প্রশ্ন: আমার জানার বিষয় হলো— আবে হায়াত কী? লোকমুখে এ সম্পর্কে অনেক কাহিনি শুনে থাকি। যেমন আবে হায়াতের পানি পান করলে নাকি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে।
হজরত খিজির (আ) নাকি এই পানি পান করেছেন, তাই তিনি কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। এগুলো কি সত্য? কুরআন ও হাদিসের দলিল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি।
উত্তর: খিজির (আ) সম্পর্কে সর্বস্তরের মুসলমানদের মধ্যে নানা চটকদার ঘটনা বিস্তার লাভ করেছে। সেসবের মধ্যে অন্যতম হলো— ‘আবে হায়াত তত্ত্ব’। যে পানি পান করলে মৃত্যু হয় না, অমরত্ব লাভ করা যায়, তার নাম আবে হায়াত।
সংক্ষেপে আবে হায়াত শব্দের অর্থ জীবনবারি, অমৃতবারি।
‘মাউল হায়াত’ অথবা ‘আবে হায়াত’ বলে যে কথাগুলো প্রচলিত আছে এর কোনো অস্তিত্ব দুনিয়াতে নেই। এমন আবে হায়াত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও আকিদা ইসলামের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
কুরআনুল কারিম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিচ্ছে— (হে নবী!) আমি তোমার আগেও কোনো মানুষের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকার ফায়সালা করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? (আল আম্বিয়া- ৩৪)
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদের মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি, এবং তোমাদের সবাইকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। (আল আম্বিয়া - ৩৫)
যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা আবে হায়াত নিয়ে নানা কাহিনি রচনা করেছেন। খিজির (আ) এসব কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু। এসব কাহিনিতে দেখানো হয়েছে যে, তিনি আবে হায়াত পান করে অমরত্ব লাভ করেছেন। এর মাধ্যমে দুনিয়ায় জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন!
খিজির (আ)-এর পাশাপাশি এ প্রসঙ্গে আরও একজনের নাম উচ্চারিত হয়। তিনি হলেন বাদশাহ জুলকারনাইন। কেউ কেউ বলেন, খিজির (আ) ছিলেন জুলকারনাইনের খালাতো ভাই।
পবিত্র কুরআনে খিজির (আ) ও মুসা (আ)-এর ঘটনার পর পরই জুলকারনাইনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে কথিত এই আবে হায়াতের কথা কুরআন ও হাদিসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
আবে হায়াত সম্পর্কিত ঘটনাটি এমন— বাদশাহ জুলকারনাইনের রাজদরবারে থাকতেন খিজির (আ)। তিনি আবে হায়াত সম্পর্কে জানতেন। একদিন তিনি বাদশাহকে জানালেন যে সাগরের ওপারে একটি অন্ধকার দেশ আছে। সেখানে সারাক্ষণ অন্ধকার থাকে।
ওই জায়গার এক গুহায় আবে হায়াতের ঝরনা আছে। ওই পানি খেলে কেউ মরে না। এটা শুনে জুলকারনাইন চার হাজার যুবক সঙ্গে নিয়ে ওই পানির খোঁজে বের হয়েছেন। কাফেলার অগ্রভাগে ছিলেন খিজির (আ)। গভীর অন্ধকারে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়।
জুলকারনাইন পথ ভুলে অন্ধকারে চলে যান এবং আবে হায়াত পান করতে ব্যর্থ হন। আর খিজির (আ) সঠিকভাবে আবে হায়াত ঝরনায় পৌঁছে যান এবং তা থেকে পানি পান করেন। তাদের একজন অমরত্ব লাভ করেন, আরেকজন আবে হায়াত থেকে বঞ্চিত হন। এটাই আবে হায়াতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা। বিভিন্ন গ্রন্থে এ ঘটনা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।
এটা জানা জরুরি যে খিজির (আ)-এর জীবন, মৃত্যু ও আবে হায়াতের ঘটনার সঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাসগত ও কর্মগত কোনো বিষয় জড়িত নয়। এ জন্য কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছু বলা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তবে বিশুদ্ধতম অভিমত হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।