Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রোজায় জাগ্রত হয় মানবতাবোধ রোজায় রুহ শক্তিশালী হয়

Icon

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৪ এএম

রোজায় জাগ্রত হয় মানবতাবোধ রোজায় রুহ শক্তিশালী হয়

ফাইল ছবি

বুখারি শরিফের হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মান সামা রামাদানা ইমানাও ওয়া ইহতিসাবান গুফিরালাহু মা তাকাদ্দামা মিন জামবিহি। অর্থাৎ যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং আত্মপোলব্ধির সঙ্গে সিয়াম সাধনা করবে, আল্লাহ তার জীবনের পেছনের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)।

হাদিসে বর্ণিত ‘ইহতিসাব’ শব্দের অর্থ আত্মপোলব্ধির-বিশ্লেষণ। আমাদের শুধু রোজা রাখলেই চলবে না। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে নিজেকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। রোজার শুরুতে আমি কেমন ছিলাম? এখন কতটুকু ডেভেলপ করেছি? আগে তো আমার ভেতরে এই দোষ ছিল। রোজা এসে কি আমাকে একটু হলেও বদলাতে পেরেছে? আগে আমি ঘুস নিতাম, দুর্নীতি করতাম, মিথ্যা বলতাম, এখন কি তা কমে এসেছে? যদি আস্তে আস্তে কমে আসে, যেমন আগে যদি আপনি দিনে একশটা মিথ্যা বলতেন এখন বলেন নব্বইটা, এভাবে নিজেকে চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন ভালো মানুষ হওয়ার প্রাণপণ সাধনা করতে পারেনÑতাহলে আল্লাহপাক আপানাকে সুখবর দিচ্ছেন, বান্দা! তোমার জীবনের পেছনের সব ভুল আমি ক্ষমা করে দিলাম।

রোজা রেখে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে মানুষের কষ্ট কেমন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকাটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তো আমি-আপনি তো ১০-১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকি, যে হতভাগা বনি আদমরা জীবনজুড়েই না খেয়ে থাকে, তাদের কষ্ট কেমন? আমরা তো রোজা রেখে ইফতারে গলা ডুবিয়ে খেয়ে নিই, কিন্তু ওই গরিব মানুষগুলো, যাদের জীবনে কোনো ইফতারের জমকালো ভোজ নেই, নেই সেহেরিতে রাজকীয় আয়োজন, তাদের অবস্থা কেমন? এখানে চুপিচুপি একটি কথা আপনাদের বলে নিই এই যে ইফতারে আমাদের এত বাহারি আয়োজন আর সেহরিতে রাজকীয় ভোজএ দুটির একটাও রোজার স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। নবিজি (সা.) প্রায় সময় শুধু খেজুর, পানি আর দুধ দিয়ে ইফতার করতেন। নতুবা শুধু খেজুর খেয়েই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।

সুফিয়ানে কেরাম বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো কাম-ক্রোধের লেলিহান আগুন নেভানোর মাধ্যমে নফসকে দুর্বল করে রুহকে শক্তিশালী করা। কিন্তু কেউ যদি দিনের না খেয়ে থাকা রাতে পুষিয়ে নেয়, তাহলে এ রোজা দিয়ে কোনো দিনও নফস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও খুব সতর্ক করে বলেছেন, মানুষ যখন উপোবাস ব্রত করে, তখন তার কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ওই দিনগুলো সে রাতে অবশ্যই সীমিত খাবার খাবে। তাহলে দেহ ফিট থাকবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নতুবা তার দেহে নানা জটিলতা দেখা দেবে।

এবার একটি বাস্তব উদাহরণ দেখুন। প্রতিদিন দুপুরে আমরা ভাবি, এখন বেশ ক্লান্ত লাগছে। ইফতারের পর কাজকর্ম, পড়ালেখা, ইবাদত-বন্দেগি সব করব। কিন্তু ইফতারের পর অবস্থা এমন হয় যে, মাগরিবের নামাজ পড়তেই কষ্ট হয়ে যায়। আমরা রাসূল (সা.)-এর মতো ইফতার করি না। রোজা রেখেছি ঠিক, আত্মপোলব্ধি করি না। বিশ্লেষণ করি না। শুধু রোজা রাখলেই হবে না, মনের গভীর থেকে রোজা কী জিনিস তা বুঝে উপলব্ধি করার মাধ্যমেই আমরা রোজার প্রকৃত বরকত ও মর্যাদা অর্জন করতে পারব। যারা এভাবে রোজা রাখবেন, তাদের জন্যই রাসূল (সা.) সুখবর দিয়ে বলেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা আছে, রাইয়ান; যে দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করতে পারবে।’ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রাইয়ান দরজা দিয়ে বেহেশতে যাওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পির সাহেব, আউলিয়ানগর
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম