দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণা দেয় ইসলাম
মুহাম্মদ এনায়েত কবীর
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিতে ভাসছে মানুষ। ডুবছে বাড়িঘর। বিপন্ন অগণিত মানুষের জীবন। ঝুঁকির মুখে গৃহপালিত পশু পাখি ও জীব বৈচিত্র্য। এ অবস্থায় বিবেকবান মানুষ হাত গুটিয়ে বসে নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক সংস্থা ও সংগঠনই ছুটে আসছে বন্য কবলিত এলাকায়।
দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি। বিপন্ন মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইসলামের চিরায়ত শিক্ষা। অতীতে মুসলিম শাসকরা নাগরিকদের দুঃখ কষ্ট লাঘবে রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতেন। অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়ার সহজ উপায়। কুরআন-হাদিসের পাতায় পাতায় মানব ও মানবতার সুরক্ষায় এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
নবীজী বলেন, কেউ যখন অন্যের কল্যাণে নিয়োজিত থাকে তখন আল্লাহ তাআলাও তার কল্যাণে রত থাকেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৭৪৬)
বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ালে শুধু কি দুর্দশা গ্রস্থরাই উপকৃত হন? এতে বরং দাতার ভবিষ্যত হতে পারে নিষ্কণ্টক ও নিরাপদ।
নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ দূর করে দেবেন। (বোখারি: ২৪৪২)।
অন্যের কষ্টে বিবেকবান মানুষ হাত গুটিয়ে বসে থাকেনা। সামর্থের সবটুকু নিয়ে পাশে দাঁড়ায়। বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া অশেষ নেকির কাজ।
নবীজি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দিয়েছে, কেয়ামতের দিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে কেয়ামতের দিন পানি পান করানো হবে। (আবু দাউদ: ১৩৪৬)।
মন দিয়ে দুর্গত মানুষের মানুষের কষ্ট অনুভব প্রতিটি মুমিনের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।
নবীজি ইরশাদ করেন, মুমিনরা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো দেহ সে ব্যথা অনুভব করে। (বোখারি : ৬০১১)।
নবীজি আরও ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন,যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে। (বোখারি: ১৭৩২)।
আল্লাহর সাহায্য ছাড়া জীবনে এক কদম চালাও মুশকিল। বিপন্ন মানুষের সেবায় নেমে আসে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য।
নবীজি ইরশাদ করেন, বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন। (মুসলিম : ২৩১৪)।
মানুষের প্রয়োজন আর বিপদের কোনো শেষ নাই। নিজের প্রয়োজন পূরণ ও বিপদমুক্তির সহজ পথ হল বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ।
নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি অন্য মুসলমানের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তায়ালাও তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি অন্য মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলাও তার বিপদ দূর করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ : ৪)
অথৈ পানিতে লাখো মানুষ ভাসতে থাকলেও অঢেল সম্পদের মালিকরা কি ত্রাণ কাজে নেমেছেন? তেমন কি নজরে পড়ছে? অগণিত মানুষের কষ্টে এখনো কেন এলিট শ্রেণীর মানুষের মন কাঁদছে না? জলে ডুবা মানুষের কষ্টে কেঁদে উঠুক সবার মন। ছুটে আসুক বানভাসি মানুষের পাশে। বেঁচে যাক দূর্গত মানুষ। সমুন্নত হোক আমাদের আমাদের নৈতিকতা ও ঈমান।
লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা ঢাকা-১২১৯