![ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ বান্দাকে ডাকেন](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2022/03/18/image-532009-1647559538.jpg)
শাবান মাসের বরকত অনেক। এর অন্যতম কারণ হল, এ মাসের ১৪তম তারিখ দিবাগত রাতেই হয়ে থাকে বিশ্বসৃষ্টির মুক্তি ও ভাগ্য নির্ধারণের বরকতপূর্ণ রজনি ‘শবেবরাত’ বা লাইলাতুল বরাত।
এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে এবং ইবাদতের ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনি আসে (শবেবরাত) তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো, আর দিনের বেলা রোজা রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোনো গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত (ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮)।
এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করা নির্ভরযোগ্য হাদিসে প্রমাণিত। তাই রাসূল (সা.) ও সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে আজও এ রাতে বিশেষ নফল ইবাদত বন্দেগির ধারাবাহিকতা চলে আসছে।
হজরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসূলকে (সা.) না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কী ব্যাপার আয়শা? তুমি যে তালাশে বের হলে? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার ওপর কোনো অবিচার করবেন? তোমার পাওনা রাতে অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?
হজরত আয়শা (রা.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল (সা.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ রাত আসে অর্থাৎ যখন শবেবরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরির পশমের চেয়ে বেশিসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন (সুনানে তিরমিজি : ৭৩৯)।
হাদিসে এ রাতকে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। আবার কোথাও বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা মুক্তির রজনি।
হজরত জালালুদ্দিন মহল্লি (রাহ.) এ রাতের আরও দুটি নামের কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে, ক. ‘লাইলাতুল রাহমাত’ বা করুণার রাত। খ. ‘লাইলাতুস সাফ’ বা চুক্তিনামার রাত (জালালাইল : ২/৪১০)।
কারণ, এ রজনিতে সমগ্র সৃষ্টির প্রতি পরম দয়াময়ের পক্ষ থেকে তার অপার করুণার বান বয়ে যায় এবং মানুষের জীবন-মরণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অজস্র চুক্তিনামা বা দলিলাদি স্বাক্ষরিত হয়। এ রাতকে শাফায়াতের রাতও বলা হয়। লাইলাতুল বরাত মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক বরকত নাজিল হয়। অসংখ্য নেকি দান করা হয়।
অনুগ্রহ ও দয়ার ভাণ্ডার খুলে দেয়া হয়। গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়। বিশেষ করে এ রাত গুনাহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হয়।
মানবজাতিকে সৃষ্টি করে কিভাবে চলতে হবে এবং কী কী আমল করতে হবে এবং কোন কোন কাজ দূর করতে হবে তা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। তবুও মানুষ শয়তানের ধোকায় পড়ে অনেক পাপ করে থাকে। আল্লাহ বড়ই দয়ালু। তিনি চান অপরাধ করার পর বান্দাদের একটি সুযোগ দিতে, যাতে তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে তাওবা করে। তাই তারা যদি এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। আর এ জন্য রাতটি ক্ষমা প্রার্থনার রাত। সুতরাং পাপী পারে এ রাতে ক্ষমা চেয়ে নিতে রাব্বুল আলামিনের কাছ থেকে।