Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

তারাবির নামাজ কীভাবে এলো

Icon

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম

তারাবির নামাজ কীভাবে এলো

তারাবির নামাজ মাহে রমজানে রাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ মাসের রহমত-মাগফিরাত ও নাজাত লাভ এবং প্রতিদান প্রাপ্তির জন্য তারাবির প্রভাব অপরিসীম। 

এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন— ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭, আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৭১)

তারাবি নামাজের বৈশিষ্ট্য:

তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলেও গুরুত্ব অনেক। এর জন্য ফরজ নামাজের মতো জামাত বিধিবদ্ধ হয়েছে। এমনকি এর জন্য আলাদাভাবে ইমামও নিয়োগ দেওয়া হয়। সিংহ ভাগ মসজিদেই তারাবিতে পুরো কোরআন খতম করা হয় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। 

পাশাপাশি তারাবিকে রমজানের বিশেষ পরিচয় চিহ্নও বলা যায়। কারণ রমজান ছাড়া অন্য কোনো সময় এশার নামাজের পর এভাবে জামাতের সঙ্গে উঁচু আওয়াজে কিরাত পড়ে কোনো নামাজ আদায় করা হয় না। 

সুতরাং এশার নামাজের পর জামাতের সঙ্গে উঁচু আওয়াজে কিরাত পড়ে নামাজ আদায় করা এই বার্তা দেয় যে এখন রমজান মাস। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবির গুরুত্ব সাধারণ সুন্নাত বা নফলের চেয়ে অনেক বেশি।

রাসুলুল্লাহর (সা.) তারাবি

রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির জামাত নিয়মিত পড়াননি; বরং কখনো কখনো তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়িয়েছেন। আবার কখনো কয়েক রাকাত জামাতের সঙ্গে পড়ে হুজরায় চলে গেছেন এবং বাকি নামাজ একাকী পড়েছেন; বরং বেশিরভাগ সময় তারাবির নামাজ তিনি একাকীই পড়তেন। 

তিনি নিজে কেন তারাবির জামাতের নিয়ম করেননি, তার কারণও উম্মতকে বলে গেছেন। সেই কারণ হলো, তিনি নিয়মিত জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়লে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ পড়া শুরু করলেন। ইতোমধ্যে কিছু সাহাবি রাসুলুল্লাহর (সা.) পেছনে ইক্তিদা শুরু করলেন।

নামাজ, সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি

সাহাবায়ে কিরামের মাঝে এ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে পর দিন তারাবিতে আরও বেশিসংখ্যক সাহাবি তার পেছনে ইক্তিদা করলেন। তৃতীয় দিন সাহাবায়ে কিরামের সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। চতুর্থ দিন মসজিদে আর জায়গার সংকুলান হলো না। এ দিন তিনি ফজরের নামাজ আদায়ের পর সাহাবায়ে কিরামদের বললেন, শোনো, তোমাদের অবস্থা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমার ভয় হয়, এভাবে চলতে থাকলে তোমাদের ওপর তারাবির নামাজ ফরজ হয়ে যেতে পারে। তখন তোমরা তা আদায়ে অক্ষম হয়ে পড়বে।

তারাবির নামাজ এ অবস্থায় রেখেই রাসুলুল্লাহ (সা.) ইহজগৎ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে চলে যান। (বুখারি, হাদিস : ২০১২, মুসলিম, হাদিস : ১১০৪)

তারাবির জামাত

রাসুলুল্লাহর (সা.) যুগে ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে এবং ওমর (রা.)-এর শাসনামলের শুরুতে এক ইমামের পেছনে ফরজ নামাজের মতো তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার ব্যবস্থা ছিল না। পরবর্তী সময়ে রমজানের কোনো রাতে ওমর (রা.) মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখলেন মসজিদের বিভিন্ন স্থানে তারাবির খণ্ড খণ্ড জামাত হচ্ছে। কেউ আবার একাকী তারাবি আদায় করছে। 

আরও পড়ুন: সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে রোজা হবে?

এ অবস্থা দেখে তিনি চিন্তা করলেন সবাইকে এক ইমামের পেছনে একত্র করে দিলে অনেক উত্তম হবে। এর পর তিনি এক ইমামের পেছনে তারাবির জামাত পড়ার ফরমান জারি করলেন এবং সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে তারাবির জামাতের ইমাম বানিয়ে দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২০০৯, ২০১০)

কোনো সাহাবি এর বিরোধিতা করেননি। এর পর থেকে পরম্পরায় তারাবির নামাজ জামাতবদ্ধভাবেই চলে আসছে। কাজেই এ নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি বা হট্টগোল পাকানো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

লেখক: ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম