Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

এতেকাফের দিনগুলোতে কী করবেন?

Icon

মুফতি সাদেকুর রহমান

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫২ পিএম

এতেকাফের দিনগুলোতে কী করবেন?

এতেকাফের দিনগুলোর আমল

 
১. প্রত্যেক এতেকাফকারী তার কাজের জন্য নিত্যদিনের একটি রুটিন তৈরি করে নিলে আমলে সুবিধা হয়। 

যেমন ফজরের পর দৈনিক কতটুকু তিলাওয়াত করা হবে, অতঃপর অমুক অমুক ওজিফা আদায় করা হবে। উদ্দেশ্য হলো— পুরো ২৪ ঘণ্টার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ও হেফাজত করা।

২. এতেকাফের দিনগুলোতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়াও সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও অন্যান্য নফলসমূহের প্রতি যত্নশীল হওয়া। কারণ এ মাসে নফল ফরজের সমতুল্য। সুতরাং মাগরিবের সুন্নতের পর ছয় রাকাত আউয়াবিন, এশার পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা, এশার সুন্নত আদায়ের পর দু রাকাত নফল, সাহরির আগে  কিংবা পরে তাহাজ্জুদের চার থেকে বারো রাকাত, বাদ ফজর ইশরাকের চার রাকাত, সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে চাশতের নামাজ, সূর্য হেলে যাওয়ার পর ২/৪ রাকাত ও সালাতুত তাসবিহ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা যেতে পারে।

৩. এতেকাফ অবস্থায় অবসর সময়গুলোতে নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ পাঠ করবে ও কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করবে।

৪. সাধ্যের চেয়ে বেশি এবাদত করার প্রয়োজন নেই। এবাদত করে ক্লান্ত হয়ে গেলে কিছু সময় বিশ্রাম করা যেতে পারে। ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাভাব নিয়ে এবাদত করবেন না। বরং কিছু সময় বিশ্রাম ও আরাম করে উদ্যম এবং একাগ্রচিত্তে এবাদতে নিমগ্ন থাকাটাই ভালো।


৫. লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক এতেকাফকারীকে ২১ তারিখের রাত থেকে ২৯ তারিখ রাত পর্যন্ত প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলো কাজে লাগানো উচিত। যদি পুরো রাত জাগ্রত থাকা সম্ভব না হয় তা হলে অধিকাংশ সময়ই জাগ্রত থাকা উচিত। যাতে এ বরকতময় রজনীর ফজিলত ও বরকত লাভ করতে পারে।

৬. লাইলাতুল কদরের নামে ওই রাতে বিশেষ নফল নামাজ বিশেষ কিছু সুরা দিয়ে পড়া কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

৭. কতিপয় লোক অনির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এ ধরনের নামাজের অগণিত ফজিলত ও সওয়াব বর্ণনা করে, যা কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিস কিংবা বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়।

৮. প্রচলিত লাইলাতুল কদর অর্থাৎ ২৭ তারিখ রাতের পর অধিকাংশ মানুষই এবাদতের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। এটা মারাত্মক ভুল ও বড় আফসোসের বিষয়। কেননা লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা ২৯ তারিখেও আছে। এ ছাড়া রমজানের এক একটি মুহুর্ত অনেক মুল্যবান। 

হাদিস শরিফে রমজানের শেষ দিনগুলোতে এবং শেষ রাতগুলোতে অধিক ক্ষমার সুসংবাদ এসেছে। এ কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত পূর্ণ ধৈর্য ও সবরের সঙ্গে এবাদতে মগ্ন থাকা উচিত।

৯. তাকলিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া। 
১০. ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, চার কুলসহ অন্যান্য তাসবিহ-তাহলিল আদায় করা।

১১. এতেকাফকারীর জন্য জরুরি যে, এতেকাফের দিনগুলোর গুরুত্ব বুঝে সে দিনগুলোতে মসজিদে খুব এবাদত করা। বাহ্য তো যেমনি এতেকাফে বসেছে তেমনি অভ্যন্তরীণভাবেও দুনিয়াবি সব ব্যস্ততা থেকে নিজেকে অবসর করে এবাদতে নিমগ্ন হওয়া। বিশেষত মোবাইল থেকে যথাসাধ্য নিজেকে দূরে রাখা।

এতেকাফকারীর জন্য বিশেষ সতর্কবাণী: বছরজুড়ে বিশেষ করে রমজানে সব মুসলমানের জন্য হালাল খাবারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এতেকাফকারীর জন্য ও তার খাবার, ইফতার, পোশাকাদির ব্যাপারে হালালের প্রতি অধিক খেয়াল রাখা উচিত। কেননা সব এবাদতই চাই সেটা নামাজ হোক কিংবা রোজা কিংবা কুরআন তিলাওয়াত সবকিছুই কবুল হওয়া হালাল উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। আর ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো— মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, এটা লাভ হবে সব শর্ত মানার দ্বারাই।

এতেকাফকারীর খাবার-দাবারের ব্যবস্থাকারীর যদি অধিংকাংশ বা পুরো উপার্জনই হারাম হয়, তা হলে সে খাবারের ব্যবস্থা করবে না। কারণ এতে সাওয়াবের পরিবর্তে এতেকাফকারীর আমল নষ্ট করার কারণে উল্টা ব্যবস্থাকারী গুনাহগার হবে। (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া-১/৩৬,৩৭) 

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম