Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ভিন্নধর্মাবলম্বীর লাশের সম্মানে যে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিশ্বনবী (সা.)

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:১৪ পিএম

ভিন্নধর্মাবলম্বীর লাশের সম্মানে যে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিশ্বনবী (সা.)

সব ধর্মীয় মতবিরোধ সত্তেও আল্লাহ ‘রাব্বুল আলামিন’ জগতসমূহের একমাত্র প্রতিপালক হিসাবে সবাইকে সমভাবে লালনপালন করে থাকেন। আস্তিক-নাস্তিক, মুসলমান-অমুসলমান সবার শেষ ঠাঁই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্ট এ মাটিতেই হয়। 

বিশ্বাসের বিরোধ থাকা সত্ত্বে সবাইকে একই মেঘের পানি দিয়ে তিনি সিঞ্চিত করেন। আস্তিক-নাস্তিক সবাইকে তার সৃষ্ট সূর্য নিজের রোদ সমভাবে প্রদান করে। এই একই কাদামাটিতে সবাই চাষাবাদ করে সমানভাবে উপকৃত হয়। 

মহান আল্লাহর দয়া ও কৃপার এই সার্বজনীনতা মানুষকে, বিশেষ করে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে, আমরাও যেন আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়ে সবার জন্য উদারতা প্রদর্শন করি। 

বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী খাতামান্নাবেঈন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। ইসলামের ঘোরতর শত্রু ও কাফেরের লাশকেও তিনি সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তার উম্মতকেও তা করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। 

হাদিস শরীফে জানা যায় যে, একবার হজরত সাহল ইবনে হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হজরত কায়স ইবনে সাদ আনহু কাদিসিয়াতে বসা ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাজা নিয়ে যাচ্ছিল। তা দেখে তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা এ দেশীয় অমুসলিম জিম্মী ব্যক্তির জানাজা। 

তখন এই সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুগণ বললেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দিয়েও একটি জানাজা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাকে বলা হয়েছিল, এটা তো এক ইহুদির জানাজা। তিনি এরশাদ করেছিলেন, সে কি একজন মানুষ নয়?’ (বুখারি কিতাবুল জানায়েয, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনূদিত, হাদিস নম্বর ১২৩৪) 

তাই সাধারণ কোন লাশ বা কোন নিষ্পাপ শিশুর লাশ তো দূরের কথা এক ঘোরতর শত্রু  কাফের-ইহুদির লাশের প্রতিও আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান প্রদর্শন করেছেন। শুধু তা-ই নয় তার দীক্ষায় দীক্ষিত নক্ষত্রতুল্য সাহাবিরাও একই আচরণ করে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। 

এছাড়া মৃত শিশুর বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা হল তারা জান্নাতি আর প্রত্যেক নবজাতক ইসলামি ফিতরতে জন্মগ্রহণ করে। 

হাদিসে এসেছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুই স্বভাবধর্মে (ইসলামে) জন্মগ্রহণ করে।’ (তিরমিজি)

অপর একটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরতের ওপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান অথবা অগ্নি-উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে।’ (সহিহ বুখারি, কিতাবুল জানায়েয, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনূদিত, হাদিস নম্বর-১৩০২)। 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মৃত ব্যক্তির সম্মান প্রদর্শনই করেননি বরং মৃতদের গালমন্দ, লাশের অসম্মান, তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করাকে গোনাহর কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মৃতদের গালমন্দ কোরো না, তারা যা করেছে তারা তা পেয়েছে।’ (বুখারি) 

শ্রেষ্ঠনবীর উম্মত হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব শ্রেষ্ঠনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করা। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের দ্বারা এমন কোন কাজ যেন সংঘঠিত না হয় যার ফলে ইসলাম এবং মহানবীর বদনাম হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে মহানবী (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শের আলোকে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন, আমিন।
 
লেখক:
ইসলামি গবেষক ও কলামিষ্ট
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম