Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মিনার তিনটি ‘জামরা’ কি তিন শয়তান?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১২:৩৬ পিএম

মিনার তিনটি ‘জামরা’ কি তিন শয়তান?

অনেক মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তিন ‘জামরা’  হল তিন শয়তান কিংবা প্রত্যেক জামরার সঙ্গে একটি করে শয়তান বাঁধা আছে। বরং কিছু মানুষকে এমনও বলতে শোনা যায় যে, প্রথমটি হচ্ছে বড় শয়তান। তার পরেরটা মেঝ শয়তান। তার পরেরটা ছোট শয়তান।

এ জাতীয় ধারণা পোষণ বা নামকরণ কোনটাই সহিহ নয়। আসলে ‘জামরাত’ আরবি ‘জামরাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে ছোট ছোট কংকর বা নুড়ি পাথর। যেহেতু এসব স্থানে ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করা হয় এজন্য এগুলোকে ‘জামরাত’  বলে।

এই নুড়ি বা কংকর নিক্ষেপের প্রেক্ষাপট হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। হজরত ইবরাহীম (আ.) যখন আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে হজরত ইসমাইলকে (আ.) কুরবানি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান তিনবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। আর তিনবারই ইবরাহীম (আ.) তাকে সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করে প্রতিহত করেছিলেন। অবশেষে তিনি এই মহাপরীক্ষায় কামিয়াব হয়েছেন। 

যে তিন স্থানে ইবলিস তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেই তিন স্থান নিশানার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে একটি করে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে খুঁটিটি মক্কার সীমানার একেবারেই নিকটবর্তী এবং মসজিদে খাইফ থেকে দূরে অবস্থিত সেটাকে ‘আলজামরাতুল কুবরা’ বা ‘জামরাতুল আকাবা’ বলে। 

এর পরেরটিকে ‘আলজামরাতুল উসতা’ এবং এর পরেরটিকে ‘আলজামরাতুল উলা’ বা ‘আলজামরাতুল দুনইয়া’  (নিকটতম জামরা) বলে। 

হজরত ইবরাহীম (আ.) সরাসরি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। আজ তার অনুসরণে ওই সকল স্থানে কংকর নিক্ষেপ করা হয় যেখানে যেখানে শয়তান তাকে বাধা দিয়েছিল আর তিনি কংকর মেরে ওকে প্রতিহত করেছিলেন। আমাদের কংকর নিক্ষেপের উদ্দেশ্য হল মিল্লাতে হানীফ (মিল্লাতে তাওহীদ)-এর ইমাম হজরত ইবরাহীম আ.-এর অনুকরণ এবং তার কাজের হুবহু অনুকরণ। 

এই জযবা ও অনভুতি নিয়ে যে, আশেকীন ও মুহিববীনের অনুকরণের মাঝে এমন শক্তি ও প্রভাব রয়েছে যে, যারা তাদের অনুকরণ করবে তাদের মাঝেও আল্লাহর ভালোবাসা ও মহববত সৃষ্টি হবে এবং এই প্রত্যাশা নিয়ে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রতিটি বাঁকে শয়তানের মোকাবেলা করার এবং তাতে কামিয়াব হওয়ার তাওফীক দান করুন।

কুরবানির গোশত জমিয়ে রাখা কি জায়েজ?

এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওই সকল স্থানে খুঁটির আকৃতিতে শয়তানও থাকে না বা ওই সকল খুঁটির সঙ্গে শয়তানকে বেঁধেও রাখা হয়নি। কিন্তু যদি আল্লাহ তাআলার বড়ত্বের প্রতি বিশ্বাস রেখে চিরশত্রু  শয়তানের বিরোধিতা করার সংকল্প নিয়ে জবানে আল্লাহ তাআলার তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে কংকর নিক্ষেপ করা হয় তাহলে সেটা হবে শয়তানের মুখে কালি মেখে তাকে অপদস্ত করা। 

এর দ্বারা শয়তানের কোমর ভেঙে যায় এবং সে হতাশ হয়। তবে শয়তানকে জুতা ছুঁড়ে মেরে বা তাকে গালি দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কাছে তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে ও তাকে চিরশত্রু ভেবে তার বিরোধিতা করা ও সুন্নাত অনুসারে ওই সকল স্থানে কংকর নিক্ষেপ করার দ্বারাই সে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়।

আর বিশেষ করে কংকর নিক্ষেপের কাজ যদি সুন্নত মোতাবেক করা হয় তাহলে সেটা হয় শয়তানের জন্য সবচেয়ে লাঞ্ছনা ও অপদস্ততার কারণ। এই কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে যে যত বেশি আল্লাহর বড়ত্ব ও আনুগত্যের প্রেরণা আর মহববত অন্তরে পোষণ করবে এবং যত বেশি শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জযবা ও ইচ্ছা রাখবে সেটা শয়তানের জন্য তত বেশি লাঞ্ছনা ও আক্ষেপের কারণ হবে।

মোটকথা, মিনার ‘জামারাত’ শয়তান নয় এবং শয়তান সেখানে খুঁটির আকৃতিতে উপস্থিতও নয় আর শয়তানকে সেখানে বেঁধেও রাখা হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনার্থে সেখানে কংকর নিক্ষেপ করা হয়। 

আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশের মাঝে অনেক হেকমত নিহিত রয়েছে। একটি বড় হেকমত হল আল্লাহর ধ্বনি উঁচু করা। তার যিকির জিন্দা করা ও শয়তানকে অপদস্ত করে তার বিরোধিতায় পূর্ণ উজ্জীবিত হওয়া। 

মাসিক আল কাউসার 

হজ কখন ফরজ হয়

 

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম