আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়, ফজিলত উচ্চারণ ও অর্থ
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
পবিত্র কুরআনে শ্রেষ্ঠ আয়াতগুলোর অন্যতম আয়াতুল কুরসি। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই আয়াতুল কুরসিকে কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। এটি কুরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন।
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি আবার বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম’ (আয়াতুল কুরসি)। তখন তিনি আমার বুকে (হালকা) আঘাত করে বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক। (সুনানে আবু দাউদ-১৪৬০)।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত নবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য তার মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু জান্নাত প্রবেশের পথে বাধা হবে না। (নাসাঈ কুবরা ৯৯২৮)।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের উঁচু চূড়া হলো সুরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতগুলোর প্রধান। তা হলো আয়াতুল কুরসি। (জামে আত-তিরমিজি-২৮৭৮)।
আয়াতুল কুরসি:
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।
সুরা ইখলাস, ফজিলত অর্থ ও তাফসির
বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তার। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তার কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
সুরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াতে অভাব দূর হয়
আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়?
হাদিসে আয়াতটি দিনে-রাতে বারবার পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতটিকে প্রতিদিনের অজিফা বানিয়ে নেওয়া। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরজ নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ নাসায়ি : ১০০
এ ছাড়া প্রতিদিন শোয়ার সময়ও আয়াতুল কুরসি পড়ার কথা বিভিন্ন হাদিসে এসেছে।
আবু লায়লা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবি (সা.)-এর নিকট বসে থাকা অবস্থায় এক বেদুইন তাঁর কাছে এসে বলল, আমার এক অসুস্থ ভাই আছে। তিনি বলেন, তোমার ভাই কী রোগে আক্রান্ত? সে বলল, (কোনো কিছুর) কুপ্রভাব। তিনি বলেন, তুমি যাও এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আবু লায়লা (রা.) বলেন, সে গিয়ে তার ভাইকে নিয়ে এলে তিনি তাকে নিজের সামনে বসান।
আমি শুনতে পেলাম, তিনি সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত মধ্যখানের দুই আয়াত (১৬৩-১৬৪ নং আয়াত), আয়াতুল কুরসি (২৫৫ নং আয়াত) এবং বাকারার শেষ তিন আয়াত (২৮৪-২৮৬ আয়াত) এবং আল ইমরানের একটি আয়াত, আমার মনে হয় তিনি ১৮নং আয়াত পড়েছিলেন এবং সূরা আরাফের এক আয়াত (৫৪ নং আয়াত), সূরা মুমিনুনের এক আয়াত (১১৭নং আয়াত), সূরা জিন-এর এক আয়াত (৩নং আয়াত), সুরা সাফ্ফাত-এর প্রথম দশ আয়াত, সুরা হাশরের শেষ তিন (২২, ২৩ ও ২৪) আয়াত, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে তাকে ফুঁ দিলেন। তাতে বেদুইন এমনভাবে সুস্থ হয়ে দাঁড়াল যে, তার কোনো রোগই অবশিষ্ট নেই (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৫৪৯)।
সুরা ফুরকানে সমুদ্রের বিস্ময়ের আলোচনা