ঝমঝম বৃষ্টি ঝরছে। রিমঝিম সুরে গাইছে প্রকৃতি। বৃষ্টির মন মাতানো সুর ও ছন্দে দুলে উঠছে মন। এ যেন প্রভুর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ আয়োজন।
খরতাপে শুকিয়ে যাওয়া মাটির পৃথিবীকে জাগিয়ে দিয়ে আবার বসবাসের যোগ্য করে তোলে বৃষ্টি। আসমানি ফোঁটায় প্রাণ ফিরে পায় মরা জমিন। একবার ভাবুন তো! বৃষ্টির এ ফোঁটাগুলো কি কেবলই জলকণার সমষ্টি? নাকি পৃথিবীবাসীর প্রতি রবের করুণা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাঠফাটা রোদ। একপশলা বৃষ্টির জন্য শুরু হয়েছিল হাহাকার। কিন্তু বৃষ্টি নামানোতে মানুষের করার কিছুই ছিল না। কারণ মহানেয়ামত বৃষ্টি বর্ষিত হয় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহপাকের হুকুমে। তিনি না চাইলে বৃষ্টির কোনো ক্ষমতা নেই যে নিজে নিজেই বর্ষিত হবে।
বৃষ্টি যে কত বড় নিয়ামত তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। একপশলা বৃষ্টি হলেই মানুষ, পশুপাখি ও বৃক্ষলতায় প্রশান্তি আসে। সতেজ হয় জমিন।
বৃষ্টি আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বরকত। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আমি আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। (সুরা কাফ, আয়াত : ৯)।
স্বাভাবিক সময় ও নিয়মে বৃষ্টির পানি উপভোগ, পান ও ব্যবহারে মানুষের শরীর ও মন জুড়িয়ে যায়। জমিনের উর্বরতা বেড়ে যায়। নানা উদ্ভিদ, ফল-ফলাদি ও ফসল লক লক করে বেড়ে ওঠে।
এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনিই বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে পাঠান। এবং আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি বর্ষণ করেন। মৃতকে জীবিত করা এবং জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৪৮-৪৯)।
বিশ্বনবী (সা.) বৃষ্টি উপভোগ করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদিন আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম, তখন বৃষ্টি নামল। রাসুল (সা.) তার কাপড় মেলে ধরলেন যাতে পানি জমা হতে পারে।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ বৃষ্টি তার রবের কাছ থেকে এই মাত্রই এসেছে। (সহিহ মুসলিম)।
বৃষ্টি নিয়ে কুরআন-হাদিসে যা বলা হয়েছে
বৃষ্টি হলে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) তার জিনিসপত্র ঘরের বাইরে রেখে দিতেন। যাতে করে বরকতময় পানিতে তা ধুয়ে যায়। (আল-আদাবুল মুফরাদ)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, বৃষ্টি নামতে দেখলেই রাসুল (সা.) বলতেন, হে আল্লাহ, আমাদের ওপর উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। (বুখারি)। তা ছাড়া বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।
এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না, আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ)।
আল্লাহপাক বলেন, তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে কি ভেবে দেখেছ? তোমরাই কি মেঘ থেকে তা বর্ষণ কর, নাকি আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবু কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ৬৮-৭০)।
সুতরাং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা আবশ্যক। কারণ কৃতজ্ঞতা না আদায় করলে অনেক সময় এ নেয়ামত অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিতে রূপ নিতে পারে।