জীবনযাপনের তাগিদেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলতে হয় আমাদের। হোক তা ব্যবসায়িক স্বার্থে কিংবা অন্য কোনো সৎ উদ্দেশে। পবিত্র রমজান মাসেও থেমে থাকে না আমাদের জীবনযাপন প্রক্রিয়ার এই গতি। কখনো কখনো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে হয়।
সফরকারী, ভ্রমণকারী, পর্যটক ইত্যাদি শব্দের ইসলামি পরিভাষা হলো: মুসাফির।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সেই সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং কঠিন চান না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
এ-আয়াত প্রমাণ করে, মুসাফিরের জন্য রমজানের রোজা ভঙ্গের অনুমতি আছে। তাকে পরবর্তী সময়ে সে-পরিমাণ কাজা আদায় করতে হবে। তবে তিনি যদি রোজা রাখেন, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৩)
কোন ব্যক্তি সফরে থাকলে (মুসাফির) এবং অসুস্থ হলে, রোজা রাখলে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এমতাবস্থায় রোজা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা পরবর্তী সময় রোজা কাজা আদায় করবেন। অসুস্থ এবং মুসাফিরের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। (সূরা বাকার:১৮৫)।
ইবনে কায়্যিম বলেন : সাহাবিগণ যখন সফরের সূচনা করতেন, গৃহ-প্রাঙ্গণ অতিক্রম ব্যতীতই পানাহার করে নিতেন। তারা একে রাসূল সা.-এর সুন্নত মনে করতেন। মুহাম্মাদ ইবনে কাব বলেন : আমি রমজানে আনাস ইবনে মালেকের নিকট আগমন করলে দেখতে পেলাম তিনি সফরে যাবার মনস্থ করেছেন,তার ঘোড়া প্রস্তুত রয়েছে,পরিধান করেছেন তিনি সফরের পোশাক। তিনি খাবারের নির্দেশ দিলেন এবং খাদ্য গ্রহণ করলেন, আমি বললাম : এটাই কি সুন্নত? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সুন্নত। অত:পর তিনি সফরে বের হলেন। (যাদুল মাআদ, ২/৫৫-৫৬)
তবে অগ্রগণ্য মত হলো : এই মত ব্যক্তিগতভাবে আনাস রা.-এর। সফরের সূচনা ব্যতীত কেউ রুখসত পালন করতে পারবে না। কারণ, রাসূল সা.-এর অসংখ্য সফরের কোথাও আমরা এর দৃষ্টান্ত পাই না। এবং কোরআনে এসেছে— তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ হবে,কিংবা সফরে থাকবে,ভিন্ন সময় রোজা রেখে নিবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)
সুতরাং যে সফরের সূচনা করে নি,সে সফরকারী হতে পারে না। অধিকাংশ আলেমের মতামত : সফরের সূচনা ব্যতীত পানাহার করা যাবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০৬)
কখন মুসাফির বলে গণ্য হবে
সফরের দূরত্ব ৪৮ মাইল বা ৭২ কিলোমিটার। পূর্বেকার যুগে মানুষ পায়ে হেঁটে অথবা উটের পিঠে চড়ে স্বাভাবিক গতিতে চললে তিনদিনে ৭২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারত। তাই ৭২ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী মুসাফির হয়ে যায়।
এ ক্ষেত্রে হঠাৎ সফর করা এবং যারা সবসময় সফরে থাকে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। রুখসত সকলের ক্ষেত্রেই সমান। যেমন গাড়ী চালক সে এক দেশ থেকে অন্য দেশে সব সময় সফরে থাকে। স্বভাবিকভাবেই সে সব সময় মুসাফির থাকবে এবং তার জন্য রোজা না রাখাই উত্তম। যখন সে মুকিম হবে তখন রোজা রাখবে। মুসাফির রোজার দিনে বাড়িতে ফিরে আসলে তাকে দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকতে হবে এবং রোজা কাজা করবে।
মুসাফির হওয়ার মেয়াদ ১৫ দিনের কম। কোনো মুসাফির নিজ সফরে ১৫ দিনের বেশি একস্থানে থাকার নিয়ত করলে তাকে অন্যান্য মুকিমের মতো রোজা পালন করতে হবে এবং নামাজ পুরোই আদায় করতে হবে।
আর যদি ১৫ দিনের অথবা তার থেকে কম থাকার নিয়ত করে, অথবা কোনো কাজে বের হয়েছে কিন্তু জানে না কাজটি কবে শেষ হবে তার জন্য রোজা না রাখা ও নামাজ কসর করা জায়েয আছে, তাতে বছর পূর্ণ হোক না কেনো। কারণ তার পক্ষে সফরের বিধান এখনো বলবৎ রয়েছে । (শারহু উমদাতিল ফিকহ, ইবনে জিবরিন, সিয়াম অধ্যায়)