কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা যাবে?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:০২ পিএম
প্রশ্ন: আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান-মাহফিল ইত্যাদি কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করে থাকি। কুরআন আল্লাহ তায়ালার কালাম ও তা তিলাওয়াত করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। তাই সওয়াব ও বরকতের উদ্দেশ্যেই আমরা কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানাদি শুরু করে থাকি।
কিন্তু আরবের কোনো কোনো আলেম বলেন, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা নাকি ঠিক নয়। কেউ কেউ এটাকে বিদআতও বলেন। তাদের বক্তব্য হল, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াতের কোনো প্রমাণ নেই। তাই তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের এ বক্তব্য কি সঠিক? এসব ক্ষেত্রে কুরআন তিলাওয়াতের কী হুকুম? দলীল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
উত্তর: বৈধ কোনো অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েজ এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
এক হাদিসে আছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহর সাহাবীরা যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দ্বীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সুরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোনো সুরা পাঠ করার জন্য।
(মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস ৩২২; আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাআদ ২/৩৭৪; আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বায়হাকী, হাদিস ৪১৯)
খতিব বাগদাদী (রহ.) ‘আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ কিতাবে হাদিস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদিস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হল, মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা।
কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন ... আবু নাযরা (র.) বলেন, রাসুলুল্লাহর সাহাবীরা পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তারা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোনো সুরা তিলাওয়াত করতেন। (আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪)
হাফিয সামআনি (রহ.) ইবনে কাসির (রহ.) ইমাম নববী (রহ.) ও হাফিয সাখাবী (রহ.) প্রমূখ মুহাদ্দিসদের থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তারা এর সপক্ষে এই হাদিসগুলো উল্লেখ করেছেন। (আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতেমলা, সামআনী ১/৪৮; আলবা-ইসুল হাসীস, ইবনে কাসীর ১/১৫৩; ফাতহুল মুগীস ৩/২৫৪; তাদরীবুর রাবী ২/৫৭৩)
আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলিল। যে ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের আমল প্রমাণিত আছে তা কখনো বিদআত হতে পারে না।
সুতরাং অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। এটিকে ভুল বা বিদআত বলা খুবই অন্যায় কাজ।
শায়খ আলবানী (রহ.) বলেন, কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করার মাধ্যমে মজলিস শুরু করার বিষয়টি সালাফে ছালেহীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত (আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, অডিও ক্লিপ নং ৪০২)।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মাজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে। এবং নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।
খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কেরাত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।
গ) শ্রোতারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত থাকে না। তখন তিলাওয়াত করা হয়। এতে মনোযোগসহ শোনা হয় না। তাই এটাও ঠিক নয়।
ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।
ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকা- বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন কারীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
মাসিক আল কাউসার
কুরআনের যে আয়াত শুনে মুগ্ধ হয়েছিল উতবা