‘ইসলামী শিশুসাহিত্য ধীরে ধীরে সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে’

শিহাব সাকিব
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২১, ১০:০৩ পিএম

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। বিদগ্ধ লেখক গবেষক এবং পণ্ডিত। ইসলামী শিশু সাহিত্যের অগ্রপথিকদের অন্যতম।
ইসলামী শিশুসাহিত্য নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, ভাবেন, বিশেষ চেতনা লালন করেন এবং সে স্বপ্ন, ভাবনা ও চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।
ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী মাদরাসাতুল কাউসার ঢাকায় শিক্ষকতা করেন, পাঠদান করেন শিশু কিশোরদের। তার আগ্রহ ভালো লাগা, স্বপ্ন, চিন্তা চেতনা, সবকিছু শিশু সাহিত্যকে ঘিরে।
শিশু সাহিত্য, বিশেষ করে ইসলামী শিশুসাহিত্যের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এবং গুরুত্ব, দায়িত্ব, করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলাম নন্দিত এই শিশু সাহিত্যিকের কাছে।
তিনি মন খুলে উত্তর দিয়েছেন প্রতিটি প্রশ্নের। তার সঙ্গে কথা বলেছেন- শিহাব সাকিব।
প্রশ্ন: শিশুসাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচিত বিষয় এবং এর সঙ্গে যখন ইসলামী যুক্ত হয় তখন এর মানে কী দাঁড়ায়? এই ইসলামী শিশুসাহিত্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজন কতটুকু?
উত্তর: সাহিত্য মানুষের এক সহজাত প্রকাশ বাহন। স্বাভাবিক অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম। দেশ-কাল-সমাজ চেতনার চিত্র এই সাহিত্যে ঝরঝর করে ঝরে।
শিশুসাহিত্য বা ইসলামী শিশুসাহিত্যও এর বাইরে নয়। এখনকার প্রচলিত শিশুসাহিত্য এবং ইসলামী শিশুসাহিত্য মৌলিক সত্তায় বিভাজিত। একটির সঙ্গে আরেকটির চেতনা ও বিশ্বাসগত অনেক অমিল রয়েছে।
সাধারণ শিশুসাহিত্য গড়ে উঠেছে শুধুই আনন্দ বিনোদনকে ঘিরে। বেশির ভাগই সাধারণ কিছু মানবীয় গুণকে সামনে রেখে। এখানে লাভের চেয়ে ক্ষতির মাত্রা বেশি। উপকারী পরিবেশনার চেয়ে অপকারী পরিবেশনার দাপট বেশি।
সুকুমারবৃত্তির চেয়ে অসুকুমার প্রবণতার দাপট বেশি। তাই শিশু নেতিবাচকভাবে বেশি প্রভাবিত হয়। তার সহজাত বিশ্বাস ও চেতনাবোধ এ সাহিত্য পাঠ করে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্ত দুঃখজনক হলো সাধারণ শিশুসাহিত্যের সয়লাব বেশি। সে তুলনায় ইসলামী শিশুসাহিত্যের উপস্থিতি খুবই কম।
প্রশ্ন: প্রাচীনকালে শিশুসাহিত্য, বিশেষ করে ইসলামী শিশু সাহিত্যের ওপর কী বিশেষ কোনো কাজ হয়েছে?
উত্তর: সন তারিখ উল্লেখ না করে সংক্ষেপে বলা যায়- আগের চেয়ে শিশুসাহিত্য ভাণ্ডার এখন অনেক সমৃদ্ধ। পরিমাণে বেশি। তবে শিশুসাহিত্যের জন্ম শিশুর জন্মের মতোই প্রচীন।
পিতার কোলে, মায়ের কোলে শিশু উঠলেই মা-বাবা এই কোলের চোখ-জুড়ানো শিশুকে নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথায় মেতে ওঠেন।
শিশুর হাসির সাথে কথা বলেন। শিশুর ফোঁকলা মুখের সাথে কথা বলেন ছন্দের ভাষায়। গধ্যের ভাষায়। ছোটো ছোটো ছড়া কেটে কেটে। এটিই তো শিশুসাহিত্য। এমন সবকিছুই শিশুসাহিত্য বয়সের ধাপ ও চিন্তার বিন্যাসকে কেন্দ্র করে যা গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন: সেগুলোকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
উত্তর: আসলে আমার মতে যেকোন প্রাচীনই বরণীয় গ্রহণীয়, যদি তা হয় শিশুর মানবিক সত্তার বিকাশে ইতিবাচক। পাশাপাশি বলতে চাই শিশুসাহিত্য যত আধুনিক কালেরই রচনা ও সৃষ্টি হোক যদি তাতে থাকে শিশুর সহজাত ও স্বাভাবিক মন-মানসকে বিকৃত করে দেয়ার সূক্ষ্ম জীবাণু। তাহলে তা বর্জনীয়। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয়ার উপযুক্ত।
প্রশ্ন: লেখালেখিতে আপনি কার কার মাধ্যমে বেশি উৎসাহিত হয়েছেন?
উত্তর: যাদের মাধ্যমে আমি শিশুসাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছি তাদের সবার আগে নাম চলে আসবে প্রিয় মনীষী আবুল হাসান নদভীর। তার রচিত কাসাসুন নাবিয়্যিন বা নবী কাহিনী আমার ভেতরে শিশুসাহিত্যের সবুজাভ বীজ রোপণ করে দিয়েছিল।
পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ প্রিয় আদীব হুজুর হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহর আরবী শিশুসাহিত্য সিরিজ এবং বাংলা চাঁদ দুই টুকরো হলো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে।
তাছাড়া পারিবারিক পরিবেশ এবং প্রতিবেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সবার প্রতি আমি সীমাহীন কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: শিশুসাহিত্যের ওপর আপনার রচিত বইসংখ্যা কত? সামনে আর কী কী লিখছেন?
উত্তর: ১. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; ২. জীবন গড়ার গল্প (১-৩); ৩. গল্পে আঁকা ইতিহাস (১-৭); ৪. গল্পে আঁকা সীরাত; ৫. ফিলিস্তিনের পাথর শিশু (১-০); ৬. কারবালার শেষ বীর (১-১০); ৭. একটুখানি সোনালি অতীত; ৮. দাদু একটা গল্প বলো; (১-৫); ৯. প্রিয় জিনিস প্রিয় দান; ১০. রমজান আমার ভালোবাসা; ১১. আশারায়ে মুবাশশারাহ (ওহীর সংবাদ: ওরা জান্নাতী) (১-১০)।
এছাড়া সামনে আরও কিছু বই সিরিজ নিয়ে কাজ করছি। যেমন- ১. আমিও হতে চাই এমন গুণী (১-১০); ২. গল্পে আঁকা হাদিস (১-১৫); ৩. ছোটদের নবী কাহিনী (১-); ৪. প্রিয় তালিবে ইলম; ৫. আমার আন্দালুস আমার ইতিহাস; ৬. উসমানি সালতানাতের গল্পগাথা।
ছোটদের বাইরে বড়দের জন্যে বিশেষ করে কিশোর ছাত্রদের জন্যে বের হচ্ছে- ১. নদওয়ার স্মৃতিকথা ও ২. নবীর দেশে হাজীর বেশে।
প্রশ্ন: আপনার লেখালেখির শুরুর কথা জানতে চাই! কোন বই দিয়ে শুরু?
উত্তর: লেখালেখির সূচনা হয়েছে অনেক আগে। ছোট ছোট লেখা দিয়েই শুরু। প্রথমে দেয়ালিকায়। তারপর মাসিক পত্রিকায়। কিছু লেখা ছাপা হয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক ও আযাদে। দৈনিক নবঅভিযানেও সম্ভবত একটি লেখা ছাপা হয়েছিল।
কিন্তু প্রথম বইয়ের সূচনাটা হয়ে ছিলো প্রিয় আদীব হুজুরের তত্ত্বাবধানে। তার নির্দেশে। কিছুটা নিজের আগ্রহে।
‘নবুওত উদ্যানের একগুচ্ছ ফুল’ নামে তখন একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলাম। প্রথম শুধু চার খলিফার জীবনীকে ছোট ছোট বাক্যেবন্দি করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে এর সঙ্গে আরও অনেক সাহাবীর জীবনী যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। এভাবে ৬০ জন সাহাবীকে জমা করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
মনে পড়ে নিউজপ্রিন্ট কাগজে সব লিখে অজানা এক পুলকে ভাসতে ভাসতে সম্মানিত উস্তাদ মাওলানা ইসমাঈল বরিশালী হুজুরের কাছে নিয়ে হাজির হয়েছিলাম সম্পাদনার আবেদন নিয়ে।
তিনি ফিরিয়ে দেননি। খুব যত্ন করে পুরো পাণ্ডুলিপিটি দেখে দিয়েছিলেন। দক্ষ ও নিপুণভাবে প্রয়োজনীয় সম্পাদনার পরশ বুলিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি কাফিয়া বা শরহেজামির ক্ষুদে ছাত্র।
আফসোস সেই পাণ্ডুলিপিটি হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক কেঁদেছিলাম, ফেলেছিলাম নির্জন প্রহরে নীবর অশ্রু। আজও হারিয়ে যাওয়া সেই পাণ্ডুলিপিটি আমার মনের আকাশকে মুহূর্তের সাঁঝকালো করে দেয়। বর্ষণমুখর করে তোলে।
ছাপার অক্ষরে প্রথম এসেছিলো বাংলাদেশ ছেড়ে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় যাওয়ার পর। ১৯৯২ সালের দিকে।
প্রশ্ন: প্রথম বই প্রকাশের গল্পটা একটু শুনি?
উত্তর: নদওয়ায় ভর্তি হওয়ার পর লাইব্রেরিতে প্রায়ই যাওয়া হতো। একদিন হলুদরঙা কভারের একটি আরবি বইয়ের ওপর চোখ গেঁথে গেলো। কাছে গিয়ে দেখি (কিসসাতু হায়াতি উমর) হযরত উমরের (রা.) জীবন কথা গল্প। লেখক আলী তানতাভী।
লাইব্রেরিতে বসেই বইটি পড়া শুরু করলাম। ভেতরে ঢুকলাম। মজা পেতে লাগলাম। বিস্ময় বিমুগ্ধ হতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরি থেকে আনু্ষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কামরায় এনে বার কয়েক পড়লাম। আর নিয়ত করে ফেললাম অনুবাদের।
তখন কোরবানির ছুটি। এই ছুটিতে আমরা বাংলাদেশিরা ছাড়া সবাই যে যার বাড়িতে চলে গেছেন। নির্জন নদওয়ায় বসে কাঁচা কাঁচা অক্ষরে অনুবাদ করে ফেললাম। খুব অল্প সময়ে। তারপর রেখে দিলাম বালিশের নিচে। বের করে কাটাকুটি করলাম লাল কালি দিয়ে। তারপর আবার নতুন করে সম্পাদনা করলাম।
এভাবে দুই বছর পর্যন্ত তা খুব যতনে বহন করলাম। বাংলাদেশে ফিরে এসে প্রকাশের চিন্তা করলাম। উস্তায ইসমাঈল বরিশালী হুজুর এ পাণ্ডুলিপিটিও সম্পাদনা করে দিলেন। প্রিয় মনীষা হযরত পাহাড়পুরী হুজুরও (রহ.) ব্যাপক উৎসাহ দিলেন বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে।
শেষপর্যন্ত অনেক দৌড়ঝাঁপের পর মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে আলোর দিগন্তে হযরত উমর (রা.) নামে বইটি প্রকাশ পেয়েছিল।
প্রশ্ন: বড়দের জন্যে কী কী লিখেছেন?
উত্তর: ১. তোমার স্মরণে হে রাসূল; ২. এমন ছিলেন তিনি; ৩.তুমি সেইরাজা তুমি সেই রাণী; ৪. গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা ইত্যাদি।
ভবিষ্যতে উম্মাহাতুল মুমিনীন সিরিজ লেখার ইচ্ছা আছে। যেখানে নবীজীর ঘরোয়া জীবনের সবকিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। সিরিজটি ইতোমধ্যে সূচনা করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রশ্ন: আবার শিশুসাহিত্যের কথায় ফিরে আসি। ইসলামী শিশুসাহিত্য কি আমাদের দেশে সমৃদ্ধ? ইসলামী শিশুসাহিত্যের ভবিষ্যৎ কী?
উত্তর: এখনও সমৃদ্ধ না। তবে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে। আগে ছিল টিমটিমে আলো। ক্ষীণধারায় ঝলকিত। একটু আলোয় উদ্ভাসিত, অনেক অন্ধকারে নিমজ্জিত। কিন্তু আগের অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।
সেই টিমটিমে ক্ষীণ আলো এখন জ্বলজ্বলে প্রদীপ হওয়ার পথে। বেশ আশা জাগানিয়া। আশা করি পূর্ণ ভিবায় খুব নিকট ভবিষ্যতে জ্বলবে, আলো ছড়াবে।
সুতরাং ভবিষ্যত ভালো। তবে সেই কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতকে ছুঁতে হলে আরও অনেক পরিকল্পনা ও সাধনা লাগবে। এ পরিকল্পনা যত দৃঢ়-শেকড় হবে এবং গভীর সাধনা-ঘেরা হবে, কাঙ্ক্ষিত ফলাফলটাও ঠিক সেভাবে আমাদের ভাণ্ডারে জমা হবে।
প্রশ্ন: ইসলামী শিশুসাহিত্যের সঙ্গে আরব বিশ্বের একটি সম্পর্ক অবশ্যই থাকার থাকা, সেখানকার অবস্থা কী?
উত্তর: ইসলামী শিশুসাহিত্যে আমাদের দেশে বর্তমানের যে দৈন্য ও এতিমের সময় পার করছে, আরব বিশ্বের অবস্থা মোটেই তেমন নয়। সেখানে ইসলামী শিশুসাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ, শক্তিশালী, চেতনাদীপ্ত,প্রতিযোগিতায় অগ্রগামী এবং পদকপ্রাপ্ত।
তাই বলি কী, আমাদের দেশে ইসলামী শিশুসাহিত্যকে সামনে নিয়ে যেতে হলে আরব বিশ্বের কৌশল পরিকল্পনা ও সাধনা গ্রহণ করতে হবে।
এই যে আবদুত তাওয়াব ইউসুফ, তিনি প্রায় ৬০০ বই লিখেছেন। এর ভেতরে ৩৫ থেকে ৩৮টি বই বাদ দিলে বাকি সবই শিশুসাহিত্যের ওপরে রচিত। এমন কলম এবং এমন উর্বরতা কি আমাদের দেশে আছে? কল্পনাও করা যায়?
প্রশ্ন: ৫০ বছর পর ইসলামী শিশুসাহিত্যকে আপনি কেমন দেখতে চান?
উত্তর: অনেক উচ্চতায় দেখতে চাই। সমহিমায়। সগৌরবে। অন্তত বর্তমানে আবদুত তাওয়াব ইউসুফেরা আরবী ইসলামী শিশুসাহিত্যকে যে অবস্থান ও স্তরে নিয়ে গেছেন, সেই অবস্থান ও স্তরে দেখতে চাই!
প্রশ্ন: মাওলানা আবু তাহের মিসবাহর ‘আল্লাহ’ বইটিকে কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আল্লাহ শিশুসাহিত্যের একটি মহাসম্পদ। এখানে শিশুকিশোরদের আল্লাহর সাথে শুধু পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি।বরং আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব ছড়িয়ে দেয়ার কোমল সুন্দর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই শিশুরা এ বই পড়তে বসে ক্লান্ত হয় না। সাঁতার কাটতে কাটতে তীরে ভিড়ে যায়। আর নিজেদের অজান্তেই আল্লাহকে ভালোবেসে ফেলে।
প্রশ্ন: ইসলামী শিশুসাহিত্যের পাঠকসংখ্যা কি বৃদ্ধি পাচ্ছে? এই সংখ্যা কি যথেষ্ট?
উত্তর: দেখুন আপনার প্রশ্নে প্রথম অংশটি খুব সহজ। হ্যাঁ, বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় অংশটি মূল বিষয়। শুধু বৃদ্ধি পেলেই তো চলবে না। দেখতে হবে কোন মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে? কোন সে প্রবাহে বৃদ্ধি পাচ্ছে? কোন মোহনায় গিয়ে মিলিত হচ্ছে? সংখ্যাটা কি তুলনা করার পর সন্তোষজনক? নাকি একদিকে ১০ পার্সেন্ট আরেকদিকে ৯০ পার্সেন্ট? তাহলে হতাশা আর হতাশা!
কেননা এই বিভাজনে খুশি হওয়ার মতো কিছুই নেই। কারণ ইসলামী শিশুসাহিত্য মনের আলো। সাধারণ শিশুসাহিত্য (যা ইসলামী চেতনা বহির্ভূত এমনকি ইসলামী চেতনাবিনাশী, বিধ্বংসী) অন্ধকার!
অন্ধকার কেন দখল করে থাকবে শিশুদের ৯০ পার্সেন্ট মন? ইসলামী শিশুসাহিত্য কেন সন্তুষ্ট থাকবে ১০ ভাগ নিয়ে? … এ হতে পারে না। কিছুতেই না। বরং হতে হবে উল্টোটা। ইসলামী শিশুসাহিত্য বিরাজমান থাকবে শিশুরাজ্যে স্বআধিপত্যে! সদাপটে! সমহিমায়! সাধারণ শিশুসাহিত্য থেকে অন্ধকারকে চিরতরে ১৬ আনা বিতাড়িত করা পর্যন্ত।
প্রশ্ন: শিশুসাহিত্যের কোন কোন দিক নিয়ে কাজ করা দরকার বলে মনে করেন?
উত্তর: শিশুসাহিত্যের সব দিক নিয়েই কাজ করা দরকার। শিশু সিলেবাসকে যেমন ঢেলে সাজাতে হবে তেমনি সাধারণ শিশুপাঠ্য (গল্প কবিতা ছড়া বড় গল্প) সব ঢেলে সাজানো দরকার।
অনুরূপভাবে শিশুদের জন্যে সৃষ্টি করতে হবে শিশুতোষ পত্র-পত্রিকা। আকর্ষণীয় ম্যাগাজিন, সাময়িকী, কোরআনের কাছে, হাদিসের কাছে, আমাদের ইতিহাসের কাছে তাদের নিয়ে আসার জন্য শিশুতোষ তাফসির, শিশুতোষ হাদিস এবং শিশুতোষ ইতিহাস গ্রন্থ রচনার দরকার মনে করি।
প্রশ্ন: ইসলামী শিশু সাহিত্যের অপূর্ণতাগুলো কী কী?
উত্তর: গুনে গুনে শেষ করা যাবে না। ইসলামী শিশুসাহিত্যে পূর্ণতায় পৌঁছার যতোগুলো ধাপ ও সিঁড়ি আছে সেসব পার না হওয়া পর্যন্ত এবং অতিক্রম না-করা পর্যন্ত অপূর্ণতা দূর হবে না।
আদর্শ শিশুলেখক জন্ম নিতে হবে অনেক। আদর্শ শিশু প্রকাশক প্রকাশনী থাকতে হবে অনেক। সত্যিকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হবে। শিশুতোষ বিষয় চিত্র শিশুতোষ উপস্থাপনায় চিত্তাকর্ষকভাবে শিশুসাহিত্যকে তুলে ধরতে হবে।
শিশু মন-মানসে আহত করে,ক্ষতি করে, জীবাণুযুক্ত করে- এমন সব তৎপরতা, চক্রান্ত ও অপসাহিত্য থেকে শিশুসাহিত্যকে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে। এসব না করা পর্যন্ত এক্ষেত্রে অপূর্ণতা দূর হবে না।
প্রশ্ন: যারা লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চায় অগ্রসর হতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
উত্তর: দক্ষ পাঠক হতে হবে। গভীর পাঠক হতে হবে। পাঠশিল্পে মহীরুহ হয়ে উঠতে হবে। উপযুক্ত পাঠ-বই নির্বাচনে উপযুক্ত ব্যক্তির পরামর্শ নিতে হবে। স্বাধীনতা ও বিস্তৃতির নামের অপাত্র থেকে পাঠগ্রহণ করা যাবে না, সীমিত পরিসর ছাড়া। আর ওদের চিন্তা তো নেয়াই যাবে না।
মূল বিষয় হলো- সাহিত্যের কিংবা শিশুসাহিত্যের মহান সুচারুশিল্প দেখা বাহনকে সিঁড়ি বানিয়ে ইসলামের মহিমাময় চিরন্তর উদ্যানে প্রবেশ করা। ইসলামের অবিনাশী চেতনায় দীপ্ত হয়ে ওঠা।