পবিত্র কুরআন মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুমিন দিনে-রাতে যখনই সুযোগ পাবে, তখনই কুরআনে কারিমে তেলাওয়াত করবে। এটা বরকমতয় ও সৌভাগ্যপূর্ণ জীবনের দাবিও বটে।
দিন-রাতের যেকোনো সময় কুরআনে কারিম তিলাওয়াত করা গেলেও বিভিন্ন হাদিস থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর বিশেষ কিছু সুরা তিলাওয়াতের তাগিদ পাওয়া যায়। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-
এক. ফজরের পরে সুরা ইয়াসিন পরা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণনা করেন আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে, তার সব প্রয়োজন পূর্ণ করা হবে।’
ইয়াহইয়া ইবনে কাসির বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। (মাজহারি)
এই সময় কুরআন তেলাওয়াত, জিকির করা অনেক ফজিলতের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে। সেই ব্যক্তির একটি হজ ও একটি উমরার সওয়াব লাভ হয়। পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ। (তিরমযি ৫৮৬)
কুরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম জিকির,আর সুরা ইয়াসিন কুরআনের রূহ। সুতরাং দিনের শুরুটা যদি সুরা ইয়াসিন দিয়ে করা হয় তাহলে তা অবশ্যই বরকতপূর্ণ হবে।
কুরআনের পরীক্ষিত কবুল হওয়া ৩টি দোয়া
এজন্য বিশিষ্ট তাবিঈ ইয়াহইয়া ইবন কাসীর (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। তিনি আরো বলেন, আমাকে এ বিষয়টি এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, যিনি এর বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। (বর্ণনাকারী ইবন যুরাইস, ফাযায়েলুল কুরআন, বর্ণনা নং ২১৮ পৃষ্ঠা ১০১)
দুই. জোহরের পরে নির্দিষ্ট কোনো সুরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে যেহেতু সুরা ফাতহ কুরআনের একটি ফজিলতময় সুরা, তাই এটি তিলাওয়াত করা যেতে পারে।
এই সুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ওমরকে (রা.) বলেছেন, আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সুরা নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সকল স্থান হতে উত্তম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পাঠ করলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ (বুখারি ৪১৭৭)
তিন. আসরের পরেও নির্দিষ্ট কোনো সুরা পাঠের কথা হাদিসে নেই। তবে সুরা নাবা’র ফজিলত সম্পর্কে একটি দুর্বল হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা নাবা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানীয় দ্বারা তৃপ্ত করবেন। (তাফসিরে কাশশাফ ৬/৩০৩)
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচাবে সুরা কাহাফ
চার. মাগরিবের পরে বা রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ সম্পর্কে আমরা হাদিস থেকে অনেক বক্তব্য পাইঃ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াক্বিয়াহ তিলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। বাইহাকি:শুআবুল ঈমান-২৪৯৮. মিশকাত পৃঃ ১৮৯
পাঁচ. এশার পরে বা রাতে সুরা মুলক পাঠ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলকু.. পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।
(আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,) আমরা রাসুলুল্লাহর সা. এর যুগে সুরাটিকে মানেআ’ বা বাধাদানকারী সুরা বলে আখ্যা দিতাম। এটি আল্লাহ তাআলার কিতাবের মাঝে এমন একটি সুরা, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে পাঠ করবে সে অধিক ও উৎকৃষ্ট আমল করবে। (নাসাঈ ১০৫৪৭)
জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. সুরা সাজদাহ ও সুরা মুলক তিলাওয়াত করা ছাড়া ঘুমাতেন না। (তিরমিযি ২৮৯২)
নামাজে অন্য চিন্তা এলে মনোযোগ ফেরাবেন যেভাবে