মদিনায় পৌঁছার পর নবীজির প্রথম ভাষণ
মুফতি জহীর ইবনে মুসলিম
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪, ১০:৪২ এএম
সিরাতে ইবনে হিশামের লেখক ইমাম আবু মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ইবনে হিশাম আল সুয়াফিরি (র.) বলেন, রাসুল কারিম (সা.) মদিনাতে পৌঁছার পর সর্বপ্রথম যে ভাষণ দিয়েছেন, তা আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমানের সূত্রে আমার কাছে পৌঁছে।
রাসুল (সা.) সমবেত জনতার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করার পর বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা সর্বপ্রথম তোমাদের বাঁচার ব্যবস্থা কর। তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আল্লাহর শপথ তোমাদের কেউ অবশ্যই বজ্রপাতে মারা যাবে। তারপর তার বকরিগুলো এমনভাবে ছেড়ে দেবে যে তার কোনো রাখাল নেই, অতঃপর তাকে আল্লাহ বলবেন, এমন অবস্থায় যে তাদের জন্য কোনো দোভাষী থাকবে না এবং থাকবে না কোনো আড়াল।
তোমার কাছে কি আমার রাসুল যায়নি? তোমাকে কি আমি ধনদৌলত দিইনি? আর তা তুমি তোমার ইচ্ছেমতো খরচ করনি? তাহলে কেন তুমি নিজের বাঁচার উপায় করনি? অতঃপর সে তার ডান বামে লক্ষ্য করে কিছুই দেখতে পাবে না। তারপর সে তার পায়ের দিকে তাকানোর পর জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না।
সুতরাং, যার সামর্থ্য আছে সে যেন তার নিজেকে এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে বাঁচায়। আর যার এ ক্ষমতাও নেই সে যেন ভালো কথার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করে, নিশ্চয় প্রত্যেক মঙ্গলময় কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে দশগুণ হতে সাতশ গুণের চেয়ে বেশি। (সিরাতে ইবনে হিশাম ১ম খ, ৫০১ পৃঃ)
রাসূলের (সা.) ভাষণ ও পত্রাবলীতে মানবপ্রেম
মানুষের প্রতি রাসুল (সা.) এর ছিল আগাধ প্রেম-ভালোবাসা। তাই আলোচ্য ভাষণে তিনি আখেরাতের অবস্থা তুলে ধরে জাহান্নামের ভয়াবহ কঠিন শাস্তির হাত থেকে বাঁচার পন্থা মানুষের সম্মুখে তুলে ধরেছেন। যে ভাষণের মাধ্যমে একজন মানুষ চিরস্থায়ী আজাবের হাত থেকে বাচার রাস্তা খুঁজে পায় তার চেয়ে মূল্যবান ভাষণ, মধুর ভাষণ, তার চেয়ে প্রেমের ভাষণ, দুনিয়াতে আর কোন ভাষণ হতে পারে?
রাসুলে খোদা (সা.) মদিনায় পৌঁছার পর আরেকটি ভাষণ প্রদান করেছিলেন। তার সংক্ষেপ দেয়া হলো- ‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যার অন্তর জগৎ আল্লাহতায়ালা সুসজ্জিত ও আলোক উদ্ভাসিত করেছেন, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে তোমরা ভালোবাস, আর সবাই তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, আল্লাহর জিকির ও কালামকে তোমরা ভুলে যেও না।
তোমাদের আল্লাহতায়ালা যা প্রদান করেছেন, তাতে হালাল হারাম রয়েছে। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিকে ভালোবাসবে। ওয়াদা ভঙ্গকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সিরাতে ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড)
তিনি যেমন তাবৎ সৃষ্টিকে ভালোবাসেন তেমনিভাবে আল্লাহর সব সৃষ্টিকে ভালোবাসার জন্য তিনি আলোচ্য ভাষণে নির্দেশ দিয়েছেন।