Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

যেসব কাজ করলে এতেকাফ ভেঙে যায়

Icon

মুফতি সাদেকুর রহমান

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম

যেসব কাজ করলে এতেকাফ ভেঙে যায়

কী করলে এতেকাফ ভাঙে আর কী করলে ভাঙে না— এ ব্যাপারে মূলনীতি হলো, দুই অবস্থায় এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ ভঙ্গ হয় না। 

এক. মানবীয় প্রয়োজন, যা পূরণ করা ছাড়া মানুষ থাকতে পারে না এবং তা মসজিদে করা যায় না। যেমন পেশাব-পায়খানা করা, পবিত্রতা হাসিল করা এবং ফরজ গোসল করা।

সুতরাং এতেকাফকারী পেশাব-পায়খানা করার জন্য অথবা পেশাব-পায়খানার পর ওজু করার জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করলে অথবা ওজু না থাকাবস্থায় শুধু ওজু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।

এমনিভাবে মসজিদের ভেতর স্বপ্নদোষের কারণে গোসল ফরজ হলে গোসলের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না, যদি মসজিদে গোসলের ব্যবস্থা না থাকে।

দুই, শরিয়া প্রয়োজন: যেমন জুমার নামাজ ও আজান।

সুতরাং পাঞ্জেগানা মসজিদে এতেকাফকারী মসজিদে জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে গেলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন— এতটুকু সময় বাকি থাকতে মসজিদ থেকে বের হবে, যার মধ্যে সে জুমার মসজিদের পৌঁছে তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাত, জুমার পূর্বে চার রাকাত সুন্নত এবং পূর্ণ খুতবা শুনতে পারে ।

নামাজ আদায়ের পর চার রাকাত মতান্তরে ছয় রাকাত সুন্নত পড়ে এতেকাফের স্থানে ফিরে আসবে।

জুমার নামাজের পর সুন্নাত আদায় করে আরও কিছু সময় যদি অবস্থান করে অথবা সেখানেই এতেকাফ পূর্ণ করে নেয়, তা হলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হবে না; বরং সহিহ হয়ে যাবে। তবে এ রূপ করা উচিত নয়। কারণ উত্তম হলো, যেখানে শুরু করেছে, সেখানেই শেষ করা।  (ফাতাওয়া শামি-৩/ ৪৩৫-৪৩৭,ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২১২)

সুতরাং নিম্নোক্ত বর্ণিত সুরতসমূহে এতেকাফ ভেঙে যাবে  

ক. পাঠদান, আলোচনা কিংবা কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলে।

খ. খতমে কুরআন শোনা কিংবা শুনানোর জন্য অন্যত্র গেলে। 

গ. মুয়াজ্জিন এতেকাফ অবস্থায় ওজুখানা পরিষ্কারের জন্য, মসজিদের বাইরে থাকা ট্যাংক পরিষ্কার বা তাতে পানি দেওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে।

ঘ. যেসব কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ সেসব কাজ শেষ করার পর কোনো কারণ ছাড়াই বিলম্ব করলে।

ঙ. অপ্রয়োজনীয় কাজে মসজিদ থেকে বের হলে, সামান্য সময়ের জন্য হোক কিংবা বেশি সময়ের জন্য হোক— ভুলে হোক বা ইচ্ছায় হোক।

চ. এতেকাফকারীর রোজা ভেঙে গেলে অথবা কোনো কারণে রোজা না রাখলে । কেননা ওয়াজিব ও সুন্নত এতেকাফ সহিহ হওয়ার জন্য রোজা রাখা শর্ত।

ছ. এতেকাফ অবস্থায় সহবাস করলে। 

ঐ. এতেকাফ অবস্থায় কামভাবের সঙ্গে স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত হলে।

আর বীর্যপাত না হলে এতেকাফ বাতিল হবে না। তবে এসবের কারণে এতেকাফ ত্রুটিযুক্ত হবে। (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া ১/৩৩-৩৪, ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২০২, ফাতাওয়া শামী ৩/৩৩৫-৩৩৮)

এতেকাফ অবস্থায় গোসল করা যাবে কি? 

রমজানের শেষ দশকে এতেকাফকারীর জন্য ফরজ গোসল ছাড়া গরম ও গায়ের দুর্গন্ধের কারণে গোসল করা জায়েজ নেই।তবে যদি অতিপ্রয়োজন হয় এবং মসজিদে পানি না পড়ার মতো সুব্যবস্থা থাকে, তা হলে মসজিদেই গোসল করবে অথবা ভেজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে। 

অবশ্য ইস্তেঞ্জা করতে গিয়ে ওজু পরিমাণ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাবান ইত্যাদি ছাড়া স্বাভাবিক গোসল করতেও কোনো অসুবিধা নেই।  (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪০ আহসানুল ফাতওয়া ৪/৫১৫)

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম