Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কাবাঘরের চাবি কি দিয়ে তৈরি, কার কাছে থাকে?

Icon

বিবিসি বাংলা

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম

কাবাঘরের চাবি কি দিয়ে তৈরি, কার কাছে থাকে?

নতুন করে পবিত্র কাবাঘরের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছেন শায়েখ আবদুল ওয়াহাব বিন জাইন আল-আবিদিন আল-শাইবি।  সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পবিত্র কাবাঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। এখন থেকে তিনিই পবিত্র ঘরের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবেন।

এতদিন পবিত্র কাবাঘরের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ড. শায়খ সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শাইবি। গত শুক্রবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে মক্কায় মারা যান তিনি। পরদিন শনিবার পবিত্র মসজিদুল হারামে জানাজার পর তাকে জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়। 

কাবাঘরের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত শায়খ আবদুল ওয়াহাব আল শাইবি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিখ্যাত সাহাবি উসমান (রা.)-এর ১১০তম উত্তরসূরি।

আল-শাইবা পরিবার বংশ পরম্পরায় পবিত্র কাবা রক্ষার সম্মানিত দায়িত্ব পালন করছে। যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে তাদের সম্মানিত করেছে।

জাহেলি যুগ থেকেই কাবাঘরের চাবি শাইবা গোত্রের কাছে থাকত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেই ওই গোত্রের উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর কাছে চাবি হস্তান্তর করে তাকে সম্মানিত করেন। এসময় তিনি বলে দেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, একেবারে কেয়ামত পর্যন্ত। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালিম।’

সেই ধারা এখনো চলমান। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই বিভিন্ন সময় সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন।

কাবা শরীফে প্রবেশ করার জন্য একটি মাত্র দরজা রয়েছে, যাকে বাবে কাবা বলা হয়।

মেঝে থেকে দুই দশমিক ১৩ মিটার উচ্চতায় থাকা এই দরজা কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালের কাছে এবং হাজরে আসওয়াদ নামের কালো পাথরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত যেখান থেকে তাওয়াফ শুরু হয়।

ওমরাহের সময় মুসল্লিরা এই কালো পাথরে চুম্বন করেন এবং তারপরে কাবা প্রদক্ষিণ করেন, যাকে তাওয়াফ বলা হয়।

পবিত্র কাবার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব পেলেন যিনি

কাবার চাবির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে ইসলামি ইতিহাসবিদ আহমেদ আদন বলেন, নবীজির যখন জন্ম হয়, তখন কুরাইশ গোত্রের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। যে পরিবারে নবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই বনি হাশিম পরিবার জমজমের কূপের মালিক ছিল এবং এর চাবিও ছিল তাদের কাছেই। আর কাবার চাবি ছিল উসমান বিন তালহার কাছে।

সাক্ষাৎকারে আহমাদ আদন সেই ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে উসমান বিন তালহাকে নবী বলেছিলেন, ‘সেই দিন ঘনিয়ে আসছে যেদিন এই চাবি আমার কাছে থাকবে।’

ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মক্কা বিজয়ের পর চাবিটি কিছু সময়ের জন্য উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে আল্লাহর নির্দেশে তাকেই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, এই চাবি উসমান বিন তালহাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নবীজি নিজে।

সে সময় থেকেই উসমান বিন তালহার পরিবারে রয়েছে কাবার দরজার চাবি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই চাবিকে সুরক্ষিত রেখেছেন তারা।

সবশেষ ১৯৪২ সালের আগে কাবা শরীফের দরজা কে তৈরি করেছিলেন এবং কীভাবে তা নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে ইতিহাসে খুব একটা উল্লেখ পাওয়া যায় না।

তবে ১৯৪২ সালে ইব্রাহিম বদর একটি রূপার দরজা তৈরি করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে ইব্রাহিম বদরের ছেলে আহমেদ বিন ইব্রাহিম বদর কাবার জন্য একটি সোনার দরজা নির্মাণ করেন। ৩০০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি এই দরজা।

কাবার সাবেক পৃষ্ঠপোষক শেখ আবদুল কাদিরের শাসনকালে শাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে কাবার তালা বদলানো হয়।

শাহ আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সাল কাবা পরিষ্কার করার সময় নতুন তালা ও চাবি শেখ আবদুল কাদিরের হাতে তুলে দেন।

দীর্ঘ অসুস্থতার পর শেখ আবদুল কাদিরের মৃত্যু হয়। এরপর ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শাবি এই চাবি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন।

ইতিহাস বলছে এর আগেও অনেক শাসক বহুবার কাবার তালা ও চাবি বদলেছেন।

ঐতিহ্যগতভাবে, কাবার চাবি যে ব্যাগে রাখা হয় তার গায়ে কুরআনের আয়াতের নকশা করা আছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালা খোলা ও বন্ধ করার মধ্যেই কাবার চাবি রক্ষকের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

তবে সৌদি আরবে আসা রাজ অতিথিদের জন্য সৌদি আরবের বাদশাহের কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত সৈন্যবাহিনী চাবি ব্যবহার করে এই তালা খুলতে পারে।

এছাড়া ইসলামি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহররম মাসের প্রতি ১৫ তারিখে বাদশাহের আদেশে চাবির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি এই দরজা খুলে দেন, যাতে কাবা শরীফের ভেতরটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।

কাবার তালা ও চাবি

কাবার বর্তমান তালা ও এর চাবি ১৮ ক্যারেট সোনা ও নিকেল দিয়ে তৈরি। যদিও কাবার ভেতরের দালানের রং সবুজ।

তালা এবং চাবিতে কুরআনের আয়াতও লেখা আছে।

তুরস্কের জাদুঘরে ৪৮টি চাবি রয়েছে, যা অটোমান সাম্রাজ্যের তৎকালীন শাসকরা কাবার দরজা খোলার জন্য ব্যবহার করতেন।

সৌদি আরবে এই চাবির যে অনুলিপি রয়েছে তা খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি।

চাবির নিলাম

দ্বাদশ শতাব্দীর কাবা শরীফের একটি চাবি ২০০৮ সালে নিলামে এক কোটি ৮১ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল।

লন্ডনে ইসলামি বিশ্বের নিদর্শনগুলোর নিলামের সময় অজ্ঞাত এক ক্রেতা সেই চাবি কেনেন।

নিলামে ওঠা কাবার চাবি লোহার তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ছিল পনের ইঞ্চি। চাবিতে লেখা আছে, ‘এটি আল্লাহর ঘরের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত।’

লন্ডনে নিলামে ওঠা কাবার চাবিই একমাত্র চাবি যা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এ ছাড়া কাবার ৫৮টি চাবি বিভিন্ন জাদুঘরে রাখা আছে।

তীব্র গরমেও কাবার মাতাফ ঠাণ্ডা থাকে যে কারণে

 
Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম