ।
আল কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি মাহমুদুল হাসান লিখেছেন, এভাবে নামাজ হবে না। কারণ একজন সুস্থ মানুষের নামাজে মাটির উপর কপাল দিয়ে সিজদা করা ফরজ। এখানে সিজদা অনুপস্থিত বিধায় ফরজ লঙ্ঘন হয়েছে। ১০ মিনিটের মধ্যে চেয়ারগুলো মাঠের একপাশে রেখে কাতার সোজা করে নামাজের ব্যবস্থা করা কঠিন কোন বিষয় ছিল না। নামাজের মধ্যে কিছু কাজ ফরজ, তার মধ্যে অন্যতম হলো সিজদা। এখন আপনি বলুন এই সিরাত মাহফিলের আশপাশের কোন একটি মসজিদ বা জায়গায় ১০-২০ মিনিট হেঁটে গিয়ে হলেও ওয়াক্তের মধ্যে কপালের মাধ্যমে সিজদা করা যেতো কিনা? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়। তবে নিশ্চিত নামাজ হবে না। এখানে ফতোয়ার কিছু নেই। এটাই আল কুরআন ও হাদিসের বিধান। এটা নামাজ নিয়ে মারাত্মক অবহেলা, আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমিন।
আল-মারকাজুল হানাফি বাংলাদেশ মুফতি মোহাম্মদ নোমান কাসেমী লিখেছেন, নামাজের ভেতরে ফরজ হলো ছয়টি। দুটি মুখের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১. তাকবিরে তাহরিমা। ২. কেরাত। দুটি দাঁড়ানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১. কিয়াম, ২. রুকু। দুটি বসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১. সিজদা, ২. কু’দা (আখেরি বৈঠক)। স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে, বিনা ওজরে কেউ যদি এই ছয় ফরজের একটিও ছেড়ে দেয়, তবে তার নামাজ ফাসেদ ও বাতিল হয়ে যাবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশ কিছু সক্ষম, সুস্থ ব্যক্তিবর্গ বিনা কারণে চেয়ারে বসে সিজদা ও বৈঠক করেছেন। আমি বলবো আপনাদের বয়ান শোনা সহিহ হলেও নামাজ সহিহ হয়নি। প্রিয় ভাই!আপনাদের এই নামাজের কি হবে? কত হাজার বছরের বয়ান এক ওয়াক্ত নামাজের সমান হবে?